রঘুনাথগঞ্জে গোলমাল থামাতে তৎপরতা পুলিশের। নিজস্ব চিত্র।
নার্সিংহোমে এক রোগিণীর মৃত্যুকে ঘিরে শনিবার সকাল থেকেই রণক্ষেত্রের চেহারা নিল রঘুনাথগঞ্জের গোপালনগর এলাকা।
চা খেতে খেতে হঠাৎই অসুস্থ হয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন নার্সিংহোমে ভর্তি থাকা ওই রোগিণী। অভিযোগ, ওই সময় নার্সিংহোমে কোনও চিকিৎসক ছিলেন না।
সম্প্রতি কোভিড প্রোটোকল ও ম্যানেজমেন্ট টিম জেলার নার্সিংহোমগুলি ঘুরে স্বাস্থ্য দফতরের কাছে যে রিপোর্ট দিয়েছেন তাতে বলা হয়েছে বেশির ভাগ নার্সিং হোমই চলছে সবসময়ের চিকিৎসক ছাড়া। এই মৃত্যুর ঘটনায় তা এবারে প্রকাশ্যে এল।
শনিবারের বিক্ষোভ পরিস্থিতি সামলাতে রিভলভার নিয়ে তাড়া করতে হল পুলিশকে। প্রায় ৫ ঘণ্টা ধরে চলা এই উত্তেজনা সামলাতে ঘটনাস্থলে বিশাল পুলিশ বাহিনী মোতায়েন করতে হয়। ছুটে যান জঙ্গিপুরের এসডিপিও সহ একাধিক পুলিশ কর্তা।
অভিযোগ, চিকিৎসক না থাকার ফলেই তৎক্ষণাৎ চিকিৎসা করা সম্ভব হয়নি ওই রোগিণীর।
মৃতার নাম আকলেমা বিবি (৩০)। শ্বশুরবাড়ি রঘুনাথগঞ্জ লাগোয়া দফরপুর মুড়াপাড়া। বাবার বাড়ি লালগোলা লাগোয়া কৃষ্ণশাইল। গোপালনগরের ওই নার্সিং হোমে গলব্লাডারে পাথর অপারেশন হয় তার গত বুধবার।
এই মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়তেই গ্রাম থেকে তার পরিজন ও প্রতিবেশিরা সহ শতাধিক মানুষ নার্সিংহোমের সামনে জমায়েত হতে শুরু করে। সকাল সাড়ে ৭টা নাগাদ মারমুখী হয়ে তারা নার্সিং হোমের ভিতরে ঢুকে পড়ে।
রোগিণীর স্বামী জিয়াউল শেখের অভিযোগ, ‘‘যে চিকিৎসক স্ত্রীর গলব্লাডার অপারেশন করেন তিনি বুধবারের পর থেকে একটি বারের জন্যও আর নার্সিংহোমে আসেননি। কোনও চিকিৎসক ৪ দিন রোগিণীকে দেখেননি। অপারেশন করে যে সব ওষুধ লিখে দিয়ে যান সেগুলিই চালানো হচ্ছিল। রোগিণীকে রেখে যাওয়া হয় নার্সদের উপর দায়িত্ব দিয়ে। তারই খেসারতে প্রাণ গেছে আমার স্ত্রী আকলেমার। এই গাফিলতির বিচার চাইতেই আমরা নার্সিংহোমে গিয়েছিলাম। কিন্তু ৪ জন নার্স আর রোগীরা ছাড়া সবাই নার্সিংহোম ছেড়ে পালিয়ে যান।”
মৃতার মামা কবিরুল শেখ জানান, ৩০ বছরের এক শক্ত সমর্থ মহিলা হঠাৎ চা খেতে খেতে মরে গেলেন? হার্টের কোনও দোষ কখনও ধরা পড়েনি। তিনি বলেন, ‘‘মৃত্যুর খবর পেয়ে আমরা এসেছিলাম মৃত্যুর কারণ জানতে। কিন্তু নার্সিংহোমে কেউ ছিলেন না ৪ জন নার্স ছাড়া। কিছু যদি গাফিলতি না থাকে তবে নার্সিংহোম ছেড়ে পালাবে কেন কর্মীরা? কেন রোগীদের হঠাৎ প্রয়োজনে নার্সিংহোমে একজন সব সময়ের চিকিৎসক থাকবেন না? নার্সিংহোমের কোনও কর্মীর গায়ে হাত দেওয়া হয়নি। কিন্তু সবাই পালিয়ে গেলেন কেন? নার্সিংহোমের একটি জিনিসপত্র ভাঙচুর করা হয়নি। আমরা পুলিশকে খবর দিইনি। অথচ এদিন কয়েক মিনিটের মধ্যে ঘটনাস্থলে পুলিশ এসে হাজির হয়।”
এদিন সকালে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায় নার্সিংহোমকে ঘিরে রেখেছে শতাধিক মানুষ। চলছে তুমুল বিক্ষোভ। পুলিশ বিক্ষোভকারীদের শান্ত করার চেষ্টা করছে। পুলিশ তাদের এই মৃত্যু নিয়ে লিখিত অভিযোগ জানাতে বলছে। কিন্তু কে কার কথা শোনে। বিক্ষোভ এক সময় চরমে উঠলে মেজাজ হারায় পুলিশও। কোমরের পিস্তল বের করে তাড়া করে বিক্ষোভকারীদের।ভয় পেয়ে এরপরই পিছু হটে বিক্ষোভকারীরা।
মৃতার এক আত্মীয়ের অভিযোগ, এর আগেও বহরমপুরে এক নার্সিংহোমে অপারেশনের সময় বড়ঞার এক কিশোরের মৃত্যুর অভিযোগ ওঠে গোলাম সারোয়ার নামে ওই চিকিতসকের বিরুদ্ধে। ইতিমধ্যেই একটি অভিযোগও জমা পড়েছে তার বিরুদ্ধে মেডিক্যাল কাউন্সিলে।
সব সময়ে চিকিৎসক না থাকার অভিযোগ অস্বীকার করে নার্সিংহোমের মালিক আক্তারুল শেখ জানান, ‘‘মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের চিকিৎসক বুধবার ওই মহিলার গলব্লাডারের পাথর অপারেশন করেন। গত ৪ দিন ভালই ছিলেন। শনিবারই তাকে ছুটি দেওয়ার কথা ছিল। সেই মত প্রস্তুতিও নেওয়া হয়। সকাল ৬টা নাগাদ রোগিণীকে চা দেওয়া হয়। মিনিট দশেকের মধ্যে হঠাৎই মৃত্যু হয় তার। এদিন রোগিণীর পরিজনেরা নার্সিংহোমে চড়াও হয়ে পিটিয়ে কর্মীদের নার্সিংহোম থেকে বের করে দেয়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy