সপ্তম দোল শান্তিপুরে। সোমবার। নিজস্ব চিত্র
দক্ষিণেশ্বর, বেলুড়মঠ আগেই জনসমাগম নিয়ন্ত্রণ করেছিল। করোনাভাইরাস সংক্রমণজনিত পরিস্থিতিতে সতর্কতা মূলক ব্যবস্থা হিসাবে নবদ্বীপের ধামেশ্বর মহাপ্রভু মন্দিরে বন্ধ করে দেওয়া হল ঐতিহ্যবাহী দশম দোল পরিক্রমা। আগামী বৃহস্পতিবার দশম দোল পালিত হওয়ার কথা ছিল।
ধামেশ্বর গৌরাঙ্গ মহাপ্রভু মন্দির পরিচালন কর্তৃপক্ষ শ্রীশ্রীবিষ্ণুপ্রিয়া সমিতি সোমবার এক জরুরি সভায় দশম দোলের পরিক্রমা-সহ যাবতীয় আয়োজন বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
সমিতির সম্পাদক জয়ন্ত গোস্বামী জানান, “করোনাভাইরাসের কারণে এখন সারা বিশ্ব আতঙ্কিত। ওই ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য সরকার কোনও রকমের জমায়েত করতে নিষেধ করছে। মহাপ্রভুর দশম দোলের নগর পরিক্রমায় হাজারো ভক্ত জড়ো হন। আবির খেলা হয়। কিন্ত আমাদের মনে হয়েছে এবারের পরিস্থিতিতে এই অনুষ্ঠান করা সমীচীন নয়। তাই সর্বসম্মত সিদ্ধান্তক্রমে আমরা এবারের উৎসব বন্ধ রাখছি সকলের নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে।”
এই সিদ্ধান্তের কথা রঙিন পোস্টার ছাপিয়ে বিজ্ঞপ্তি আকারে সেঁটে দেওয়ায় হয় মন্দির চত্বরে। ছড়িয়ে দেওয়া হয় সোশ্যাল মিডিয়াতেও।
মহাপ্রভু মন্দিরের দশম দোল বহু প্রাচীন এক উৎসব। এ বিষয়ে সেবায়েত প্রদীপ গোস্বামী বলেন, “গৌরাঙ্গ দেব এই দশমী তিথিতেই বিষ্ণুপ্রিয়া দেবী এবং তাঁর দুই প্রিয় সখী কাঞ্চনা ও অনিতার সঙ্গে রং খেলেছিলেন। সেই বিশেষ তিথিকে স্মরণে রেখে আমাদের পূর্বসূরী রামকণ্ঠ গোস্বামী, পাঁচুগোপাল গোস্বামী বা ফণিভূষণ গোস্বামীরা দশম দোলের প্রচলন করেন।”
সেবায়েত গোস্বামী বংশের উত্তরসূরী সুদিন গোস্বামী বলেন, “তিনশো বছর ছুঁই ছুঁই দশম দোলের বয়স। এই দিনের বৈশিষ্ট্য হল মহাপ্রভুকে বিষ্ণুপ্রিয়া দেবী-সহ দোলনায় দোলান হয়। অন্যত্র দোলের দিন রাধাকৃষ্ণকে দোলায় বসানো হয়।”
প্রদীপ গোস্বামী বলেন, “মূলত কীর্তন সহকারে নগর পরিক্রমা এই উৎসবের প্রধান আকর্ষণ। বর্ণাঢ্য ওই পরিক্রমার জন্য বাজনা, আলো, মাইক, বৃন্দাবনী নৃত্যের দল সবই বায়না করা হয়ে গিয়েছিল। কিন্ত সব বাতিল করা হয়েছে। পরিক্রমা সেরে ফিরে আসার পর সকলকে পেট ভরে প্রসাদ খাওয়ানো হয়। এবারে হাজার লোকের আয়োজন ছিল। কিন্তু সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসাবে সে সব বন্ধ।”
সম্পাদক জয়ন্ত গোস্বামী বলেন, “নিয়মরক্ষা করার জন্য এ দিন মহাপ্রভুকে গর্ভগৃহেই দোলনায় বসানো হবে। সারা দিন কীর্তন হবে।
এর বেশি কিছু নয়।”
একই সঙ্গে দশম দোলের উৎসব বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন নবদ্বীপের গোরাচাঁদ আখড়া কর্তৃপক্ষ। বহু প্রাচীন ওই মন্দিরের তরফে সেবায়েত বাসুদেব চৌধুরী বলেন, “দশম দোলে সারা দিন শ’য়ে শ’য়ে মানুষের আনাগোনা হয়। দুপুরে বহু মানুষের জন্য প্রসাদের আয়োজন করা হয়। কিন্তু এই মুহূর্তে করোনা ঠেকাতে সবার আগে জনসমাগম এড়ানো দরকার। তাই যাবতীয় অনুষ্ঠান বাতিল করা হয়েছে এবারের মতো।”
নোভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণ থেকে বাঁচতে সতর্কতামূলক পদক্ষেপ হিসাবে নবদ্বীপের বিভিন্ন মঠমন্দির দশম দোলের উৎসব বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিলেও সোমবার শান্তিপুরে পালিত হয়েছে অদ্বৈত আচার্যের সপ্তম দোল। এ দিন বড় গোস্বামী বাড়ি, বাবলার শ্রীপাট প্রভৃতি স্থানে প্রথা মেনে সপ্তম দোলে অদ্বৈতচার্যকে দোলনায় বসিয়ে কীর্তন, মেলা, প্রসাদ বিতরণ সবই হয়েছে। অদ্বৈতধাম শান্তিপুরে মূল দোলের দিন রাধাকৃষ্ণকে দোলনায় বসানো হয়। এর পর পঞ্চম দোলে উৎসব হয় অদ্বৈত আচার্যের সেবিত বিগ্রহ মদনমোহনকে ঘিরে। সে দিন তিনি দোলনায় বসেন। এর পর সপ্তম দোলের যাবতীয় উৎসব হয় স্বয়ং অদ্বৈত আচার্যকে কেন্দ্র করে।
এ বিষয়ে বড় গোস্বামী বাড়ির তরফে অদ্বৈত আচার্যের উত্তরসূরী সত্যনারায়ণ গোস্বামী বলেন, “এ দিন সীতাদেবী এবং অদ্বৈত আচার্যকে দোলনায় বসিয়ে বিশেষ কীর্তন এবং ভোগরাগ হয়েছে। ভক্তরা প্রসাদও পেয়েছেন। তবে অন্য বারের তুলনায় এবার কম মানুষ এসেছেন।”
করোনাভাইরাস প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “করোনার জন্য উৎসব বন্ধ করার কথা আমরা ভাবিনি। ভক্তরা এসেছেন, উৎসব নিজস্ব ছন্দে হয়েছে।”
অন্য দিকে, সোমবার বাবলার শ্রীপাটে সপ্তম দোল উপলক্ষে মেলা বসেছিল। তাতেও ভিড় তুলনামূলক ভাবে কম ছিল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy