Advertisement
২৪ নভেম্বর ২০২৪
BJP

মাথায় আশু, বিগত কমিটি প্রায় নিশ্চিহ্ন

নবগঠিত জেলা কমিটি নিয়ে বিজেপির অভ্যন্তরে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে।

প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

সুস্মিত হালদার
কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০৪:২৬
Share: Save:

বিজেপির উত্তর সাংগঠনিক জেলা সভাপতির পদ থেকে সদ্য অপসারিত মহাদেব সরকারের ঘনিষ্ঠদের কার্যত মুছে ফেলে সংগঠনের রাশ পুরোপুরি নিজের হাতে নিয়ে নিলেন বর্তমান সভাপতি আশুতোষ ঘোষ। তবে, তাঁর প্রথম বার সভাপতি থাকার সময়কার জেলা কমিটিরও তেমন কাউকে সদ্যগঠিত জেলা কমিটিতে দেখা গেল না। বরং নবগঠিত কমিটিতে এমন কয়েকটি মুখ দেখা যাচ্ছে, যারা একেবারেই নতুন। সাংগঠনিক ক্ষেত্রে তাঁদের এত দিন তেমন গুরুত্বপূর্ণ কোনও দায়িত্ব সামলাতে দেখা যায়নি বলে দলেরই একটা অংশের দাবি।

সব মিলিয়ে নবগঠিত জেলা কমিটি নিয়ে বিজেপির অভ্যন্তরে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। যদিও সেই ক্ষোভকে আমল দিতে রাজি নন আশুতোষ-ঘনিষ্ঠেরা। তাঁদের বক্তব্য, এই ব্যাপার একেবারেই নতুন নয়। যখনই যিনি জেলা সভাপতি হয়েছেন, তিনিই ‘নিজের লোকেদের’ জেলা কমিটিতে গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়ে গিয়ে সংগঠনে নিজের কর্তৃত্ব কায়েম করেছেন। যাঁরা বাদ গিয়েছেন বা আশা করেও পদ পালনি, তাঁরা ক্ষোভ প্রকাশ করে এসেছেন। এ বারও সেই ঘটনারই পুনরাবৃত্তি ঘটছে।

আড়াই বছর পদে থাকার পরে, ২০১৮-র জানুয়ারিতে প্রায় আচমকাই অবিভক্ত নদিয়া জেলা কমিটির সভাপতি পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল আশুতোষকে। নদিয়াকে দুটো সাংগঠনিক জেলায় ভাগ করে মহাদেব সরকারকে উত্তর সাংগঠনিক জেলা এবং জগন্নাথ সরকারকে দক্ষিণ সাংগঠনিক জেলার দায়িত্ব দেওয়া হয়। গত লোকসভা নির্বাচনে জগন্নাথ সাংসদ নির্বাচিত হওয়ার পরে তাঁকে জেলা সভাপতি পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু মহাদেব বহাল থেকে যান। ‌তিনি দায়িত্ব পাওয়ার পরে উত্তর সাংগঠনিক জেলায় পঞ্চায়েত ভোটে বড় সাফল্য পেয়েছিল বিজেপি। নদিয়া জেলায় দুটো জেলা পরিষদের আসন দিতে বিজেপি খাতা খোলে। সেই সঙ্গে গ্রাম পঞ্চায়েতের ৫৫৬টি আসনে এবং পঞ্চায়েত সমিতিতে ৫৬টি আসনও পায় তারা।

সেই সময়ে সাংগঠনিক নির্বাচনেও দলের বেশির ভাগ মণ্ডল সভাপতি নির্বাচিত হন মহাদেব-ঘনিষ্ঠরা। সব মিলিয়ে তাঁর অনুগামীরা আত্মবিশ্বাসী ছিলেন যে তাঁকে কোনও ভাবেই পদ থেকে সরানো হবে না। কিন্তু সেই বিশ্বাসে জল ঢেলে মহাদেবকে সরিয়ে আবার দায়িত্বে ফিরিয়ে আনা হয়েছে আরএসএস-ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত আশুতোষকে। সেই সঙ্গে আবার নতুন করে দলের সংগঠনে পালাবদল শুধু সময়েরই অপেক্ষা ছিল। তবে এ ভাবে আগের কমিটিকে কার্যত নিশ্চিহ্ন করে দিয়ে যে আশুতোষ পুরোপুরি নিজের ঘনিষ্ঠদের নিয়ে কমিটি গড়বেন সেটা সম্ভবত কেউই ভাবেননি।

তবে এর পরেও অনেকেই মনে করছেন যে জেলা কমিটিতে মহাদেব-ঘনিষ্ঠদের ফাঁকা করে দিলেও দলের নিয়ন্ত্রণ আশুতোষ পুরোপুরি নিজের হাতে রাখতে পারবেন না। কারণ মণ্ডল থেকে শুরু করে অঞ্চল কমিটির মতো নিচুতলার সংগঠন এখনও পর্যন্ত মহাদেবের নিয়ন্ত্রণে। ফলে দলের সাংগঠনিক কর্মসূচি বাস্তবায়িত করতে গেলে মহাদেব অনুগামীদের উপরেই ভরসা করতে হবে আশুতোষদের। আর তখনই বাধবে সঙ্ঘাত।

জেলা সভাপতির পরে সংগঠনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পদ হল সাধারণ সম্পাদকদের। আগের তিন সাধারণ সম্পাদককে সরিয়ে অর্জুন বিশ্বাস, অপর্ণা নন্দী ও রঞ্জন অধিকারীকে এই পদে বসানো হয়েছে। বিজেপি সূত্রের খবর, এই তিন জন যত না আশুতোষ-ঘনিষ্ঠ তার চেয়েও বেশি মহাদেব-বিরোধী বলে পরিচিত। এর মধ্যে অর্জুন বিশ্বাসের নাম আশুতোষের পাশাপাশি জেলা সভাপতি পদের দৌড়েও ছিল। প্রথম দিকে মহাদেবের কমিটিতে তিনি সাধারণ সম্পাদক পদে থাকলেও পরে তাঁকে সেই পদ থেকে সরিয়ে অপেক্ষাকৃত গুরুত্বহীন সহ-সভাপতি পদে বসানো হয়।

আট জন সহ-সভাপতির সকলেই এ বার নতুন। মহাদেবের কমিটির সাধারণ সম্পাদক পদে থাকা নিলয় সাহাকে অবশ্য অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ সহ-সভাপতি পদে বসানো হয়েছে। আগের কমিটির সম্পাদক পদে থাকা বিভাস মণ্ডলকেও সহ-সভাপতি করা হয়েছে। এ ছাড়া সহ-সভাপতি পদে উল্লেখযোগ্য নাম হল করিমপুরের প্রাক্তন সিপিএম বিধায়ক সমরেন্দ্রনাথ ঘোষ ও তৃণমূল থেকে আসা কৃষ্ণনগরের প্রাক্তন কাউন্সিলর অসিত সাহা। আর আছেন অবিভক্ত নদিয়া জেলা কমিটির প্রাক্তন সভাপতি হারাধন বিশ্বাস।

আবার ৮ জন সম্পাদকের সকলেই নতুন। যাঁদের মধ্যে কয়েক জন আবার দলের সংগঠনে তেমন পরিচিত মুখ নয় বলে কর্মীদের একটা অংশের দাবি। এর মধ্যে অবশ্য আছেন জেলা পরিষদের বিরোধী দলনেত্রী দেবস্মিতা চক্রবর্তী। কেবল মাত্র ট্রেজ়ারার পদে কোন পরিবর্তন হয়নি। দিনেশচন্দ্র সাহাকেই ওই পদে রাখা হয়েছে। সহ-সভাপতির পদ হারিয়েছেন সন্দীপ গঙ্গোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “কেন সে বার মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই আশুতোষ পালকে সরিয়ে দেওয়া হল, আবার এর মধ্যে কী এমন ঘটল যে মহাদেব সরকারের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই তাঁকে সরিয়ে আগের জনকে ফিরিয়ে আনা হল, সেটাই তো বুঝতে পারছি না! তবে পদে থাকি বা না থাকি দলটা করে যাব।”

মহাদেব এই বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। আর আশুতোষ বলেন, “নতুন সভপতি হলে নতুন জেলা কমিটিও তৈরি হয়। যাঁরা দায়িত্বে ছিলেন তাঁরা এবং যারা নতুন দায়িত্ব পেলেন, তাঁরা সকলেই দলের একনিষ্ঠ কর্মী। নতুন-পুরনো বলে কিছু হয় না। সকলে মিলেই তৃণমূলের অত্যাচার থেকে মানুষকে মুক্ত করব।”

অন্য বিষয়গুলি:

BJP Nadia
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy