পুলিশের সঙ্গে ধৃত। নিজস্ব চিত্র
জলঙ্গিতে পচাতে দেওয়া পাট চুরি নিয়ে বিবাদের জেরে তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর লোকেদের মধ্যে তুমুল বোমাবাজি হল চাপড়ার মহেশনগর গ্রামে। বৃহস্পতিবার ওই ঘটনার পরে পুলিশ আগ্নেয়াস্ত্র-সহ তিন জনকে গ্রেফতার করেছে। উদ্ধার করেছে প্রচুর তাজা বোমা। গোটা এলাকায় প্রচুর পুলিশ মোতায়ন করা হয়েছে। যদিও তৃণমূল নেতৃত্বের দাবি, এই ঘটনার সঙ্গে দলের কোনও সম্পর্ক নেই।
চাপড়ার হাতিশালা ১ গ্রাম পঞ্চায়েতের মহেশনগর গ্রামে দীর্ঘদিন ধরেই তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর মধ্যে অশান্তি চলছে। মূলত এলাকার দখল নিয়েই এই অশান্তি। আগে একাধিক বার দুই পক্ষের মধ্যে বোমাবাজির ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ একাধিক বার গ্রামের ভিতর থেকে মজুত রাখা তাজা বোমা উদ্ধার করেছে। তার কোনওটা বোতল বোমা, কোনওটা সকেট, আবার কোনওটা পেটো। উভয় পক্ষের নেতাকর্মীরা গ্রেফতারির ভয়ে ঘরছাড়া। কিন্তু তার পরেও পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়নি। বরং ভিতরে ভিতরে উত্তেজনা বেড়েছে। গ্রামে না ঢুকলেও বাইরে থেকে তারা নিজের নিজের অনুগামীদের নানা ভাবে উত্তেজিত করে গিয়েছে, এমনকি দুই পক্ষই প্রচুর বোমার মশলা ও তৈরি বোমা সরবরাহ করেছে বলে অভিযোগ। সেই বোমাই এ দিন মুড়ি-মুড়কির মত পড়েছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, এই গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে এক দিকে রয়েছেন ব্লক সভাপতি জেবের শেখের অনুগামী গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য মতিম শেখ আর এক দিকে জেবেরের বিরোধী গোষ্ঠীর নেতা সংখ্যালঘু সেলের ব্লক সভাপতি রাজীব শেখের শ্বশুর, চাপড়া পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য আসফল শেখ। মাসখানেক আগে একটি টোটোকে রাস্তায় পাশ দেওয়াকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মধ্যে গন্ডগোলে প্রচুর বোমা পড়েছিল। সেই ঘটনায় ওই দুই নেতা ও তাদের অনুগামীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হয়। পুলিশ উভয় পক্ষের বেশ কয়েক জনকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারি এড়াতে দুই নেতাই এখন এলাকাছাড়া।
মতিম শেখের পক্ষের অভিযোগ, তাদের লোকজন বাড়ির কাছে জলঙ্গিতে পাট ভিজিয়ে রেখেছিল। এ দিন সকালে উঠে দেখে, সেই পাট নেই। মতিম পক্ষের দাবি, রাতের অন্ধকারে পাট চুরি করে নিয়ে গিয়েছে আসফল শেখের লোকজন। তারা আসফলের বাড়ির দিকে গিয়ে জানতে চায়, কেন তাদের পাট তুলে আনা হয়েছে। তাদের অভিযোগ, তখনই তাদের লক্ষ্য করে বোমা ছোড়া শুরু হয়। এতেই গোলমাল বেধে যায়।
স্থানীয় সূত্রের খবর, দুই পক্ষের ছোড়া বেশ কয়েক জন গ্রামবাসীর বাড়ির ক্ষতি হয়েছে। খবর পেয়ে বিশাল বাহিনী নিয়ে গ্রামে আসেন জেলার পুলিশকর্তারা। পুলিশের দাবি, এই ঘটনায় নাকাশিপাড়া এলাকার সমাজবিরোধীরা জড়িত ছিল। তারা যাতে পালিয়ে যেতে না পারে তার জন্য উল্টো দিকে নাকাশিপাড়ার বীরপুর ঘাট বন্ধ করে দেয় পুলিশ। মাঠের ভিতর থেকে তাড়িয়ে বোমা-সহ তিন জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের এক জনের কাছ থেকে আগ্নেয়াস্ত্রও পাওয়া গিয়েছে।
পুলিশ জানিয়েছে, আসফলের বাড়ির কাছে একটি কলাবাগান ও গ্রামের কবরস্থান থেকে প্রচুর তাজা বোমা উদ্ধার হয়েছে। সেগুলি মাটিতে পোঁতা ছিল। প্রাথমিক ভাবে পুলিশের দাবি, আগে থেকেই বোমা মজুত রেখে এ দিন অশান্তির পরিবেশ তৈরি করা হয়েছে। আসফলের জামাই রাজীব শেখের অবশ্য দাবি, “এই ঘটনার সঙ্গে আমার কোনও সম্পর্ক নেই। তা ছাড়া এর সঙ্গে রাজনীতিরও কোন সম্পর্ক নেই। নেহাতই গ্রাম্য বিবাদ।”
আর জেবের শেখের দাবি, “পাট পচানোকে ঘিরেই গন্ডগোল। তারই জেরে বোমাবাজি করেছে এক পক্ষ। আমরা চাই, পুলিশ ওই গ্রামে শান্তি ফেরাতে কঠোর পদক্ষেপ করুক।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy