রাস্তা অবরোধ। মঙ্গলবার নগরউখড়ায়। নিজস্ব চিত্র
তৃণমূল কর্মীকে গুলি করে খুনের চেষ্টার অভিযোগ উঠল বিজেপির কিছু লোকজনের বিরুদ্ধে। পরে বিজেপি কর্মীদের বাড়িতে পাল্টা চড়াও হয়ে ভাঙচুর চালানো ও আগুন লাগানোর অভিযোগও উঠল তৃণমূলের বিরুদ্ধে।
সোমবার রাতে এই হামলা-পাল্টা হামলার জেরে অশান্ত হয়ে ওঠে হাঁসখালির জয়পুর এলাকা। গুলিবিদ্ধ তৃণমূল কর্মীর নাম দিবাকর সরকার। রক্তাক্ত অবস্থায় তাঁকে শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। তাঁর বুকের মাঝখানে গুলি লেগেছে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে। দলীয় কর্মীদের বাড়ি ভাঙচুর ও আগুন লাগানোর অভিযোগ নিয়ে মঙ্গলবার ঘণ্টা দেড়েক কৃষ্ণনগর-হাঁসখালি রাজ্য সড়ক অবরোধ করে বিজেপি। পরে পুলিশ গিয়ে অবরোধ তুলে দেয়।
ঘটনার সূত্রপাত সোমবার রাত সাড়ে ৯টা নাগাদ। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, লক্ষ্মীপুজো উপলক্ষে গ্রামে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান চলছিল। গ্রামের প্রায় সকলেই অনুষ্ঠান মাঠে হাজির ছিলেন। অনুষ্ঠান মাঠে এসে দিবাকর শোনেন, গ্রামেরই এক জন তাঁকে মারধর করবে বলে হুমকি দিয়ে গিয়েছে। সে আর তার সঙ্গীরা এক বিজেপি সমর্থকের বাড়িতে বসে মদ খাচ্ছে। দিবাকর সেখানে যেতেই শুরু হয় কথা কাটাকাটি। তখনই বাড়ির সামনে বাঁশ বাগানের পাশে অন্ধকার রাস্তায় দিবাকরকে তাক করে আচমকা গুলি চালানো হয়। যে হুমকি দিয়েছিল, সে-ই গুলি চালিয়েছে বলে প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জেনেছে। যদিও মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের হয়নি।
এই হামলার কথা জানাজানি হতেই গ্রামে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। অভিযোগ, তৃণমূলের লোকজন সন্দেহভাজনের বাড়িতে চড়াও হয়ে ভাঙচুর শুরু করে। কেরোসিন তেল ঢেলে ঘরে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। পরে আরও কয়েক জন তৃণমূল থেকে বিজেপিতে যোগ দেওয়া লোকজনের বাড়িতে হামলা হয়। কৃষ্ণনগর থেকে দমকলের একটা ইঞ্জিন গিয়ে আগুন নেভায়। বিরাট পুলিশ বাহিনী গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
ওই রাতে ভাঙচুর হয়েছে বিজেপি কর্মী সুভাষচন্দ্র দাসের বাড়িও। তাঁর অভিযোগ, প্রাক্তন পঞ্চায়েত সদস্য ও বর্তমান সদস্যের স্বামী করুণাকৃষ্ণ মজুমদারের নেতৃত্বে হামলা চালিয়েছে তৃণমূল। যদিও অভিযোগ অস্বীকার করেছেন করুণাকৃষ্ণ। এক বিজেপি সমর্থককে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। কেউ গ্রেফতার হয়নি।
পুলিশ সূত্রের খবর, যার নামে গুলি ছোড়ার অভিযোগ শোনা যাচ্ছে, সে দাগি অপরাধী। কৃষ্ণনগরের ঘোড়াপট্টির কাছে তার একটি বাড়ি আছে এবং কৃষ্ণনগরে সে একাধিক অপরাধমূলক কাজের সঙ্গে জড়িত। একাধিক বার গ্রেফতারও হয়েছে। এর আগে সে তৃণমূলের ছত্রচ্ছায়ায় ছিল। কিন্তু লোকসভা ভোটের আগে হাওয়া বুঝে বিজেপির দিকে ঘেঁষে। তার পর থেকেই গ্রামের পরিস্থতি ভিতরে-ভিতরে উত্তপ্ত হচ্ছিল। তা প্রকাশ্যে আসে গ্রামের পুরনো উদয়ন সঙ্ঘের দখল নিয়ে।
গ্রামবাসীর একাংশের অভিযোগ, দিন কুড়ি আগে বিজেপির লোকজন ক্লাবের নিয়ন্ত্রণ নিতে আসে। ক্লাবের দীর্ঘ দিনের সম্পাদক দীপঙ্কর মজুমদার স্থানীয় পঞ্চায়েতের তৃণমূল সদস্য নমিতা মজুমদারের দেওর এবং করুণাকৃষ্ণের ভাই। গুলিবিদ্ধ দিবাকর করুণাকৃষ্ণের ঘনিষ্ঠ। ক্লাব নিয়ে টানোপড়েনের সময়ে সে দীপঙ্করের পাশে ছিল। সেই কারণেই বিজেপির লোকজনের রাগ তার উপরে গিয়ে পড়ে বলে তৃণমূলের দাবি।
হাসপাতালে শুয়ে দিবাকরও দাবি করেন, “বিজেপির লোকজন ক্লাব দখল করতে চেয়েছিল। আমরা তা হতে দিইনি। সেই কারণেই ওরা আমায় খুন করতে চেয়েছিল। আমি পরেশ সরকারের বাড়ি লক্ষীপুজোর প্রসাদ খেতে গিয়েছিলাম। তখনই ওরা আমায় ডেকে খুনের হুমকি দেয়। আমি প্রতিবাদ করতেই গুলি চালায়।”
তৃণমূলের হাঁসখালি ব্লক সভাপতি শশাঙ্ক বিশ্বাসের দাবি, “বেশ কিছু দিন ধরে বিজেপি ওই গ্রামটা দখল করতে চাইছে। আমাদের কর্মীদের সক্রিয়তায় পেরে উঠছে না। তাই আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি করতে চাইছে।” কিন্তু বিজেপি কর্মীদের বাড়িতে ভাঙচুর করে আগুন ধরানো হল কেন? শশাঙ্কের দাবি, “গ্রামের মানুষ খেপে গিয়েছিল। ওটা আসলে জনরোষ।” রানাঘাট লোকসভা কেন্দ্রের বিজেপি সাংসদ জগন্নাথ সরকার পাল্টা দাবি করেন, “এই ঘটনায় আমাদের কেউ জড়িত নয়। এটা তৃণমূলের গোষ্ঠী কোন্দলের ফল।” রানাঘাট পুলিশ জেলার সুপার ভিএসআর অনন্তনাগ বলেন, “তদন্ত শুরু হয়েছে। প্রয়োজন মতো পদক্ষেপ করা হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy