সস্তা হয়েছে মুরগির দাম। কিনতে পড়ল লাইন। কৃষ্ণনগরে। নিজস্ব চিত্র
কমতে-কমতে কোথাও ৮০, কোথাও বা ৬০! নোভেল করোনাভাইরাস আতঙ্কে ব্রয়লার মুরগির দাম ক্রমাগত পড়ছে জেলা জুড়ে। তবে এক দল নাগরিক যখন ভয়ে মুরগি-ডিম ত্যাগ করেছেন তেমনই অন্য এক দল মহাখুশি। তাঁরা কায়মনোবাক্যে প্রার্থনা করছেন, এই রকম আতঙ্ক যেন আরও কিছু দিন থাকে। তাতে জমিয়ে কম দামে মুরগির মাংস খাওয়া যাবে। তাঁরা মুরগির মাংসের দোকানের সামনে ভিড় করে লাইন দিচ্ছেন।
মাঝখান থেকে সর্বনাশ হচ্ছে মুরগি ব্যবসায়ীদের। গত বছর দোলের সময়েও কৃষ্ণনগরে মুরগির মাংসের কেজি ছিল ১৮০ টাকা। এ বারে অবস্থা এম দাঁড়িয়েছে যে কৃষ্ণনগরের এক মাংস বিক্রেতা পলাশ সাধুখাঁ বললেন, "দোলের দিন ৫০ টাকা কেজি দরে মাংস বেচে দেব ভাবছি। তাতে অন্তত যাঁরা সস্তায় খেতে পাচ্ছেন বলে খুশি সেই অংশের মানুষ এসে কিনবেন। তা না হলে কিছুই বিক্রি হবে না।’’
শনিবার দুপুরে যেমন কৃষ্ণনগরের আমিন বাজারের এক মাংসের দোকানে দেখা গেল, অনেকে লাইন দিয়ে ব্রয়লার মুরগির মাংস কিনছেন। ৬০ টাকা কেজি দরে মাংস বিক্রি হচ্ছে। বিক্রেতা জানালেন, ‘‘প্রচুর স্টক জমে গিয়েছে বলে সস্তায় বেচে দিচ্ছি।’’ রাস্তা দিয়ে ভাড়ার গাড়ি নিয়ে যাচ্ছিলেন সন্ধ্যা মাঠপাড়ার বিজন কর্মকার। ৬০ টাকা মাংসের কেজি দেখে কিনে নিলেন আড়াই কেজি। একগাল হেসে বললেন, ‘‘সরকার তো বলেই দিয়েছে, ভাল করে রান্না করা মাংসে কোনও ভয় নেই। তাও খামোখা লোকে ভয় পাচ্ছে বলে এত সস্তায় পাচ্ছি। বেঁচে থাকুক এমন ভয়। আরে মশাই, সস্তায় পেলে বিষও হজম করে নিতে পারি!’’ শহরের কোথাও এ দিন ৮০ টাকা, কোথাও ৯০ টাকা কেজি দরে মুরগির মাংস বিক্রি হয়েছে।
শনিবার কালীগঞ্জের বাজারে কাটা মুরগি বিক্রি হয়েছে ৮০ থেকে ৯০ টাকা কেজি দরে। একই রকম দাম ছিল কল্যাণী, রানাঘাট, তেহট্ট বা করিমপুরেও। বেশির ভাগ বিক্রেতারা জানালেন, যতই সচেতনতা প্রচার শুরু হোক, করোনাভাইরাসের ভয়ে মাংস কেনার লোক নেই। তাই যেমন দাম পাচ্ছেন বেচে দিতে হচ্ছে। কালীগঞ্জের এক গৃহবধূর কথায়, ‘‘বিনে পয়সায় দিলেও আমি কিছুতেই এখন ব্রয়লার মুরগি খাব না।" কালীগঞ্জের এক মাংস বিক্রেতা নাড়ু প্রামানিকের কথায়, ‘‘দোলের দিন দু’টো বিয়ের অনুষ্ঠানের ৩ কুইন্টাল মুরগির মাংসের অর্ডার ছিল। কিন্তু শেষ মুহূর্তে অর্ডার বাতিল করে দিয়েছে বিয়েবাড়ির লোক। বলছে, সবাই খেতে ভয় পাচ্ছে। তাই মটন খাওয়ানো হবে।"
মাংসের পাশাপাশি পোল্ট্রির ডিম খেতেও ভয় পাচ্ছেন অনেকে। তবে তার দাম অতটা কমেনি। গত কয়েক দিনে ৫০ পয়সা দাম কমেছে পোল্ট্রির ডিমের। কৃষ্ণনগর পাত্রবাজারের এক ডিম বিক্রেতার কথায়, ‘‘আগে যেখানে দিনে গড়ে ৭০টার মতো খুচরো ডিম বিক্রি হত সেখানে বিক্রি হচ্ছে ৫০টা।’’ হোটেল বা রেস্তোরাঁয় মুরগির মাংসের পদের চাহিদা কমেছে। কৃষ্ণনগরের এক রেস্তোরাঁর মালিক সঞ্জয় চাকির কথায়, "দুপুরে যাঁরা ভাতের সাথে মুরগির মাংস নিতেন তাঁরা এখন বিভিন্ন মাছের পদ পছন্দ করছেন। অনেকে আবার মিক্সড চাউমিন বা ফ্রাইডরাইসে চিকেন দিতে বারণ করে দিচ্ছেন। অনেকে খাসির মাংস বা পনির নিচ্ছেন।" কাবাবের দোকানগুলিতে কিছুদিন আগেও লম্বা লোহার শিকে নানা রঙের চিকেন কাবাব ঝুলত। এখন সে জায়গায় রয়েছে পনির আর মটন কাবাব। চিকেন বিরিয়ানির জায়গা নিচ্ছে মটন বিরিয়ানি। সমস্যায় পড়েছেন মোমো ব্যবসায়ীরাও। কৃষ্ণনগর কোর্ট মোড়ের এক মোমো ব্যবসায়ী শংকর দাসের কথায়, ‘‘ব্যবসা একদম তলানিতে, দিনে যেখানে ২০০ প্লেট চিকেন মোমো বিক্রি করতাম, এখন ৫০ প্লেটও বিক্রি হচ্ছে না।" বাধ্য হয়ে এ বার মটন মোমো বিক্রির কথাও ভাবছেন তিনি।
কৃষ্ণনগরের রাষ্ট্রীয় মুরগি খামারের সহ অধিকর্তা সারিকুল ইসলাম বলেন, ‘‘ব্রয়লার মুরগির বিক্রি প্রায় অর্ধেক হয়ে গিয়েছে। ডিম বিক্রিও কিছুটা কমেছে। পশ্চিমবঙ্গে প্রায় পাঁচ লক্ষ মানুষ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে ব্রয়লার মুরগি চাষের সঙ্গে যুক্ত। একটা ভিত্তিহীন গুজবে মানুষের মুরগির মাংস ও ডিম খাওয়া কমে যাওয়ায় এঁরা বিরাট ক্ষতির মুখে পড়েছেন। আমরা বিভিন্ন জায়গায় প্রচার করছি যাতে মানুষ এই ভুল ধারণা ভেঙে বেরোতে পারেন। আমরা বলতে চাই, করোনার সঙ্গে মুরগির কোনও যোগ প্রমাণিত হয়নি। দয়া করে নিশ্চিন্তে ব্রয়লার মুরগি খান।’’
গত ৪ মার্চ কৃষ্ণনগর জেলা পরিষদ ভবনে প্রাণিসম্পদ দপ্তরের তরফে মুরগি চাষি, ব্যবসায়ীদের সঙ্গে প্রাণী বিশেষজ্ঞদের আলোচনার আয়োজন হয়েছিল। সেখানেও মাংস ও ডিম নিয়ে অহেতুক আতঙ্ক কাটানোর কথা আলোচিত হয়।
তথ্য সহায়তা: সন্দীপ পাল ও
সৌমিত্র সিকদার
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy