Advertisement
০৩ নভেম্বর ২০২৪

গাঁজার বাজার দখলে তুমুল লড়াই

গাঁজা ‘মাফিয়ারা’ গাড়ি বোঝাই ‘মাল’ নিয়ে আসছে। তার পর তা ভাগ করে দেওয়া হচ্ছে গ্রামের ভিতরে বহু বাড়িতে। বাড়ি-বাড়ি তৈরি হচ্ছে ছোট ছোট পুরিয়া। পারিশ্রমিক মিলছে ভালই।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ১২ অগস্ট ২০১৯ ০১:২৮
Share: Save:

গাঁজার ফুটন্ত বাজার। বাতাসে টাকা ওড়ে সেখানে। সেই টাকা দখল করবে কে? কে হবে এই সোনার খনির বেতাজ বাদশা? মেরু না সুজন?

হরিণঘাটার মহাদেবপুরে এই দখলদারি নিয়ে শুরু হয়ে গিয়েছে ঠাণ্ডা লড়াই। পুলিশ জানে। জানেন রাজনৈতিক দলের নেতারাও। কিন্তু কোনও এক ‘অজ্ঞাত’ কারণে সকলেই চুপ। আর তারই ফাঁকে মহাদেবপুরে গাঁজার ‘পুরিয়া’ তৈরি কার্যত কুটীর শিল্পের রূপ নিয়ে নিয়েছে। অভিযোগ, গাঁজার বাজারের রাজা কে তা নিয়ে এখন জোর লড়াই দুই মাফিয়া মেরু আর সুজনের মধ্যে।

গাঁজা ‘মাফিয়ারা’ গাড়ি বোঝাই ‘মাল’ নিয়ে আসছে। তার পর তা ভাগ করে দেওয়া হচ্ছে গ্রামের ভিতরে বহু বাড়িতে। বাড়ি-বাড়ি তৈরি হচ্ছে ছোট ছোট পুরিয়া। পারিশ্রমিক মিলছে ভালই। অনেক পরিবারই বেঁচে আছে এই কাজের উপর। আশপাশের জেলাতেও সেই কাজের জাল ছড়িয়ে পড়ছে। শুধু পুরিয়ার ব্যবসায় এখন আর তা থেমে নেই। মহাদেবপুরের ‘গাঁজা মাফিয়া’ মেরু বা সুজনদের ব্যবসা এখন আরও বড় হয়েছে। তারা এখন কেজি কেজি গাঁজা সরবরাহ করতে শুরু করেছে।

নদিয়ার মানচিত্রে হরিণঘাটার মহাদেবপুর বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য। তার একটাই কারণ। গাঁজা। মহাদেবপুরে এই ব্যবসা শুরু হয়েছিল অনেক দিন আগে। স্থানীয় বাসিন্দাদের থেকে জানা যায়, প্রায় চল্লিশ-পঁয়তাল্লিশ বছর আগে আশুতোষ সরকারের হাত ধরে শুরু হয়েছিল ব্যবসা। তার স্ত্রীর নাম ভৈরবী। অনেকে আবার বলেন, ভৈরবীর বাবা রবি সাধুর হাত ধরেই নাকি গাঁজা ব্যবসার সূত্রপাত। তখন ব্যবসার কলেবর ছিল ছোট। মূলত ভৈরবীর হাত ধরেই তা ক্রমশ ফুলেফেঁপে উঠতে থাকে।

এক সময় আচমকা আশুতোষ সব ছেড়ে নিখোঁজ হয়ে যায়। ব্যবসা চালানোর ভার এসে পড়ে স্ত্রী ভৈরবী ও শাগরেদ, মিলন চাকি ওরফে মেরু, শঙ্করদের উপরে। কিন্তু একটা সময়ের পর মেরু, শঙ্করেরা ভৈরবীর থেকে আলাদা হয়ে স্বাধীন ভাবে ব্যবসা শুরু করে। মেরুর কল্যাণেই গাঁজার ব্যবসা ক্রমশ এলাকার চৌহদ্দি ছাড়াতে থাকে। আনাগোনা বাড়তে থাকে বাইরের মানুষের। রাত নামলেই গ্রামে ঢুকতে থাকে মোটরবাইক আর দামি গাড়ি। ব্যবসা বাড়ে ভৈরবীরও। স্থানীয়দের মতে, শঙ্কর-ও একই ব্যবসায় ছিল কিন্তু তুলনায় মেরু বা ভৈরবীর থেকে সে পিছিয়ে পড়তে থাকে।

ভৈরবীর যোগ্য উত্তরসূরী হয়ে ওঠে তার ছেলে আশিস। সেই সঙ্গে স্থানীয় বাসিন্দা সুজন সরকারও ভৈরবীর ডান হাত হয়ে উঠতে থাকে। ভৈরবীই হাতে ধরে তৈরি করেছিল সুজনকে। এর পাশাপাশি মহাদেবপুরের হাড়ি পাড়ার গফ্ফরও এই ব্যবসায় হাত পাকাতে থাকে।

গোয়েন্দা-সূত্র অনুযায়ী, নবদ্বীপ বা শান্তিপুরে যেমন মনিপুরের গাঁজা বিক্রি হয় তেমনই এই মহাদেবপুরে জলপাইগুড়ির থেকে মূলত ট্রেনে করে টিনের বাক্সে গাঁজা আসে। গোয়েন্দাদের দাবি, উত্তর ২৪ পরগনার হাবড়া স্টেশন থেকে নিজের সাদা স্করপিও গাড়িতে গাঁজা নিয়ে আসে মেরু। আর উত্তর ২৪ পরগনার গোপালপুর এলাকা থেকে ছোট মালবাহী ৪০৭ গাড়িতে গাঁজা আনে সুজন। হরিণঘাটার নিমতলা হয়ে ঢোকে সুজনের গাঁজা। তার পর ছোট ছোট পুরিয়া বানিয়ে তা ছড়িয়ে দেওয়া হয়। দিনের পর দিন এই ভাবে গাঁজার ব্যবসা বাড়তে থাকে। ব্যবসায়ীদের মূল টার্গেট হল স্কুল কলেজের পড়ুয়ারা। সেই সঙ্গে গ্রামে গ্রামে বাড়তে থাকে সমাজবিরোধীদের আনাগোনা। স্থানীয় এক বাসিন্দার কথায়, ‘‘মোটরবাইকে করে গাঁজা বিভিন্ন দিকে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। যারা এটা করে তাদের সঙ্গে থাকে আগ্নেয়াস্ত্র। ফলে লোকে প্রতিবাদ করতে ভয় পায়।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Crime Smuggling Business Marijuana Canabis
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE