Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪
দিল্লির ছোঁয়ায় করোনার কবলে ৫
Coronavirus

অসম ঘুরে এসে নজরে সরকারি ডাক্তারও

স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, তরুণীর এক দাদা সম্প্রতি লন্ডন থেকে দিল্লিতে ফিরেছেন।

প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২৮ মার্চ ২০২০ ০২:৫৭
Share: Save:

আশঙ্কাটা ছিলই। দিল্লিতে করোনা-আক্রান্ত দাদার সঙ্গে দেখা করে তেহট্টের বাড়িতে ফেরা তরুণী-সহ পাঁচ জনের শরীরে ভাইরাসের অস্তিত্ব মিলল। তেহট্ট মহকুমাশাসক অনীশ দাশগুপ্ত জানান, বছর সাতাশের এক তরুণী এবং তাঁর ন’মাস ও ছ’বছরের দুই মেয়ে ছাড়াও ৪৫ বছরের এক মহিলা ও তাঁর ১১ বছরের ছেলে এই তালিকায় রয়েছেন। শুক্রবার রাতেই তাঁদের কলকাতায় বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালের উদ্দেশে রওনা করানো হয়। এঁদের সংস্পর্শে আসা আরও আট জন তেহট্টের আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তি রয়েছেন।

স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, তরুণীর এক দাদা সম্প্রতি লন্ডন থেকে দিল্লিতে ফিরেছেন। তরুণীর পরিবারের আরও কয়েক জন দিল্লি গিয়েছিলেন। লন্ডন প্রত্যাগত ওই যুবক এবং তাঁর এক ভাই বর্তমানে করোনা আক্রান্ত হয়ে দিল্লির হাসপাতালে ভর্তি আছেন। পরিবারের কয়েক জন রাজধানী এক্সপ্রেস ধরে শিয়ালদহ স্টেশনে আসেন। সেখান থেকে লালগোলা ফাস্ট প্যাসেঞ্জার ধরে বেথুয়াডহরি যান। সেখান থেকে অটোয় তেহট্টের বার্নিয়ায় নিজেদের বাড়িতে চলে যান। লোকজনের সঙ্গে মেলামেশাও করেন। কয়েক দিনের মধ্যে কয়েক জন অসুস্থ হয়ে পড়ায় মঙ্গলবার ওই পরিবার এবং তাঁদের সংস্পর্শে আসা লোকজন মিলিয়ে ১৩ জনকে তেহট্টে আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। এর মধ্যে আট জনের উপসর্গ থাকায় তাঁদের লালারসের নমুনা বেলেঘাটায় পরীক্ষা করতে পাঠানো হয়েছিল। তিন জনের লালায় ভাইরাস পাওয়া যায়নি। বাকিদের আগেই আইসোলেশনে পৃথক ভাবে রাখা হয়েছিল। এখনও তাঁরা সেখানেই নজরবন্দি রয়েছেন।

নদিয়ায় করোনা যে আরও জাল বিস্তার করতে পারে, সেই আশঙ্কা ইতিমধ্যেই করছে জেলা স্বাস্থ্য দফতর। বিশেষ করে লকডাউন ঘোষণার দিন এবং তার পরেও বিপুল পরিমাণ পরিযায়ী শ্রমিক ভিন্ রাজ্য থেকে জেলায় ফিরেছেন। করোনা ছড়াতে থাকলে এক বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালের পক্ষে তার চাপ সামাল দেওয়া সম্ভব নয়। ফলে ইতিমধ্যেই ‘কোভিড-১৯’ ভাইরাস আক্রান্তদের জন্য জেলায় জেলায় বিশেষ ‘কোভিড হাসপাতাল’ তৈরির নির্দেশ দিয়েছে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর। বৃহস্পতিবারই ভিডিয়ো কনফারেন্সে স্বাস্থ্যকর্তারা জেলাগুলিকে এই নির্দেশ দেন। তার পর থেকেই যুদ্ধকালীন তৎপরতায় পরিকাঠামো তৈরির কাজ শুরু হয়েছে।

আপাতত ঠিক হয়েছে, শক্তিনগর জেলা হাসপাতালেই বিশেষ পরিকাঠামো গড়ে তোলা হবে। বিশেষ ওয়ার্ড তৈরির জন্য ঘর বাছা হয়েছে। পূর্ত দফতর, ইলেট্রিক্যাল ও ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক।

উপ-মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক অসিত দেওয়ান শুক্রবার বলেন, “যত দ্রুত সম্ভব কাজ শেষ করা হবে।” স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রাথমিক ভাবে ৩০ শয্যার পরিকাঠামো তৈরি করা হবে। প্রয়োজনে শয্যাসংখ্যা আরও বাড়ানো হতে পারে। সেখানে ভেন্টিলেটর ও অন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি থাকবে। তার জন্য যন্ত্রপাতি ও অন্য উপকরণের তালিকা তৈরি করে রাজ্যে পাঠানো হয়েছে।

করোনা চিহ্নিত হওয়ার আগে পর্যন্ত সন্দেহভাজন রোগীদের রাখার জন্য জেলা জুড়ে আইসোলেশন ওয়ার্ডে শয্যাসংখ্যাও ক্রমশ বাড়ানো হচ্ছে। বৃহস্পতিবার সাতটি হাসপাতালে শয্যা ৪৭ থেকে বাড়িয়ে ৬৪টি করা হয়েছিল। শুক্রবার তা আরও বেড়ে হয়েছে ৯২।

অসিতবাবুর আশঙ্কা, “পরিস্থিতি এমন দাঁড়াতে পারে যে বহু মানুষকে আইসোলেশন ওয়ার্ডে রাখতে হতে পারে।” যদিও এ দিন নতুন করে আর কাউকে আইসোলেশনে নিতে হয়নি। বরং করোনার স্পষ্ট উপসর্গ না থাকায় দু’জনকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্যকর্তারা জানা, কোয়রান্টিন সেন্টারেও শয্যা বাড়ানো হতে পারে। তবে চিকিৎসা সংক্রান্ত উপকরণ পর্যাপ্ত পরিমাণে সরবরাহ হচ্ছে না বলেই জেলার কর্তারা জানিয়েছেন। তাঁরা বিভিন্ন সরবরাহকারীদের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করতে শুরু করেছেন। তবে আগে থেকেই সন্দেহের তালিকায় থাকা ওই ১৩ জনকে বাদ দিলে জেলার বাকি অংশে ছবিটা এত ভীতিপ্রদ নয়। গোটা জেলায় ১৮ হাজারেরও বেশি মানুষ হোম কোয়রান্টিনে আছেন, স্বাস্থ্য দফতর নিয়মিত তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে। কারও কারও জ্বর হয়ে থাকলেও স্পষ্ট করে করোনার উপসর্গ এখনও দেখা যায়নি। ফলে শুক্রবার নতুন করে আর কাউকে আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তি করাতে হয়নি। কালীগঞ্জের দেবগ্রাম থেকে জ্বর নিয়ে যে যুবক শক্তিনগরে আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তি হয়েছিলেন, তাঁরও দেহে করোনা-উপসর্গ নেই বলে এ দিন জেলার স্বাস্থ্যকর্তারা দাবি করেছেন। তবে সম্প্রতি অসম থেকে বেড়িয়ে ফেরা জেলা সদর হাসপাতালের এক স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞকে আউটডোর বা নিজের চেম্বারে রোগী দেখতে বা অস্ত্রোপচার করতে নিষেধ করা হয়েছে।

তবে এ দিন হোম কোয়রান্টিনের সংখ্যা আরও বেড়েছে। প্রায় ১৬ হাজার থেকে এক লাফে তা হয়েছে ১৮ হাজার ৫৫৪। তবে এঁদের একাংশ নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়ছিলেন বলে যে অভিযোগ উঠছিল, তা অনেকটাই কমেছে। স্বাস্থ্যকর্মী ও পুলিশ তো বটেই, বহু ক্ষেত্রে স্থানীয় বাসিন্দারাই তাঁদের উপরে নজরদারি চালাচ্ছেন, বাইরে বেরোলে ঘরে ঢুকিয়ে দিচ্ছেন। জেলায় পুলিশ-প্রশাসনের সমস্ত অফিসারকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, কোনও চিকিৎসক নার্স বা সাফাইকর্মীদের যাতে হয়রান করা না হয় সে দিকে নজর রাখতে। প্রতিটি এলাকায় ভবঘুরে ও ভিখিরিদের জন্য অস্থায়ী শিবির তৈরি করে খাবারের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। জেলা প্রশাসনের ওসি (স্বাস্থ্য) বিশ্বজিং ঢ্যাং বলেন, ‘‘জেলার পর্যাপ্ত খাবার মজুত আছে। অহেতুক আতঙ্কিত হয়ে কাউকে কালোবাজারির সুযোগ করে দেবেন না।”

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus Tehatta Delhi
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy