Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

কেকে একাকার রোজ়ারিও আর শিবু সেন

কৃষ্ণনগরের জন রোজ়ারিওর সঙ্গে নবদ্বীপের শিবু সেনের আশ্চর্য মিল। দু’জনেই প্রায় সমসময়ে নিজের-নিজের এলাকার মানুষকে উৎসবে নতুন স্বাদ উপহার দিয়েছিলেন! সে ছিল বড়দিনের কেকের স্বাদ। 

সন্ধ্যা নামতেই রানাঘাটে জমে উঠল বড়দিনের মেলা। বুধবার। ছবি: প্রণব দেবনাথ

সন্ধ্যা নামতেই রানাঘাটে জমে উঠল বড়দিনের মেলা। বুধবার। ছবি: প্রণব দেবনাথ

দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায় 
নবদ্বীপ শেষ আপডেট: ২৬ ডিসেম্বর ২০১৯ ০১:৫৭
Share: Save:

মেলাবেন তিনি মেলাবেন!

কৃষ্ণনগরের জন রোজ়ারিওর সঙ্গে নবদ্বীপের শিবু সেনের আশ্চর্য মিল। দু’জনেই প্রায় সমসময়ে নিজের-নিজের এলাকার মানুষকে উৎসবে নতুন স্বাদ উপহার দিয়েছিলেন! সে ছিল বড়দিনের কেকের স্বাদ।

কৃষ্ণনগরের খ্রিষ্টান মহল্লায় নিজের বাড়িতে বড়দিনের কেক তৈরি করে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন রোজ়ারিও। অন্য দিকে, নবদ্বীপ প্রসিদ্ধ মিষ্টান্ন শিল্পী শিবু সেন নিজস্ব কৌশলে ছানা ‘বেক’ করে তৈরি করে ফেলেন নিরামিষ ছানার কেক। দু’জনেই অনেক কাল প্রয়াত হয়েছেন। কিন্তু আজও বড়দিনে কৃষ্ণনগরের মঙ্গলাপুকুর, আরসি পাড়ায় রোজ়ারিওর রেসিপি অনুসরণ করে তৈরি হয় ক্রিসমাস কেক। আর নবদ্বীপের মঠমন্দিরে বড়দিনের সন্ধ্যায় দেবতার ভোগে দেওয়া হয় ছানার কেক।

বড়দিনের কেক প্রসঙ্গে কৃষ্ণনগরের খ্রিষ্টান মহল্লার প্রবীণেরা জানাচ্ছেন, সে সময়ে বড়দিনে কেক তৈরি বা খাওয়ার বিশেষ রেওয়াজ ছিল না। পিঠেপুলি, মালপোয়া দিয়েই বড়দিন উদযাপন করা হত। গ্রামের দিকে অনেকে নতুনধানের চিঁড়ে, নলেনগুড়ের মুড়কিও বানাতেন। মঙ্গলাপুকুরের বাসিন্দা এবং রিজিওন্যাল সেক্রেটারি অফ লেইতি কমিশন সমীর স্টিফেন লাহিড়ির কথায়, ‘‘বড়দিনে কৃষ্ণনগরের খ্রিষ্টান মহল্লায় কেকের চল হয় মূলত সাতের দশকের গোড়ায়। শুরুটা করেছিলেন মঙ্গলাপুকুরের বাসিন্দা জন রোজ়ারিও। আরবদেশের কোনও এক পাঁচতারা হোটেলের শেফের কাজ করতেন তিনি। এক বার বড়দিনের ছুটিতে এসে তিনিই প্রথম বাড়িতে কেক তৈরি করলেন। তাক লেগে গেল সবার। সেই শুরু।’’

সমীরবাবুর বলেন, “আমরা তখন ছোট। মনে আছে, বড়দিনের ছুটিতে বাড়ি এসে জন রোজ়ারিও বললেন, ‘‘কেক তৈরি করব।” ময়দা, মাখন, চিনি, ডিম, চেরি, কিশমিশ, মোরব্বা, কোকো, ভ্যানিলা কিনে ঘরে বসেই ফাইভ স্টার হোটেলে শেফ রোজ়ারিও বানিয়ে ফেললেন কেকের মিশ্রণ বা ‘ব্যাটার’। সে সময় আমাদের পাড়ায় একটি বেকারি ছিল। ওই ব্যাটার বেকারিতে বেক করানো হল। ওভেন থেকে বের করার পর অপূর্ব গন্ধে বেকারি ম-ম করতে লাগল। বাদামী রঙের সেই কেক দেখে আর খেয়ে গোটা পাড়া মুগ্ধ হয়ে গেল। ঘরে ঘরে কেক তৈরি শুরু হল। এখন এই এলাকায় বড়দিনে কেক তৈরি হয় না এমন খ্রিষ্টান বাড়ি বিরল।”

কৃষ্ণনগরে বড়দিনের কেকের যদি এই গল্প হয় তবে পড়শি শহর গঙ্গা পাড়ের নবদ্বীপে গল্পটা একটু ভিন্ন। বৈষ্ণব মঠমন্দিরে দেবতাকে ‘আত্মবৎ’ ভজনা করা হয়। তাতে ভক্ত নিজে যে জীবনযাপন করেন আরাধ্য দেবতাকেও সেই মতো পূজার্চনা করা হয়। তাই ভক্ত বড়দিনে কেক খেলে তা ইষ্ট দেবতাকে নিবেদন করেন। কিন্তু ডিম দিয়ে তৈরি কেক দেবতাকে দেওয়া যায় না। সমস্যা সমাধানে এগিয়ে এলেন মিষ্টান্ন শিল্পী শিবু সেন। স্থানীয় ইতিহাস বলছে, নবদ্বীপে প্রথম ছানার কেক তৈরি করেন শিবুবাবু। তা ব্যাপক জনপ্রিয় হয়। মন্দিরের দেবতাকে সেই নিরামিষ কেক দেওয়া হয়। তখনও মায়াপুরে ইস্কন মন্দির গড়ে ওঠেনি।

এখন ইস্কন মন্দিরে বড়দিনে মূলত দেবতাকে ডিমছাড়া তৈরি ফ্রুট কেক দেওয়া হয়। তা তৈরি হয় তাদের নিজস্ব বেকারিতে। নবদ্বীপের ধামেশ্বর মহাপ্রভু মন্দিরে ২৫ ডিসেম্বর সন্ধ্যারতি শেষে দেওয়া হয় কেক। শুধু মহাপ্রভু মন্দির নয়, নবদ্বীপের বেশির ভাগ মঠমন্দিরে বড়দিনে কেক ভোগ দেওয়া ক্রমশ নিয়ম হয়ে উঠছে। নবদ্বীপ প্রাচীন মায়াপুরে মহাপ্রভুর জন্মস্থান মন্দির থেকে শুরু করে মদনমোহন মন্দির, বলদেব মন্দির, হরিসভা সর্বত্র ছবিটা একই রকম।

অন্য বিষয়গুলি:

Christmas Christmas cake
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy