বড়দিনের পসরা সাজিয়ে দোকানি, খদ্দের নেই। কৃষ্ণনগরে সুদীপ ভট্টাচার্যের তোলা ছবি।
ক্রিসমাস ট্রি আছে, লাল-নীল ঘণ্টা আছে, হরেক রঙের রাঙতা মোড়ানো শোলার তারা, চকোলেট, বেলুন, বাঁশি, আরও কত কী আছে, সান্তার মুখোশ, টুপি... তা-ও আছে।
পিছনে হালকা মিঠে একটা সুর বাজছে... জিঙ্গল অল দ্য ওয়ে। তবু উৎসবের বাজারে সান্তাটুপি মাথায় দিয়ে এক রকম মুখ ব্যাজার করেই বসে আছেন বৃদ্ধ।
খদ্দেরের দেখা যে নেই।
দোরগোড়ায় বড়দিন। কিন্তু নোট বাতিলের জেরে এখনও খাঁ-খাঁ করছে বড়দিনের বাজার। কাপড়ের দোকান থেকে শুরু করে ঘর সাজানোর টুকিটাকি, কোথাও কোনও লোকের দেখা নেই। খুদেদের আবদার নেই। নতুন কেকের মাতাল করা গন্ধে ‘কোনটা টাটকা হবে দাদা’, এমন প্রশ্ন নেই। শীত পড়তে না পড়তে বেকারির আশপাশে সেই ভিড়টাই নেই।
কৃষ্ণনগর থেকে চাপড়া, বহরমপুর থেকে জঙ্গিপুর, বড়দিনের খুশি ফিকে হয়ে গিয়েছে সর্বত্রই। প্রতি বছর বড়দিনের সময়টা বহরমপুরে রাস্তায় দু’ধারে এক দল লোকের দেখা মিলত। টেবিল পেতে তার উপরে থরে থরে কেকের প্যাকেট সাজিয়ে বসতেন তাঁরা। এলইডি লাইটের মালা দিয়ে সাজাতেন তাঁদের একফালি ‘দোকান’। কিন্তু এখন পর্যন্ত ওই সব ‘পরিযায়ী’ দোকানিদের দেখা মেলেনি বহরমপুরের বাজারে।
তাঁরা জানাচ্ছেন, পুজো বা ইদের মতো বড়দিনের সময়টাও বাজার বেশ ভালই থাকে। ডিসেম্বরের শুরু থেকেই বাজারে ভিড় বাড়তে থাকে। কিন্তু এ বছর কোথায় কী! ডিসেম্বর তো পড়ে গিয়েছে কবেই। বড়দিন আসতে হাতে আর মাত্র ৬ দিন। কিন্তু এখনও খরিদ্দারের দেখা নেই।
কৃষ্ণনগরের পোষ্ট অফিস মোড়ের বস্ত্র ব্যবসায়ী কৃষ্ণেন্দু বিশ্বাস বলছেন, “অন্য বছরগুলোতে ডিসেম্বরের শুরুতেই বেচাকেনা শুরু হয়ে যায়। কৃষ্ণনগর ছাড়াও চাপড়া, বড় আন্দুলিয়া-সহ জেলার বিভিন্ন এলাকার খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের লোকজন কৃষ্ণনগরে ভিড় জমান। কিন্তু এ বছর বাজারের হাল খুবই খারাপ।” কেন এমন অবস্থা? কৃষ্ণেন্দুবাবু বলছেন, “নোট বাতিলের জেরে লোকজনের হাতে নগদ টাকার জোগান কম। তাই তাঁরা বাজারমুখি হচ্ছেন না।”
কৃষ্ণনগরের আরসি পাড়ার বাসিন্দা অঞ্জলি মণ্ডল বলেন, “পার্বণের সময় ব্যাঙ্ক থেকে পর্যাপ্ত টাকা পাচ্ছি না। তাই এখনও বাজার করতে পারিনি।’’ অঞ্জলির বাড়িতে ৬ জন সদস্য। ঘর সাজানো থেকে কেক তৈরি, নতুন পোশাক কেনা— সবের জন্যই নগদ টাকার প্রয়োজন। কিন্তু সেটাই যে নেই। এটিএম থেকে দু’হাজারের বেশি মিলছে না।
একই সমস্যার কথা বলছেন হাটচাপড়া কিঙ্গ এডওয়ার্ড হাইস্কুলের প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক তথা চাপড়ার বাসিন্দা বিকাশ মণ্ডল। বলছেন, “এই মাসটা আমাদের খরচ একটু বেশিই হয়। উৎসবের সময় বলে কি না কথা। কিন্তু এ বার হাতে টাকা নেই। বাজার করতে গিয়ে ভাবতে হচ্ছে, কী নেব, আর কী না নিলেও হয়...।’’
কৃষ্ণনগর পোষ্টঅফিস মোড়ে বড়দিনের সময় ঘর সাজানোর উপকরণ বিক্রি করেন কমল নায়েক। তাঁর দাবি, “বড়দিনের সময় প্লাস্টিকের ফুল মালা থেকে শুরু করে ঘর সাজানোর নানা উপকরণ বিক্রি, দীর্ঘদিন ধরে এ কাজ করে আসছি। এ বারে বিক্রি একেবারে কমে গিয়েছে।” কথাটা নেহাত মিথ্যে নয়। অন্য বছরগুলোতে তো এ কথা ক’টা বলারও ফুরসৎ মিলত না।
বড়দিনে কেকের চাহিদাও ফিকে। নোট বাতিলের ধাক্কা লেগেছে বেকারিতেও। কৃষ্ণনগরের মালোপাড়ার এক বেকারির কর্মকর্তা সিলভেস্টার জয় গোমস বলেন, “এক রকম বাধ্য হয়েই বেকারিতে কেক তৈরি কমাতে হয়েছে।”
বহরমপুর মোহনের মোড়ের কাছে এক নামী কেক প্রস্তুতকারক সংস্থার ডিস্ট্রিবিউটর জয় সিংহও বলেন, ‘‘এ বছর কেক কেনার হিড়িক বেশ কম। আমরাও তাই বড়দিন উপলক্ষে কেকের অর্ডার কম দিয়েছি। গত বার যেখানে ২৫০ পাউন্ড অর্ডার দিয়েছিলাম, এ বছর সেখানে দেড়শো পাউন্ডের বেশি অর্ডার দিইনি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy