নিজস্ব চিত্র
ওরা কেউ নিজের জন্মদিন, দিন-তারিখ-সন জানে না। আবার, মেয়ে কবে জন্মেছে তা-ও মনে নেই কারও বাবা-মায়ের। যে কারণে কোনও দিন ওদের বাড়িতে ঘটা করে জন্মদিন পালন করা হয়নি। এ বার সেই সব মেয়ের জন্মদিন পালন করলেন স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারা।
মঙ্গলবার স্কুলের দশ জন ছাত্রীকে নিয়ে একসঙ্গে ‘বার্থ ডে কেক’ কেটে মেয়েগুলির জন্মদিন পালন করা হল। করিমপুর ১ ব্লকের পিপুলবেড়িয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে এই অভিনব আয়োজন করা হয়েছিল। স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত লাগোয়া প্রত্যন্ত এলাকার ওই স্কুলে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে হাতেগোনা কয়েক জন ছাড়া প্রায় সকলেই খুব গরিব পরিবারের সন্তান। পড়ুয়াদের অভিভাবকেরা কেউ দিনমজুর, কেউ আবার কৃষিকাজ করেন। ওই সব বাড়িতে কখনও-সখনও ছেলে সন্তানদের জন্মদিন পালন হলেও মেয়েরা বরাবরই বঞ্চিত থেকে গিয়েছে। মেয়ে বলে সামাজিক ভাবে অবহেলা, তার উপরে গরিব ঘরের মেয়ে— এই দোষে ওরা জন্মদিন পালনের আনন্দ থেকে সব সময়েই দূরে থেকেছে। এ বার সেই মেয়েদের কথা ভাবলেন তাদের স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারা।
স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, মিড ডে মিল কমিটির সঙ্গে আলোচনা করে এই জন্মদিন পালনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ঠিক হয়েছে একটি মাসে পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণির যে সব স্কুলছাত্রীর জন্মদিন, সেই মাসের ১৪ তারিখে স্কুলে তারা সবাই একসঙ্গে একটি বড় কেক কাটবে। এবং স্কুলের সকল ছাত্রছাত্রীদের সে দিন মিড ডে মিলে বিশেষ পদ খাওয়ানো হবে। জন্মদিনের খাওয়াদাওয়া মিড ডে মিলের বরাদ্দ থেকেই হবে আর বার্থ ডে কেক ও মিষ্টির খরচ বহন করবেন শিক্ষক-শিক্ষিকা ও কমিটির সদস্যেরা।
স্কুলের প্রধান শিক্ষক পার্থপ্রতিম তেওয়ারি জানান, স্কুলের পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণিতে বর্তমানে ১৫৬ জন ছাত্রী-সহ মোট ৩১৮ জন পড়ুয়া রয়েছে। তাদের মধ্যে দশ জন ছাত্রীর জন্মদিন জানুয়ারি মাসে। আগাম সিদ্ধান্ত মাফিক, মঙ্গলবার স্কুলে ওই ছাত্রীদের নিয়ে কেক কাটা ও সকলে মিলে একসঙ্গে খাওয়াদাওয়া করা হল। স্কুল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, এখন থেকে বছরের প্রতি মাসের ১৪ তারিখ সেই মাসে জন্মানো ছাত্রীদের জন্মদিন পালিত হবে স্কুলে। ওই তারিখে ছুটির দিন বা রবিবার পড়লে তার আগের দিন এই জন্মদিন পালন করা হবে।
এ দিন জন্মদিন উপলক্ষে বিশেষ পদ ছিল— সাদা ভাত, আলুর তরকারি, ভেজ ডাল, ভাজা ও ডিমের ঝোল। শেষ পাতে চাটনি ও রসগোল্লা।
স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারা বলছেন, “স্কুলের বেশির ভাগ মেয়েরা পিছিয়ে পড়া। স্কুলের সঙ্গে তাদের আরও নিবিড় সম্পর্ক তৈরি করতেই এই উদ্যোগ। খেলাধুলো বা অন্য কারণে ছেলেরা স্কুলের অনেক কাছাকাছি এলেও মেয়েরা তা ছিল না। এ বার সেটা হবে বলেই আশা করছি।”
স্কুলের এমন অভিনব উদ্যোগে বেশ খুশি ছাত্রীরা। মঙ্গলবারে যাদের জন্মদিন পালিত হয়েছে, সেই আসিফা খাতুন ও প্রিয়া মণ্ডল বলছে, “সিনেমা বা টেলিভিশনে জন্মদিনের অনুষ্ঠান দেখেছি। কিন্তু আমাদের বাড়িতে জন্মদিনের অনুষ্ঠানের কথা কেউ ভাবতেই পারে না। স্যর, ম্যাডামেরা যে ভাবে আমাদের জন্য অনুষ্ঠান করেছেন, তাতে আমরা খুব খুশি।’’
আর আসিফার মা মমতা বেগম বলছেন, “মেয়ের বারো বছর বয়স হয়ে গেল। কখনও ওর জন্মদিন পালন করা হয়নি। স্কুলের এমন ভাবনা প্রশংসার যোগ্য।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy