Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪

দফায়-দফায় তাণ্ডব গাড়িতে আগুন, ধৃত

শনিবার রাতে গোলমাল বাধে কল্যাণীর ১ নম্বর ওয়ার্ডে অনুকূল মোড়ে। তৃণমূল সূত্রের খবর, দিন দুয়েক আগে দলের বুথ সভাপতি বিপুল বৈদ্যকে এলাকার কয়েক জন মারধর করেছিল।

পুলিশের সামনেই পুড়ছে বাইক। শনিবার রাতে কল্যাণীতে। —নিজস্ব চিত্র

পুলিশের সামনেই পুড়ছে বাইক। শনিবার রাতে কল্যাণীতে। —নিজস্ব চিত্র

মনিরুল শেখ
কল্যাণী শেষ আপডেট: ১৭ জুন ২০১৯ ০০:৪০
Share: Save:

লোকসভা নির্বাচনে পাশা পাল্টে গিয়েছে। এলাকার দখল নিয়ে তৃণমূল এবং বিজেপির সংঘর্ষে অশান্ত হয়ে উঠল কল্যাণী। শনিবার রাত থেকে দফায়-দফায় সংঘর্ষে ভাঙচুর হল গাড়ি, পোড়ানো হল মোটরবাইক। পুলিশ পাঁচ জনকে গ্রেফতার করেছে। শহরে ঢোকার বিভিন্ন জায়গায় নাকা তল্লাশি শুরু হয়েছে।

শনিবার রাতে গোলমাল বাধে কল্যাণীর ১ নম্বর ওয়ার্ডে অনুকূল মোড়ে। তৃণমূল সূত্রের খবর, দিন দুয়েক আগে দলের বুথ সভাপতি বিপুল বৈদ্যকে এলাকার কয়েক জন মারধর করেছিল। তাঁকে দেখতে যান কল্যাণী শহর তৃণমূলের সভাপতি অরুপ মুখোপাধ্যায় ওরফে টিঙ্কু। বিপুলকে থানায় অভিযোগ জানাতেও বলেন তিনি। টিঙ্কুর সঙ্গে ছিলেন ১ নম্বর ওয়ার্ড যুব তৃণমূলের সভাপতি সমীর মণ্ডল। টিঙ্কু এলাকা থেকে বার হতেই বিজেপির কিছু লোকজন সমীরের উপরে চড়াও হয় বলে অভিযোগ।

এর পরেই তৃণমূলের বেশ কয়েক জন নেতা এলাকায় যান। স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, মাঝেরচরের কুখ্যাত দুষ্কৃতী বাচ্চু দাস ও তার দলবলকে নিয়ে এলাকায় ঢোকে তৃণমূলের লোকজন। বাচ্চুর ‘ডান হাত’ বলে পরিচিত পঙ্কজ মণ্ডল ওরফে পঙ্কাও হাজির ছিল। তারা এলাকায় ঢুকে গুলি ছুড়তে শুরু করে। তবে তৃণমূলের দাবি, গুলি চালিয়েছে বিজেপির লোকজন। ততক্ষণে অন্তত শ’পাঁচেক লোক রাস্তায় নেমে এসেছে। প্রত্যেকের হাতে লাঠিসোটা। মহিলারা ঝাঁটা, কেউ বা বড় মাপের দা নিয়েও রাস্তায় নামেন। গতিক খারাপ বুঝে বাচ্চুর বাহিনী পিছু হটে। কিন্তু বাচ্চু গাড়িতে চেপে ঘোরাফেরা করে সেটা ঘিরে ফেলে বহু মানুষ।

এলাকার লোকজনের একাংশের দাবি, বহু লোক তেড়ে আসছে দেখে বাচ্চু দলবল নিয়ে গাড়ি ফেলে পালায় যায়। আরও একটি ছোট গাড়িও তারা ফেলে গিয়েছিল। পুলিশ জনতাকে বুঝিয়ে-সুজিয়ে বাড়ি পাঠানোর চেষ্টা করছিল। কিন্তু এরই মধ্যে বিজেপির সমর্থকেরা এক জন স্থানীয় নেত্রীর উস্কানিতে উত্তেজিত হয়ে ওঠেন। এর পরে শুরু হয় বিজেপির দাপাদাপি। রাত সাড়ে ১০টা থেকে ঘণ্টা দুয়েক এলাকার দখল নিয়ে নেয় তারা। ওই নেত্রীর বাবা এক সময়ে বিজেপির টিকিটে পুরভোটে লড়েছিলেন। মাঝে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়লেও এখন ফের তাঁরা অতিসক্রিয় হয়ে উঠেছেন।

এলাকার বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, বিজেপির লোকজন বাচ্চু বাহিনীর ফেলে যাওয়া গাড়ি দু’টি ভেঙে দেয়। সাতটি মোটরবাইক পুড়িয়ে দেওয়া হয়। এলাকায় তখন কোনও পুলিশ ছিল না। বরং কল্যাণী থানার একাধিক গাড়ি কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতরে ঢুকে দাঁড়িয়ে ছিল। রাস্তায় লোক চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। অপরিচিত কাউকে দেখলেই ‘তৃণমূলের লোক’ বলে মারধর করা হতে থাকে।

রাত পৌনে ১টা নাগাদ তাণ্ডব থিতিয়ে আসে। তার পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে ভাঙাচোরা ও আধপোড়া গাড়ি থানায় নিয়ে আসে।

কিন্তু ঘটনার রেশ গড়ায় রবিবার সকালেও। ফের অনুকূল মোড়ের দখল নেয় বিজেপি। কিন্তু কর্মসূচি নিয়ে তাদের মধ্যে মতভেদও শুরু হয়ে যায়। দলের কল্যাণী শহর মণ্ডলের সভাপতি সুকদেব মাইতি গেলে তাঁর সামনেই দু’পক্ষে হাতাহাতি বেধে যায়। ভয়ে এলাকার লোকজন দৌড়াদৌড়ি শুরু করে দেন। অনেকে দোকানে ঝাঁপ পড়ে যায়। বিজেপি কর্মীদেরই একাংশ মনে করছেন, সুকদেব আগের রাতে এলাকায় এলে সমাজবিরোধীরা দাপাতে পারত না। তবে সুকদেবের যুক্তি, ‘‘রাতে ঘটনার কথা অনেক পরে জানতে পারি।’’

কল্যাণী শহর তৃণমূলের সভাপতি অরূপ মুখোপাধ্যায় বলেন, “আমাদের বুথ সভাপতির বাড়িতে হামলা করা হয়েছে। এক কর্মীকেও মারধর করা হয়েছে। নতুন বিজেপি কর্মীরা এ সব করে আমাদের নামে দোষ চাপাচ্ছে।” টিঙ্কুর দাবি, ‘‘বাচ্চু এলাকায় যায়নি। পঙ্কা গিয়েছিল। বিজেপিই এলাকাকে অশান্ত করেছে।’’ বাচ্চুর দাবি, ‘‘আমি এক সময় যা করেছি, এখন আর তা করি না। আমি ঝামেলা করিনি।’’ তার গাড়ি তা হলে এলাকায় গেল কেন, তার সদুত্তর অবশ্য সে দিতে পারেনি।

রানাঘাট পুলিশ জেলার সুপার ভিএসআর অনন্তনাগ বলেন, ‘‘এই পুলিশ জেলা নতুন তৈরি হয়েছে। কিছু দিনের মধ্যে এলাকা শান্ত হয়ে যাবে। পাঁচ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।’’ তাদের ছাড়াতে সকালে বিজেপির লোকজন থানায় ভিড় জমিয়েছিল। তবে তাতে লাভ হয়নি। নিজস্ব চিত্র

অন্য বিষয়গুলি:

Kalyani TMC BJP Clash
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy