—ফাইল চিত্র।
বড়দিনের মুখে মন খারাপ আট বছরের ছোট্ট এঞ্জেলের। প্রতি বছর তার জ্যাঠা মিন্টু বিশ্বাস বড়দিনে ইরাক থেকে বাড়ি ফেরার সময় এঞ্জেলের জন্য নিয়ে আসতেন বিদেশি পুতুল, চকলেট। কিন্তু গত বছর বড়দিনের ছুটিতে বাড়ি ফেরার পর লক ডাউনের কারণে আর বিদেশে ফিরে যাওয়া হয়নি মিন্টুর। ইরাকের একটি কেটারিং কোম্পানিতে সেফের কাজ করতেন মিন্টু। বছর শেষে বড়দিনের সময় কয়েক মাসের ছুটি নিয়ে বাড়ি ফিরতেন বাড়ির সবার সঙ্গে বড়দিন পালন করার জন্য। এ বছর মার্চে ইরাক ফিরে যাওয়ার কথা ছিল মিন্টুর। কিন্তু বিশ্ব জুড়ে লকডাউনে সব থমকে গেল। জুন-জুলাইয়ের দিকে বিমান পরিষেবা চালু হলে ফিরে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন মিন্টু। কিন্তু খবর পান অতিমারী পরিস্থিতিতে তাঁদের কেটারিং কোম্পানিটি বন্ধ হয়ে গিয়েছে। শেষে কৃষ্ণনগরেই একটি কেক-পেস্ট্রির দোকান দিয়ে সংসারের হাল ধরার চেষ্টা করেন তিনি। মিন্টু বলেন, ‘‘কোনও রকমে সংসার চলছে। এ বছর বড়দিনে অন্য বছরের মতো আনন্দ করা সম্ভব হচ্ছে না।’’
মিন্টু একা নন, কৃষ্ণনগর, রানাঘাটের বেগোপাড়া, চাপড়া-সহ নদিয়ার নানা প্রান্তরের অনেক খ্রিস্টধর্মাবলম্বী যুবক বিদেশে বিভিন্ন পেশায় যুক্ত। বছর শেষে বড়দিনের সময় বেশ কয়েক মাসের দীর্ঘ ছুটি নিয়ে তাঁদের প্রতিবছর ঘরে ফেরা। মিন্টুর ঘটনা একটি উদাহরণ মাত্র। মিন্টুর মতো একই রকম সমস্যায় পড়েছেন আরও অনেকেই। যাঁদের কেউ কেউ আর ফিরতে পারেননি বিদেশে। কেউ বা আবার বিদেশ থেকে ঘরে ফিরে আসতে পারেননি।
চাপড়ার খ্রিষ্টান পাড়ার অমরচন্দ্র মণ্ডল ও তার ভাই অনিমেষ মণ্ডল দু’জনেই এখন আফগানিস্তানে। অমর সেখানে সেনা দফতরে শেফের কাজ করেন। গত জানুয়ারি মাসে তিনি চাপড়া থেকে কাজের উদ্দেশে আফগানিস্থান যান। ফেব্রুয়ারি মাসে চাপড়ার বাড়িতে তাঁর মেয়ে হওয়ার খবর পেয়ে মার্চে বাড়ি আসার প্রস্তুতি নিলেও লকডাউনে ফেরা আটকে যায়। এমনকি, বিশ্ব জুড়ে চলা অতিমারী পরিস্থিতিতে বড় দিনেও বাড়ি ফিরতে পারছেন না অমর বা অনিমেষ কেউই। অমরের স্ত্রী বিদিতা সি মণ্ডল বলেন, ‘‘খুব আশা করেছিলাম বড়দিনে ফিরে মেয়েকে নিয়ে সবাই খুব আনন্দ করব। কিন্তু করোনা পরিস্থিতিতে সব কিছু থমকে গেল।’’ এই করোনা কালে অনেকে দেশে ফেরার পর এখনও কর্মহীন। কৃষ্ণনগরের স্যামুয়েল এন্টোনি রায় ইস্তনিয়ায় একটি রেস্তরাঁয় শেফের কাজ করতেন। বছর শেষে বাড়ি ফেরেন। ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে গিয়েছিল তার। মেয়াদ বাড়িয়ে আবার ইস্তনিয়া ফিরে যাওয়ার ইচ্ছে ছিল। কিন্তু লকডাউনে আটকে গেলেন। স্যামুয়েল বলেন, ‘‘বলা যায় ,এখন আমি বাড়িতে একপ্রকার বেকার বসে আছি। বড় দিনের আনন্দ এ বছর করা সম্ভব নয়।’’ করোনা আবহে অনেক কিছু হারিয়ে একটা গোটা বছর শেষ হতে চলল। সকলেরই আশা আগামী বছর এই কঠিন পরিস্থিতি কাটিয়ে সবাই আনন্দে মেতে উঠবেন। পরম পিতার কাছে এখন সেটাই প্রার্থনা সবার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy