ফাইল চিত্র
রামমন্দিরের শিলান্যাসের দিন নদিয়ায় প্রায় কোথাও রাস্তায় দেখা গেল না বিজেপিকে। এর একটা কারণ অবশ্যই লকডাউন। তবে নদিয়ার উত্তরাংশে এখনও যে তাদের সাংগঠনিক শক্তি তত বেশি নয়, তা-ও সত্যি। গত লোকসভা ভোটেই প্রমাণ হয়ে গিয়েছে যে দক্ষিণে রানাঘাট মহকুমায় বিজেপি মতুয়া ভোটের জোরে শক্তিবৃদ্ধি করলেও উত্তরে তাদের পথের কাঁটা হয়েছে মুসলিম ভোট। এমনকি হিন্দু ভোটেরও একটা বড় অংশ এখনও তাদের সঙ্গে নেই। আগামী বছর বিধানসভা ভোটের আগে তাই উত্তর নদিয়ায় শক্তিবৃদ্ধি করতে হিন্দুদের একটি মুসলিম-বিরোধী অংশকে সংগঠিত করতে তৃণমূল স্তরে নানা চেহারায় সাংগঠনিক জাল বিস্তার করছে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের (আরএসএস) বিভিন্ন শাখা এবং হিন্দুত্ববাদী সংগঠন। আমপান দুর্নীতি থেকে গোষ্ঠী কোন্দল— নানা কারণে তৃণমূলের প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়ে ওঠা মুসলিম মানুষজনকেও টানার চেষ্টা শুরু করেছে তারা। যে কারণে মুসলিম মুখ হিসাবে মুর্শিদাবাদের বিজেপি নেত্রী মাফুজা খাতুনকে বিজেপির নদিয়া উত্তর সাংগঠনিক জেলার পর্যবেক্ষক করে আনা হয়েছে।
বিশ্ব হিন্দু পরিষদের পাশাপাশি ইতিমধ্যে হিন্দু জাগরণ মঞ্চও সক্রিয় ভাবে কাজ করতে শুরু করেছে নদিয়ায়। ২০১৬ সালে তাদের জেলা কমিটি গঠন করা হয়। তখন একটা ব্লকেও তাদের কমিটি ঠিল না। কিন্তু এরই মধ্যে তারা প্রতিটি ব্লকে কমিটি গঠন করে ফেলেছে। ২০১৮ সালে নদিয়া জেলাকে তিনটি সাংগঠনিক জেলায় ভাগ করেছে তারা। তাদের দাবি, এর মধ্যে কালীগঞ্জ, তেহট্ট-১, নাকাশিপাড়া ও শান্তিপুর ব্লক ও পুরসভা এলাকায় সবচেয়ে বেশি সাংগঠনিক শক্তিবৃদ্ধি হয়েছে। শুধু কালীগঞ্জ ব্লকেই অন্তত ৫০টি গ্রামে সমিতি গড়া হয়েছে। বিশ্ব হিন্দু পরিষদ আবার দু’টি সাংগঠনিক জেলা করেছে। ২০১৮ থেকে তারা কাজ শুরু করলেও তখন তাদের জেলা কমিটি ছাড়া সে ভাবে কিছুই ছিল না। তাদের দাবি, এরই মধ্যে শুধু উত্তর সাংগঠনিক জেলার ১৪টি ‘প্রখণ্ড’তে তারা সমিতি গঠন করে ফেলেছে। সেই সঙ্গে বেশির ভাগ পঞ্চায়েত বা ‘খণ্ড’ এবং গ্রাম বা ‘উপখণ্ডে’ও কমিটি গড়া হয়েছে। প্রতিটি সমিতিতে ১২ থেকে ১৫ জন করে আছেন। সংগঠনের নেতাদের দাবি, মূলত তেহট্ট-১ ও ২ ব্লকের পাশাপাশি চাপড়া, কৃষ্ণগঞ্জ ও নবদ্বীপ ব্লকে শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। উত্তর সাংগঠনিক জেলার সভাপতি প্রদীপ প্রামাণিক দাবি করছেন, "জেলায় এমন কোনও গ্রাম নেই যেখানে আমাদের কোনও কর্মকর্তা নেই।"
একই ভাবে উত্তর জেলার ১০টি ‘প্রখণ্ডে’ তারা সমিতি গঠন করে ফেলেছে বলে দাবি করছে বজরং দল। সেই সঙ্গে, আর এক গণসংগঠন একল বিদ্যালয়ও ১২টি ব্লকে গোড়াপত্তন করেছে বলে দাবি গেরুয়া শিবিরের। ক্রীড়া ভারতী, আরোগ্য ভারতী, রাষ্ট্রীয় সেবিকা সমিতি, দুর্গা বাহিনী, মাতৃ বাহিনীর মতো সংগঠনগুলিও ক্রমশ সক্রিয় হয়ে উঠছে। আরএসএস-এর ছাত্র সংগঠন এবিভিপিও বিভিন্ন কলেজে প্রভাব বিস্তার করেছে। শিক্ষকদের মধ্যে আরএসএস-এর জাতীয়তাবাদী অধ্যাপক ও গবেষক সঙ্ঘ, জাতীয়তাবাদী প্রাথমিক শিক্ষক সঙ্ঘ প্রায় প্রতিটি সার্কেলেই সদস্যসংখ্যা বাড়িয়ে চলেছে এবং জাতীয়তাবাদী মাধ্যমিক শিক্ষক সঙ্ঘও শক্তিসঞ্চয় করছে বলে সঙ্ঘ শিবির দাবি করছে।
মুসলিমদের মধ্যে বিজেপি-ভীতি কাটানোর প্রথম পদক্ষেপ যদি হয়ে থাকে করিমপুরে তৃণমূলের প্রাক্তন ব্লক সভাপতি আফাজউদ্দিনকে দলে টানা, পরের ধাপ মাফুজা খাতুনকে উত্তর সাংগঠনিক জেলার পর্যবেক্ষক করা। করিমপুরের পাশাপাশি চাপড়াল ও ধুবুলিয়ায় কিছু সংখ্যালঘু নেতাকর্মী বিজেপির দিকে ঝুঁকেওছেন। দলের নদিয়া উত্তর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি আশুতোষ পাল অবশ্য দাবি করছেন, "আমাদের দল সংখ্যালঘু বা সংখ্যাগুরু ভাবনায় চলে না। মাফুজা খাতুন দক্ষ সংগঠক। সেই কারণেই তাঁকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।"
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy