Advertisement
২৬ ডিসেম্বর ২০২৪

পরিস্থিতি শান্ত না হলে রাস্তায় নামবে না বাস

রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে প্রতিবাদের পাশাপাশি গাড়ি ভাঙচুরও চলেছে। সেই আতঙ্কে বাসকর্মী ও বাস মালিকেরা সব রুটেই বাস চালাতে ভয় পাচ্ছেন, এমনটাই শোনা যাচ্ছে। 

টায়ার জ্বালিয়ে প্রতিবাদ।—ফাইল চিত্র

টায়ার জ্বালিয়ে প্রতিবাদ।—ফাইল চিত্র

কল্লোল প্রামাণিক
করিমপুর শেষ আপডেট: ১৮ ডিসেম্বর ২০১৯ ০১:৪২
Share: Save:

বিভিন্ন জায়গায় রাস্তা অবরোধের জেরে সোমবারের পর মঙ্গলবারও বাস চলাচলের সংখ্যা ছিল খুব কম। করিমপুর-কৃষ্ণনগর রুটে সত্তর শতাংশ বাস চললেও করিমপুর-বহরমপুর রুটে চলাচল করা বাসের সংখ্যা ছিল মাত্র কুড়ি শতাংশ।

সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদে গত শনিবার থেকে বহু জায়গায় পথ অবরোধ করা হয়েছে। রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে প্রতিবাদের পাশাপাশি গাড়ি ভাঙচুরও চলেছে। সেই আতঙ্কে বাসকর্মী ও বাস মালিকেরা সব রুটেই বাস চালাতে ভয় পাচ্ছেন, এমনটাই শোনা যাচ্ছে।

মঙ্গলবার বেতাই-পলাশি-বহরমপুর রুটের বাস চলাচল ছিল সীমিত। এই রুটের বাস মালিক সমিতির সভাপতি সাধন বিশ্বাস বলেন, ‘‘রবিবার বেতাই-বহরমপুর রুটের একটি বাসে মুর্শিদাবাদের রেজিনগর এলাকায় ভাঙচুর করা হয়। সেই কারণে সোমবার সব বাস বন্ধ রাখা হয়েছিল।’’

জানা গিয়েছে, মঙ্গলবার কয়েকটি বাস রাস্তায় নামলেও বিভিন্ন জায়গায় বাস আটকে রাখার মতো ঘটনা ঘটেছে। এর পাশাপাশি বহু জায়গায় বাসকর্মীদের হুমকিও দেওয়া হয়। যে কারণে বাস মালিকেরা জানাচ্ছেন, পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত এবং যথাযথ পুলিশি নিরাপত্তা না পাওয়া গেলে এই মুহূর্তে রাস্তায় বাস চালানো কঠিন হয়ে পড়ছে।

একই অবস্থা করিমপুর-বহরমপুর রুটেও। মঙ্গলবারও এই রুটে হাতেগোনা কয়েকটি মাত্র বাস চলেছে। বেশির ভাগ বাসই রাস্তায় নামেনি। করিমপুরের বাস মালিক চিন্ময় বিশ্বাস, নিলয় মণ্ডলেরা জানাচ্ছেন, মুর্শিদাবাদের বিভিন্ন জায়গায় গণ্ডগোল হওয়ায় রাস্তায় বাস নামাতে ভয় পাচ্ছেন তাঁরা।

তা ছাড়া, এই সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন ঘিরে বিক্ষোভ-অবরোধের জেরে যে অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তাতে বাসকর্মীরা নিজেরাও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। পর পর তিন দিন ধরে যে ভাবে রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় অবরোধ, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগের মতো বিভিন্ন ঘটনা ঘটেছে, তাতে তাঁরা রীতিমতো আতঙ্কিত। বাস চালানোর চেয়ে তাঁরা প্রাণভয়ে ভীত হয়ে সাময়িক ভাবে কাজ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

পরিস্থিতি এমন যে, পুলিশ-প্রশাসনের কাছ থেকে পর্যাপ্ত নিরাপত্তার আশ্বাস না পাওয়া অবধি বাস বন্ধ রাখতে বাধ্য হচ্ছেন বাস মালিকেরাও। রাস্তায় যানবাহন চলাচল কম হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে যাত্রীসংখ্যাও খুব একটা নেই।

বেতাই থেকে তারাপীঠ, বহরমপুর, পলাশি রুটের বাস চালকেরা জানাচ্ছেন, রাস্তায় বাস চালাতে গিয়ে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হলেও যাতায়াত চলছিল।

কিন্তু তাঁদের প্রশ্ন— যদি কোনও নিরাপত্তাই না থাকে, তা হলে বাসকর্মী বা বাস মালিকেরা কোন ভরসায় রাস্তায় বাস নামাবেন বা চালাবেন? তা ছাড়া, উত্তেজিত বিক্ষোভকারীরা আচমকা বাসে চড়াও হলে বা আগুন লাগালে প্রাণসংশয়ও হতে পারে। তাই পরিবেশ পুরোপুরি শান্ত না হওয়া পর্যন্ত এবং প্রশাসনের আশ্বাস না পাওয়া অবধি রাস্তায় বাস চলাচল স্বাভাবিক হবে না।

করিমপুরের এক স্কুলশিক্ষক, যিনি মুর্শিদাবাদের একটি স্কুলে শিক্ষকতা করেন, তিনি এ দিন বলেন, ‘‘আন্দোলনের নামে সরকারি সম্পত্তি নষ্ট করা, বাসে আগুন লাগানো ঠিক নয়। এতে সাধারণ মানুষ সমস্যায় পড়ছেন। অনেকে আতঙ্ক নিয়ে বাড়ির বাইরে বের হচ্ছেন। কিন্তু বেশির ভাগ মানুষ ভয়ে কাজে যেতে পারছে না।’’

কাজে গিয়ে উত্তরবঙ্গে আটকে পড়েছেন তেহট্টের স্কুলশিক্ষক অখিলচন্দ্র সরকার। তাঁর কথায়, “বিশেষ কাজে চার দিন আগে কোচবিহার গিয়েছিলাম। এখানেও বাস-ট্রেন চলাচল বন্ধ। খুব কষ্ট করে সাড়ে তিনশো টাকা ভাড়া দিয়ে একটি গাড়িতে শিলিগুড়ি এসেছি। কিন্তু আর বাড়ি ফিরতে পারছি না।’’

তিনি জানিয়েছেন, বাস কিংবা বিমানের ভাড়া কয়েক গুণ বেশি হয়ে গিয়েছে। তা-ও টিকিট মিলছে না। তাঁর অসহায় আর্তি— ‘‘কী ভাবে বাড়ি ফিরব, বুঝতে পারছি না। খুব বিপদে পড়েছি।”

অন্য বিষয়গুলি:

Violence Protest Citizenship Amendment Act
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy