প্রতীকী ছবি।
আঠারো বছর ধরে মুম্বইয়ে আছি। কোনও দিন মনে হয়নি আমি বাড়ি থেকে দূরে আছি। শহরের লোকজন খুব ভাল। এমনকি লকডাউনের সময় ওই শহরেই আটকে ছিলাম তখনও মনে হয়নি আমি ভিন্ রাজ্যে আছি। বলা যেতে পারে আমি মুম্বই শহরের নাগরিক হয়ে গিয়েছি। বাবা বিড়ি বেধে আর মা কাগজের ঠোঙা বানাত। ওই সামান্য উপার্জনে আমরা দুই বোন ও দুই ভাই মিলে ছয় জনের সংসারে নুন আনতে পান্তা ফুরনোর অবস্থার মধ্যে দিন গুজরান করতে হয়েছে। শৈশবকাল খুব অভাবের মধ্যে দিয়ে পেরিয়েছে। পাড়ায় দু’ দাদার সঙ্গ ধরে আঠারো বছর আগে মুম্বই চলে যাই। প্রথমে মিষ্টির কারখানায় থাকা ও খাওয়া বাদ দিয়ে মাসে আটশো টাকা আয় দিয়ে শুরু হয়। এখন নিজেই মিষ্টির কারখানা খুলেছি। এখন দৈনিক কয়েক হাজার টাকা আয় করি। নিজে বিয়েও করেছি। সংসারে আর্থিক অভাব দূর হয়েছে। পূরণ হয়েছে আমাদের অনেক স্বপ্ন।
এবার মার্চ মাসে বড়ঞা থেকে মুম্বইয়ে গিয়েছিলাম। যাওয়ার কুড়ি দিন পরেই জনতা কার্ফুর মধ্যে দিয়ে দেশ জুরে কোভিড-১৯ রোধ করতে দেশ জুড়ে লকডাউন শুরু হয়। ভেবে ছিলাম লকডাউন উঠে যাওয়ার ফের ব্যবসা শুরু হবে কিন্তু লকডাউন থেকে এখন আনলক শুরু হয়েছে। তার উপর মহারাষ্ট্রের অবস্থা সব থেকে খারাপ। কারখানার কর্মীদের নিয়ে ভালই ছিলাম। কিন্তু কাজ নেই অথচ ভিন রাজ্যে খরচ করে থাকার কোন মানে হয়না। আবার করোনাভাইরাস সংক্রমণের দিন দিন বেড়েই যাচ্ছে। বাড়ি থেকে ফোন করে খোঁজখবর নিলে ভাল আছি বলতাম। জানতেপারি সরকারি ভাবে একটি বাসে আমাদের রাজ্যের শ্রমিকদের বাড়ি পাঠানো হবে। আমিও ওই বাসে উঠে যায়। মুম্বই থেকে ছত্তীসগঢ় পর্যন্ত পৌঁছতে দু’দিন সময় লেগে যায়। সঙ্গে বিস্কুট আর চানাচুর ছিল, তাই রক্ষা পেয়েছি। ওই শুকনো খাবার খেয়েই ছিলাম। তারপর ছত্তীসগঢ় থেকে রায়পুর পর্যন্ত কোন বাস ছিল না। ওই এলাকার পুলিশ রাস্তায় দিয়ে যাওয়া কয়লা বোঝাই একটি ট্রাকে আমাদের ৪০ জনকে চাপিয়ে দেয়। তাও আবার তিন ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকার পর ওই ট্রাক পেয়েছিলাম। দেড়শো কিলোমিটার ট্রাকে যাওয়ার পর ওড়িশা পৌঁছই। সেখানে লাইন দিয়ে ভাত আর তরকারি খেয়ে ফের পাঁচ ঘণ্টা বসে থাকার পর একটি মিনিবাসে গাদাগাদি করে আমাদের তুলে নিল, এমনকি বাসের ছাদেও যাত্রী তোলা হয়। খড়্গপুরে পৌঁছে দেওয়ার পর তিন ঘণ্টা বসে থাকার পর একটি বাস আমাদের জেলার জন্য বরাদ্দ হয়। ওই বাসে ওঠার সময় ২০০ গ্রাম মুড়ির প্যাকেট আর একটি পেঁয়াজ দিয়েছিল। এতো দিন যাতায়াত করছি এত কষ্ট কোনও দিন পাইনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy