Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪

টিভিতে চোখ, চুপ ফুলশহরী

প্রায় সাড়ে ৬’শো পরিবারের হাজার চারেক মানুষের গ্রামটি সংখ্যালঘু প্রভাবিত। জমি জিরেত বলতে বেশির ভাগেরই কাঠা কয়েক  জমি। দিনমজুরিই গ্রামের মূল পেশা। ধান ওঠার মরসুমেও মাঠের কাজ ছেড়ে আতঙ্কে ছুটে বেড়াচ্ছেন তারা এখানে ওখানে । 

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
সাগরদিঘি শেষ আপডেট: ১৪ ডিসেম্বর ২০১৯ ০১:২৩
Share: Save:

সাগরদিঘির প্রান্ত ঘেঁষা ফুলশহরী তাকিয়ে আছে টিভির দিকে। জেলা পুড়ছে, আতঙ্ক ছড়াচ্ছে প্রতি দিন। আর যার বাড়িতে টিভি আছে, গাঁ ভেঙে পড়েছে সেখানে— সিএবি নিয়ে ফের নতুন কি ফতোয়া এল!

সেই ফতোয়ার আতঙ্কে সদ্য মারা গিয়েছেন গ্রামের কুদরত শেখ। তার জেরে গ্রামে উপর যেন ছড়িয়েছে ভয়ের মেঘ। গ্রামের সাকিব আলি বলছেন, ‘‘ভয় পাওয়া ছাড়া আমাদের আর করার কী আছে বলুন!’’

প্রায় সাড়ে ৬’শো পরিবারের হাজার চারেক মানুষের গ্রামটি সংখ্যালঘু প্রভাবিত। জমি জিরেত বলতে বেশির ভাগেরই কাঠা কয়েক জমি। দিনমজুরিই গ্রামের মূল পেশা। ধান ওঠার মরসুমেও মাঠের কাজ ছেড়ে আতঙ্কে ছুটে বেড়াচ্ছেন তারা এখানে ওখানে ।

গ্রামের পঞ্চায়েত সদস্য তৃণমূলের মাঞ্জারুল ইসলাম বলছেন, “সকলেই ছুটে আসছেন হয় আমার কাছে, না হয় পঞ্চায়েত অফিসে। কিন্তু কোন নথিতে কাজ হবে আমরাই কি ছাই জানি!’’

৬২ বছরের হামিজুদ্দিন শেখ ঠিকমত চলতে ফিরতে পারেন না। বলছেন, “রাতে ঘুম হয় না। খেতে পারছি না। কোনও কাজে মন নেই। সাত পুরুষ ধরে গ্রামে বাস করছি। এই গ্রামেই বাবা, দাদুরা জন্মেছে। আজ আমাকে বাড়ির দলিল, রেশন কার্ড, আধার কার্ডের জন্য ছুটে বেরাতে হচ্ছে?” মইমুর সুলতান বলছেন, “স্বাধীনতার পর ৭০ বছর ধরে এই দেশে বাস করছি। এখন আমাকে নথি দেখিয়ে প্রমাণ করতে হবে, এ দেশের মাটিতে আমার অধিকার কতখানি? বাপ ঠাকুরদার সম্পত্তি। সরকারি ঘরে পরচা আছে। সেটাই তো আমার বড় প্রমাণ আমি এ দেশের মানুষ। আতঙ্ক কাটাতে রাতে টিভি দেখি না।’’

মাধ্যমিক পাস করে এখন চাষাবাদ নিয়েই রয়েছেন গোলাম মেহেবুব। বলছেন, “এনআরসি আর সিএবি নিয়ে রাজনীতি হচ্ছে। একদল আইন পাস করছে, অন্য দল হুমকি দিচ্ছে আইন চালু করতে দেব না বলে। প্রশাসন নির্বিকার। এত অশান্তি আর বাল লাগে না বাবা।’’ বছর পঞ্চাশের ফরিদা বিবি বলছেন, “কয়েক পুরুষ ধরে গ্রামে নিজেদের বাড়িতে বাস করে আসছি আমরা। শ্বশুর রবকুল শেখ মারা গেছেন ৩০ বছর আগে। তার দাদুর আমলের এই ভিটে। তবু এনআরসি আর সিএবি নিয়ে আতঙ্কে আমার গোটা পরিবার।’’

মৃত কুদরত শেখের দোকানের পাশেই চায়ের দোকান জসিমুদ্দিন শেখের। তিনি জানান, আশপাশের গ্রাম থেকে লোকজন বাস ধরার জন্য এখানে এসে বসে। ফুলশহরি-সহ আশপাশের সব গ্রাম শতাধিক বছরের পুরোনো। তবু সবাই যেন একটা ঘোর সঙ্কটের মধ্যে পড়েছে। কারও মুখে হাসি নেই। এর সমাধান কি ভাবে হবে কেউ জানে না।

বস্তুত ফুলশহরী যেন কোনও নির্দিষ্ট গ্রাম নয়, এ যেন গোটা জেলার প্রতিনিধি!

অন্য বিষয়গুলি:

NRC CAB Murshidabad
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy