ভিড়: রামনবমীর মেলায় ভিড়। ধোড়াদহে। নিজস্ব চিত্র
এক পাশে ঝুমকো, হাতের বালা, কানের দুলের রকমারি পসরা। আর অন্য পাশে বসেছে মেয়েদের শৌখিন হাত ব্যাগ। কোন স্টলটাতে যে আগে ঢুকবে, বুঝেই উঠতে পারছিলেন না দুই তরুণী, গুলশন আর মণীষা।
রামনবমীর মেলা বসেছে থানারপাড়ার ধোড়াদহ গ্রামে। সে প্রায় দু’শো বছরের পুরনো মেলা। বুধবার থেকে মেলা চলবে আগামী ন’দিন। বহুকাল আগে চৈত্রের শুক্লা নবমী তিথিতে রামচন্দ্রের আবির্ভাব উপলক্ষে তখনকার জমিদার পঞ্চানন চৌধুরী এই মেলা ও পুজো চালু করেছিলেন। সেই থেকে প্রতি বছর খুব ঘটা করে পুজো হয়। মেলা বসে। মাঝে অবশ্য ১৯৮৬ সাল থেকে বন্ধ ছিল মেলা। কিন্তু স্থানীয় মানুষের উদ্যোগেই ২০১৫ সাল থেকে ফেরে শুরু হয়েছে রামনবমীর মেলা। হবে না-ই বা কেন? উভয় সম্প্রদায়ের মানুষের কত স্মৃতি-আবেগ জড়িয়ে আছে এই মেলাকে ঘিরে।
গ্রামের ৮৯ বছর বয়সী বৃদ্ধ নন্দদুলাল ঘোষের কথায়, “আজও স্পষ্ট মনে পড়ে, দিদিমার হাত ধরে এই মেলায় আসতাম আমি। তখনও দূরদূরান্ত থেকে কতশত লোক আসত। পুরনো নাট মন্দিরের পাশে উচু বাঁশের মাচার উপরে প্রহরে প্রহরে নহবত বাজত।’’ বলে চলেন বৃদ্ধ, ‘‘...বিভিন্ন এলাকা থেকে যাত্রাদল এসে অভিনয় করত। দেখা যেত কৃষ্ণনগরের পুতুল নাচ। জাতি ধর্ম, দলমত নির্বিশেষে এই মেলা তখন হয়ে উঠত সকলের মহামিলনক্ষেত্র।”
শুধু কী তাই? মেলা কমিটির সম্পাদক অসীম চৌধুরীই বললেন, “মেলা উপলক্ষে শ্বশুর বাড়ি থেকে মেয়েরা বাপের ভিটেতে আসে। কাজের সূত্রে যাঁরা বাইরে থাকেন, ঘরে ফেরেন তাঁরাও।’’ মন্দিরের এক পাশে তৈরি হয় মঞ্চ। প্রতি দিন সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সেই সঙ্গে যাত্রা, বাউল, কবিগানের আসর, আরও কত কী।
মেলা উপলক্ষে হালিশহরের শ্বশুরবাড়ি থেকে বাবার কাছে এসেছেন মৌমিতা চৌধুরী। বহরমপুর থেকে এসেছেন তুলতুলি বাগচি। তুলতুলিদেবী বলেন, “ভিড়ে হারিয়ে যাওয়ার ভয়ে ছোটবেলায় বাবা-মায়ের হাত ধরে এই মেলা দেখেছি। বিয়ের পরে প্রতি বছর সপরিবারে মেলার জন্য এখানে চলে আসি।”
মেলার প্রতিষ্ঠাতা জমিদার পঞ্চানন চৌধুরীর উত্তরসূরি চৌধুরী পরিবারের এক মাত্র জামাতা ও মেলা কমিটির সভাপতি রূপচাঁদ মণ্ডল জানান, আনুমানিক দু’শো বছর আগে জমিদার পঞ্চানন চৌধুরী রামনবমী তিথিতে কাশীর পুরোহিত এনে বিধান নিয়ে নিম ও বেল কাঠের মূর্তি বানিয়ে রামের পুজো শুরু করেন। সেই পুজোকে ঘিরেই শুরু হয়েছিল এই রামনবমীর মেলা।
রামনবমী মেলা কমিটির সদস্য নাসির শেখ বা আবুবাক্কার সিদ্দিকি বলেন, “বেশ কিছু দিন মেলা বন্ধ থাকার পর গত তিন বছর হল ফের সকলের উদ্যোগে নতুন করে এই মেলা চালু হয়েছে। প্রতি বছরের মতো এ বারও শেষ বসন্তে হিন্দু-মুসলিম মিলে সকলে মেতে উঠবে মেলার আনন্দে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy