ছোট নেতার বেশ বড় গাড়ি। সেই গাড়িতে লাগানো বোর্ডে পদের নাম বেশ বড় হরফে লেখা, কিন্তু তিনি সংগঠনের কোন স্তরের পদাধিকারী, সে কথাটা একেবারেই ছোট হরফে রয়েছে। ভাল করে খেয়াল না করলে নজরেই আসবে না। মুর্শিদাবাদের ডোমকলে এমন বেশ কিছু গাড়ি বার বার দেখা যাচ্ছে রাস্তায়।
যেমন ধরা যাক, কোনও নেতার গাড়িতে বড় বোর্ডে বড় হরফে ‘প্রেসিডেন্ট’ লেখা, নীচে বেশ ছোট হরফে লেখা বুথের নাম। অর্থাৎ, আসলে ওই নেতা কোনও বুথের সভাপতি। কিন্তু সে কথা তাঁর গাড়ি দেখে বোঝার জো নেই। এমন বেশ কিছু গাড়ির ছবি সমাজমাধ্যমে ভাইরালও হয়েছে। কয়েক জন অঞ্চল সভাপতির বিরুদ্ধেও এমন অভিযোগ উঠেছে। বিরোধী রাজনৈতিক দলের দাবি, তৃণমূল জামানায় ‘লোক দেখানো’ ক্ষমতার সংস্কৃতি ক্রমশ বাড়ছে। যদিও তৃণমূলের জেলা নেতৃত্বই এই ‘সংস্কৃতি’র বিরুদ্ধে। তাঁদের দাবি, নেত্রী বারবার সতর্ক করছেন বিষয়টি নিয়ে। বলেছেন, যতটা সম্ভব নত হয়ে মানুষের সঙ্গে মিশতে। হেঁটে বা সাইকেলে জনসংযোগ করতে। সেখানে কিছু নেতার এমন কাজে দলের মুখ পুড়ছে বলে দাবি দলেরই কিছু নেতার।
ডোমকল ব্লক তৃণমূলের সভাপতি হাজিকুল ইসলামের গাড়িতেই এমন বড় করে ‘প্রেসিডেন্ট’ কথাটা লেখা রয়েছে, তার তলায় ছোট করে লেখা ব্লক তৃণমূলের নাম। কেন এমন করে বোর্ড লাগিয়েছেন? হাজিকুল বলেন, ‘‘বোর্ড লেখার নিয়মই তো এ রকম। আমি তো প্রেসিডেন্ট বটেই। সে কথাটা বড় করে লিখেছি। কোথাকার প্রেসিডেন্ট, সেটা ছোট করে হলেও পরিষ্কার করে দেওয়া রয়েছে।’’ তবে সাধারণ মানুষের বক্তব্য, গাড়ি দ্রুত চলে যাওয়ার সময় তিনি কোথাকার প্রেসিডেন্ট তা আর পড়ার সুযোগ থাকে না। জেলা সিপিএমের সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য ডোমকলের মোস্তাফিজুর রহমান বলছেন, ‘‘ওই দলের নেতাদের পক্ষে এটাই স্বাভাবিক। ওই দলে এখন প্রতিযোগিতা চলে, কার কত দামি গাড়ি আছে, কার গাড়িতে কত বড় বোর্ড আছে।’’ যদিও জেলা তৃণমূলের সভাপতি অপূর্ব সরকারের দাবি, ‘‘আমি এখনও পর্যন্ত নিজের গাড়িতে কোনও বোর্ড ব্যবহার করি না।’’ তাঁর কথায়, ‘‘এখনও বিধানসভায় গেলে কলকাতায় বাইক চেপেই ঘুরি। দীর্ঘদিন বিধায়ক আছি, কখনও গাড়িতে বোর্ড লাগানোর প্রয়োজন পড়েনি। তা ছাড়া আমাদের নেত্রী নিজের জীবন আদর্শ দিয়েও এ বিষয়টি প্রতিষ্ঠিত করেছেন। ফলে দলের নেতা-কর্মী সকলের সেই পথ অনুসরণ করা উচিত।’’
কিন্তু এ ভাবে বড় হরফের বোর্ড লাগিয়ে লাভ কী হয়? জেলার এক পুলিশ কর্তা বলছেন, একটা সময় আমলা এবং বড় পদাধিকারী থেকে শুরু করে নেতা-মন্ত্রীর গাড়ির সামনে এমন বোর্ড ব্যবহার করা হত। সে সময় নেতাদের হাতে এমন গাড়ি ছিল না। কিন্তু বর্তমানে একেবারে চুনোপুঁটি নেতাদের হাতেও দামি গাড়ি চলে এসেছে। ফলে ছোট মাঝারি নেতারাও গাড়ির সামনে বোর্ড রেখে নিজেকে একটু হোমড়াচোমড়া পদাধিকারী হিসেবে পরিচয় দিতে চাইছেন সাধারণ মানুষের সামনে।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)