Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
Coronavirus

মাস্ক ছাড়াই রোগীর ভিড় আউটডোরে

মুর্শিদাবাদ মেডিক্যালের সুপার দেবদাস সাহা বলেন, ‘‘এক যুবককে আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়েছে। রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের নির্দেশ মেনে চিকিৎসা, পরীক্ষা করা হচ্ছে।’’

মেডিক্যাল কলেজে রোগীদের মুখে মাস্ক নেই। নিজস্ব চিত্র

মেডিক্যাল কলেজে রোগীদের মুখে মাস্ক নেই। নিজস্ব চিত্র

সামসুদ্দিন বিশ্বাস ও বিদ্যুৎ মৈত্র
বহরমপুর শেষ আপডেট: ১৮ মার্চ ২০২০ ০২:১৪
Share: Save:

করোনাভাইরাস আক্রান্তদের জন্য তৈরি হওয়া মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে মঙ্গলবারই ভর্তি করানো হল কুয়েত ফেরত বছর ছাব্বিশের এক যুবককে। তাঁর বাড়ি কান্দিতে। কিন্তু এ দিনই হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেল, আউটডোরে রোগীদের ভিড় উপচে পড়ছে। কিন্তু চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা ছাড়া করোনাভাইরাস নিয়ে সচেতনতার বালাই নেই কারও। রোগীদের কারও কারও বক্তব্য, এমনিতে মাস্ক মিলছে না। কিন্তু করোনার উপসর্গ নিয়ে বহু লোক হাসপাতালেই আসছেন। তাঁরা আউটডোরে দেখাচ্ছেন। কিন্তু তাঁরা কেউই মাস্ক পড়ে নেই। তাই তাঁদের কারও যদি সত্যিই এই সংক্রমণ হয়ে থাকে, তা হলে তার কাছ থেকে আরও অনেকের কাছে তা ছড়িয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন রোগী ও তাঁদের পরিজনেরা।

কান্দির ওই যুবক গত ১৪ মার্চ কুয়েত থেকে বিমানে মুম্বই আসেন। সোমবার সেখান থেকে ট্রেনে করে কলকাতা হয়ে কান্দির গ্রামের বাড়িতে ফিরেছেন। তাঁর জ্বর, সর্দি কাশি হওয়ায় পরিবারের লোকজন মঙ্গলবার সকালে গোকর্ণ ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে আসেন। সেখানকার চিকিৎসকরা তাঁকে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রেফার করেন। মঙ্গলবার দুপুর দু’টোর সময় তাঁকে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তি করানো হয়েছে। মেডিক্যাল কলেজ সূত্রের খবর ওই যুবকের লালারসের নমুনা সংগ্রহ করে নাইসেডে পাঠানো হবে। মুর্শিদাবাদের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক প্রশান্ত বিশ্বাস বলেন, ‘‘ওই যুবকের পরিবারের উপরেও আমরা নজর রেখেছি।’’

মুর্শিদাবাদ মেডিক্যালের সুপার দেবদাস সাহা বলেন, ‘‘এক যুবককে আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়েছে। রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের নির্দেশ মেনে চিকিৎসা, পরীক্ষা করা হচ্ছে।’’

অন্য দিকে, সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে বিদেশ ফেরত মুর্শিদাবাদের ৭৪ জন বাসিন্দাকে বাড়িতে নজরবন্দি করে রেখেছে স্বাস্থ্য দফতর। তাঁদের ২৮ দিন ধরে স্বাস্থ্যকর্মীরা নজরে রাখবেন। ইতিমধ্যে ৮ জনের ২৮ দিনের নজরদারির মেয়াদ শেষ হয়েছে বলে জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে। সূত্রের খবর, যাঁদের বাড়িতে রেখে নজরদারি চালানো হচ্ছে তাঁরা মূলত চিন, সিঙ্গাপুর, দুবাই, তাইল্যান্ড, ইটালি থেকে দেশে ফিরেছেন। গত দু’দিনে ঝাড়খণ্ডের সাতটি সীমান্ত এলাকায় প্রায় ৩ হাজার বাসিন্দাকে স্ক্রিনিং করা হয়েছে। সোমবার তাঁদের মধ্যে ঝাড়খণ্ডের দু’জনকে ফরাক্কার একটি সীমান্ত দিয়ে এ রাজ্যে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। সে দিন ফরাক্কার একটি সীমান্ত দিয়ে তাঁরা ফরাক্কায় বাজার করতে আসছিলেন। স্ক্রিনিং শিবির পরীক্ষায় তাঁদের দেখা যায় জ্বর কাশি হয়েছে। তাই তাঁদের বাড়িতে রেখে নজরদারির জন্য রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের মাধ্যমে ঝাড়খণ্ড সরকারকে জানানো হয়েছে।

অন্য দিকে মঙ্গলবার দুপুরে বহরমপুরে মুখ্যস্বাস্থ্য আধিকারিকের অফিসে জরুরি বৈঠক হয়। সেখানে প্রাণি সম্পদ বিকাশ দফতরের উপ অধিকর্তা থেকে শুরু করে, মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ ও জেলা স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিকদের নিয়ে বৈঠক করেন মুখ্যস্বাস্থ্য আধিকারিক। বৈঠক শেষে মুখ্যস্বাস্থ্য আধিকারিক প্রশান্ত বিশ্বাস বলেন, ‘‘করোনা ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে আমরা প্রস্তুত রয়েছি। এ জন্য যাবতীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’’

কিন্তু মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিস্থিতি নিয়ে রোগীদের ক্ষোভ বাড়ছে। প্রতিনিয়ত হাসপাতালের মাইক থেকে জানানো হচ্ছে দালালের হাত থেকে সাবধান হতে। হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সঙ্গে সাক্ষাতের সময় ইত্যাদি ঘোষণা। কিন্তু সকাল থেকে অপেক্ষা করে একবারও শোনা গেল না করোনাভাইরাস নিয়ে হাসপাতালে উপস্থিত রোগী ও তাঁর পরিজনদের উদ্দেশে কোনও সাবধানবাণী। লালগোলা থেকে ছেলেকে পেটের অসুখের চিকিৎসা করাতে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এসেছেন ফরিদ সেখ। তিনি বলছেন, ‘‘খুব ভয়ে ভয়েই এসেছিলাম। না জানি করোনা নিয়ে কতই না কড়াকড়ি হবে। এসে দেখলাম সে সবের কোনও বালাই নেই।’’ পথ দূর্ঘটনায় আহত বন্ধুকে নিয়ে এসে সোমবার রাত থেকে হাসপাতালে ছিলেন স্বরূপ মাহাতো। তিনি বলছেন, “এখানে রোগীর পরিজনদের থাকার জন্য যে ঘর দেওয়া হয়েছে, সেখানেও কেউ বলছে না হাত পা ধুয়ে আসুন কিংবা মুখে মাস্ক লাগিয়ে থাকুন।” তিনি ও তাঁর বন্ধুরা নিজেরাই বন্ধুকে হাসপাতালে ভর্তি করে স্থানীয় এক দোকান থেকে মাস্ক কিনে এনে পড়েছেন। সুপার দেবদাসবাবু বলেন, ‘‘ওয়ার্ডে যে জ্বরের রোগীরা রয়েছেন, তাঁরা তো করোনাভাইরাসে আক্রান্ত নন, তাই মাস্ক দেওয়া হয়নি। আউটডোরে যাঁরা দেখাচ্ছেন, তাঁদের কাউকে ভর্তি করানোর হলে, তাঁকে আমরা ভর্তি করিয়ে নিচ্ছি।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus Murshidabad Medical College
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy