চপ্পল উঠে এল হাতে। তারপর গালের উপরে সপাটে—ঠাস!
যিনি মেরেছেন জীবন বিজ্ঞানের সেই শিক্ষক রণং দেহি মেজাজে। আর যাঁর গাল লাল হয়ে গিয়েছে সেই গ্রন্থাগারিক রাগে কাঁপছেন।
স্কুলের মধ্যে মারপিট? সাহস তো কম নয়!
ধৈর্যের বাঁধ ভাঙল বাংলার শিক্ষিকার। ছড়ি হাতে রে রে করে তিনি ছুটলেন জীবন বিজ্ঞানের শিক্ষকের দিকে।
হতভম্ব অন্য শিক্ষক-শিক্ষিকারা। গোটা স্কুল চত্বরে পড়ুয়াদের হইচই ম্যাজিকের মতো ‘ভ্যানিশ’।
ক্লাস সেভেন চিমটি কাটল সিক্সকে, ‘‘উরিব্বাস! দেখলি শটটা?’’
এইট নাইনকে বলল, ‘‘আমরা মারপিট করলে তো জীবন বিজ্ঞান স্যার কান ধরে দাঁড় করিয়ে দেন। এ বার কী হবে?’’
একাদশের নীল-সাদা শাড়ি হাসতে হাসতে গড়িয়ে পড়ল, ‘‘বাপ রে বাপ! বাংলার ম্যাডামের ছড়ি হাতে দৌড়টা কিন্তু দেখার মতো।’’
বুধবার কান্দির বহড়া আদর্শ বিদ্যাপীঠের এমন ‘অ্যাকশনের’ পরে শিকেয় ওঠে পড়াশোনা। পড়ুয়াদের কেউ স্কুলে থেকে গেল আরও একটা ‘নাটকের’ অপেক্ষায়। পড়ে পাওয়া চোদ্দো আনা ছুটিটাকে নষ্ট করার কোনও মানে হয় না ভেবে কেউ বইখাতা গুটিয়ে সটান ফুটবল মাঠ।
নাহ্, থানা-পুলিশ পর্যন্ত বিষয়টি গড়ায়নি ঠিকই। কিন্তু প্রথম ধাক্কা সামাল দিতে হয় কান্দি থানার পুলিশকেই।
স্কুলের গণ্ডগোলের খবর পেয়ে ছুটে আসতে হয় জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক পূরবী বিশ্বাস দেকেও। ক্ষুব্ধ পূরবীদেবী বলছেন, ‘‘শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এমন ঘটনা কোনও ভাবেই বরদাস্ত করা যায় না। সকলের সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
স্কুলের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক দীনেন্দ্রমোহন ত্রিবেদী বলছেন, ‘‘কী লজ্জা বলুন তো! এক স্কুল পড়ুয়াদের মধ্যে ওঁরা যা কাণ্ড করে বসলেন!’’
ভাবতে পারছেন না স্থানীয় অভিভাবকেরাও। তাঁদের কথায়, ‘‘শিক্ষকদের এমন নমুনা দেখলে ছেলেমেয়েরা কী শিখবে?’’
যাঁদের নিয়ে এত কথা সেই জীবন বিজ্ঞানের শিক্ষক বলছেন, ‘‘মেজাজ হারিয়েই এমনটা করে ফেলেছি। মানছি, কাজটা ঠিক হয়নি। কিন্তু স্কুলে যা চলছে সেটাও মেনে নেওয়া যায় না।’’
আর প্রহৃত ওই গ্রন্থাগারিক বলছেন, “কিছু বুঝে ওঠার আগেই বেমক্কা চপ্পল খুলে উনি মেরে বসলেন। ভাবতে পারছি না, একজন শিক্ষকের এমন রুচি হয় কী করে?’’
শিক্ষিকাকে ছড়ি হাতে ছুটতে হল কেন?
বাংলার ওই শিক্ষিকা বলছেন, ‘‘ওই শিক্ষক যা করেছেন তা অন্যায়। আমি সেই ঘটনার প্রতিবাদ করতে গিয়েছিলাম মাত্র।’’
এমন ধুন্ধুমারের কারণ কী?
স্কুল সূত্রে খবর, গত ৫ সেপ্টেম্বর স্কুলে অনুষ্ঠান চলছিল। সেই সময় শিক্ষকদের ঘরের দরজার সামনে বাংলার শিক্ষিকার স্কুটি রাখা ছিল। তা নিয়ে ওই শিক্ষিকার সঙ্গে দু’জন পার্শ্ব শিক্ষকের বচসা হয়। পরে ওই শিক্ষিকা দেখেন, তাঁর স্কুটি থেকে বেশ কিছু জিনিসপত্র বাইরে ফেলে দেওয়া হয়েছে।
ওই শিক্ষিকা দু’জন পার্শ্বশিক্ষকের বিরুদ্ধে কান্দি থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগ, ওই শিক্ষিকাকে এ ব্যাপারে মদত দেন গ্রন্থাগারিক। মঙ্গলবার অবশ্য স্কুল কর্তৃপক্ষ দু’পক্ষকে নিয়ে বসে বিষয়টি মিটিয়ে দেন।
এ দিন ওই গ্রন্থাগারিক ওই দুই পার্শ্বশিক্ষক ও তাঁদের সঙ্গে থাকা শিক্ষকদের উদ্দেশে কটূক্তি করেন বলে অভিযোগ। তখনই মেজাজ হারান জীবন বিজ্ঞানের ওই শিক্ষক। যদিও এমন অভিযোগ অস্বীকার করেন ওই গ্রন্থাগারিক।
কিন্তু ছেলেপুলেকে ঠেকায় কে? হাওয়াই ভাসছে বিজ্ঞান স্যারের নতুন নাম—এএইচ (অ্যাকশন হিরো)!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy