Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪

ফিরল কৃষ্ণের দেহ, রাম-পথে বিজেপি

চেন্নাইয়ের একটি হোটেলে শেফের কাজ করা কৃষ্ণের মায়ের অভিযোগ ছিল, তাঁকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে গিয়ে পরিকল্পনা করে খুন করা হয়েছে।

নিহত কৃষ্ণ দেবনাথ। নিজস্ব চিত্র

নিহত কৃষ্ণ দেবনাথ। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
নবদ্বীপ শেষ আপডেট: ০৭ জুলাই ২০১৯ ০৪:৪৭
Share: Save:

পুলিশ বলছে, খুনের তদন্তে তারা কোনও রাজনৈতিক কারণ পায়নি। কিন্তু নিহত কৃষ্ণ দেবনাথের দেহ নিয়ে শনিবার দিনভর অবরোধ-বিক্ষোভ চালিয়ে গেল বিজেপি।

বিজেপির দাবি, কৃষ্ণ ‘জয় শ্রীরাম’ বলাতেই বুধবার তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা তাঁকে মারধর করে। যদিও কৃষ্ণর মা পুলিশে দায়ের করা অভিযোগে জানিয়েছিলেন, সে দিনই চেন্নাই থেকে স্বরূপগঞ্জে ফিরে সন্ধ্যায় এলাকার তিন যুবকের সঙ্গে বেরিয়েছিলেন কৃষ্ণ। তাঁদের মধ্যে এক জন কৃষ্ণের সম্পর্কিত ভগ্নিপতি। স্থানীয় সূত্রে পুলিশ জেনেছে, মত্ত অবস্থায় রাতে নিজেদের মধ্যে ঝামেলায় জড়িয়ে পড়েছিলেন কৃষ্ণ ও তাঁর সঙ্গীরা। তবে শনিবার রাত পর্যন্ত পুলিশ কাউকে ধরতে পারেনি।

বৃহস্পতিবার কলকাতায় নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে মারা যান কৃষ্ণ। এ দিন তাঁর দেহ এসে পৌঁছতেই সকাল ৭টা নাগাদ গঙ্গার পূর্ব পাড়ে স্বরূপগঞ্জের ফকিরতলা নবদ্বীপ ঘাট-কৃষ্ণনগর রাজ্য সড়ক অবরোধ করে বিজেপি। পুলিশ দোষীদের ধরার আশ্বাস দিলে ঘণ্টা দুয়েক পরে অবরোধ ওঠে। তার বদলে মৃতদেহ নিয়ে মিছিল করে প্রায় দু’কিলোমিটার স্বরূপগঞ্জ খেয়াঘাটে পৌঁছে ফের অবরোধ করে তারা। বন্ধ হয়ে যায় নবদ্বীপ-স্বরূপগঞ্জের মধ্যে খেয়া চলাচল। এর ঘণ্টাখানেক পরে মৃতদেহ নিয়ে গঙ্গা পেরিয়ে নবদ্বীপ শহরে পৌঁছন বিজেপি নেতাকর্মীরা। বিভিন্ন পথ ঘুরে দেহ নিয়ে যাওয়া হয় শহরের দক্ষিণে তেঘরিপাড়ায়। সেখানে শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের স্মরণ অনুষ্ঠানের এক পাশে দীর্ঘক্ষণ মৃতদেহ শুইয়ে রাখার পরে বিকেল ৪টে নাগাদ সেটি নিয়ে মিছিল যায় নবদ্বীপ থানার দিকে। থানার সামনে দেহ রেখে চলে আর এক প্রস্ত বিক্ষোভ প্রদর্শন। বিজেপি নেতা মুকুল রায়, রানাঘাটের সাংসদ জগন্নাথ সরকারেরাও এসে ঘুরে যান। তার পরেই দেহ দাহ করতে নবদ্বীপ শ্মশানে নিয়ে যাওয়া হয়।

কৃষ্ণ দেবনাথের দেহ নিয়ে নবদ্বীপ থানার সামনে বিক্ষোভ বিজেপির। শনিবার। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য

চেন্নাইয়ের একটি হোটেলে শেফের কাজ করা কৃষ্ণের মায়ের অভিযোগ ছিল, তাঁকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে গিয়ে পরিকল্পনা করে খুন করা হয়েছে। ‘জয় শ্রীরাম’ বলার জেরে কাজিয়া ও খুনের কোনও প্রসঙ্গ তিনি তোলেননি। কিন্তু এ দিন কৃষ্ণের বাবা পাণ্ডব দেবনাথ দাবি করেন, “আমার ছেলেকে ‘জয় শ্রীরাম’ বলার জন্যই তৃণমূলের লোকেরা মেরে ফেলেছে। আমি ছেলের সঙ্গে কলকাতায় ছিলাম। ওর মাকে দিয়ে কে কী লিখিয়েছে, জানি না। আমি আবার নতুন করে অভিযোগ করব।”

সন্ধ্যায় এসে মুকুল দাবি করেন, “মুখ্যমন্ত্রী নিজেই ‘জয় শ্রীরাম’ শুনলে মারতে যাচ্ছেন। জনসমর্থন হারিয়ে খুনের রাজনীতি করছে তৃণমূল। তার ফলেই ‘জয় শ্রীরাম’ বলার অপরাধে এই খুন।” দীর্ঘ দিন বাদে চেন্নাই থেকে ফিরেই কৃষ্ণ হঠাৎ ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনি দিতে যাবেন কেন, তার সদুত্তর অবশ্য মেলেনি। নবদ্বীপের তৃণমূল বিধায়ক পুণ্ডরীকাক্ষ সাহা পাল্টা বলেন, “জয় শ্রীরাম বলার জন্য মারা হয়েছে, এটা ঠিক নয়। তরতাজা যুবকের মৃত্যুতে রাজনৈতিক রং লাগিয়ে ফায়দা তোলার চেষ্টা করছে বিজেপি।”

কৃষ্ণ দেবনাথের স্ত্রী। নিজস্ব চিত্র

শুক্রবার কলকাতায় অমর্ত্য সেন ‘জয় শ্রীরাম’ বাংলার সংস্কৃতি নয় বলে যে মন্তব্য করেছেন সে প্রসঙ্গে মুকুল বলেন, “যাবতীয় শ্রদ্ধা রেখেই বলছি, ভারতীয় সংস্কৃতিতে রামের অবস্থান সম্পর্কে ওঁর ধারণার সঙ্গে একমত নই। ভারতের শ্রী, প্রাচুর্য ও সুশাসনের প্রতীক রাম। উনি সরকারি আতিথ্যে থাকুন, ওঁর মতো বলুন। তার মানেই সেটা শেষ কথা নয়।” নবদ্বীপ থানার সামনে জমায়েতে সাংসদ জগন্নাথ সরকার প্রায় হুমকির সুরে বলেন, “ইতিমধ্যে বাহাত্তর ঘণ্টা কেটে গিয়েছে, কেউ গ্রেফতার হয়নি। পুলিশকে আরও চব্বিশ ঘণ্টা সময় দিয়েছি। তার মধ্যে যদি দোষীরা গ্রেফতার না হলে আমরা আরও বড় আন্দোলনে নামব।” নদিয়ার কৃষ্ণনগর পুলিশ জেলার সুপার জাফর আজমল কিদোয়াই বলেন, “এই ঘটনার সঙ্গে রাজনীতির কোনও যোগ নেই। নিজেদের মধ্যে গোলমালের জেরেই এই মৃত্যু ঘটেছে। অভিযুক্তদের ধরার জন্য বিভিন্ন এলাকায় তল্লাশি চালানো হচ্ছে।”

অন্য বিষয়গুলি:

BJP TMC Jai Shri Ram Murder
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy