ধৃত সুমন্ত সেন।
মুর্শিদাবাদের ভরতপুরে সার ব্যবসায়ী খুনের ঘটনায় ধৃত ‘ছায়াসঙ্গী’কে জেরার পরেই রহস্যের জট খুলতে শুরু করেছে। প্রাথমিক তদন্তে ব্যবসায়িক সঙ্ঘাতের জেরে খুনের তত্ত্ব জোরালো হলেও ধীরে ধীরে ব্যক্তিগত আক্রোশের বিষয়টি প্রকট হয়ে উঠছে বলে তদন্তকারীদের একটি সূত্রের দাবি। পুলিশের একটি সূত্রের দাবি, কাজল দত্তকে খুনের কথা জেরায় স্বীকার করে নিয়েছেন তাঁর প্রাতর্ভ্রমণের সঙ্গী সুমন্ত সেন। যদিও এ ব্যাপারে পুলিশ সরকারি ভাবে কিছু জানায়নি। মুর্শিদাবাদ জেলা পুলিশের সুপার কে শবরী রাজকুমার বলেন, ‘‘অভিযুক্তকে সবে পুলিশ হেফাজতে পাওয়া গিয়েছে। ওঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তদন্তের গতিপ্রকৃতি সম্পর্কে পরে জানানো হবে।’’
শনিবার ভোর সাড়ে ৪টে নাগাদ রোজকার মতো প্রাতর্ভ্রমণে বেরিয়ে খুন হন কাজল। তাঁর শরীরে ধারালো অস্ত্রের একাধিক আঘাতের চিহ্ন ছিল। পুলিশ সূত্রে খবর, ঘটনার পর সুমন্ত কাজলের পরিবারকে জানান, সন্ধিপুরের বিল পার হতেই দু’জন মুখোশ পরে মোটরবাইকে করে এসে কাজলের উপর হামলা চালান। ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাথাড়ি কোপ মারতে থাকেন। ঘটনাস্থলে রক্তাক্ত অবস্থায় লুটিয়ে পড়েন কাজল। ঘটনার আকস্মিকতায় দিশাহীন হয়েই ছুটে পালিয়ে এসেছেন সুমন্ত। তাঁর এই বয়ানেই সন্দেহ হয় কাজলের পরিবারের। তদন্তকারীদের একটি সূত্রের দাবি, বয়ানে বেশ কিছু অসঙ্গতি ধরা পড়ায় সুমন্তকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
সুমন্তকে নিজেদের হেফাজতে পাওয়ার পরেই জেরা করা শুরু করেন তদন্তকারীরা। তাঁদের একটি সূত্রের দাবি, সুমন্ত খুনের কথা কবুল করেছেন ঠিকই, কিন্তু খুনে ব্যবহৃত অস্ত্র তিনি কোথা থেকে পেলেন, সেই অস্ত্র এখন কোথায়, কাজলের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ার সময় ঠিক কী ঘটেছিল, এ সব ব্যাপারে বিশদে কিছুই বলেননি তিনি। এক তদন্তকারী জানিয়েছেন, সুমন্ত যে হেতু প্রাতর্ভ্রমণে বেরিয়ে খুন করেছেন, তা থেকে তাঁদের অনুমান, ওই খুনটি কোনও আকস্মিক ঘটনা নয়। একেবারে পরিকল্পনা করে কাজলকে খুন করেছেন সুমন্ত।
কিন্তু কেন? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে সুমন্তকে জেরা করে তদন্তকারীরা তাঁর স্ত্রীর সঙ্গে কাজলের বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কের কথা জানতে পেরেছেন বলে তদন্তকারীদের সূত্রে জানা গিয়েছে। তবে ওই দাবি কতটা সত্য, তা যাচাই করে দেখা হচ্ছে বলেই জানিয়েছেন তদন্তকারীদের ওই সূত্র।
নিহতের পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, কাজল ও সুমন্তের বন্ধুত্ব দীর্ঘ দিনের। এলাকার মানুষ দু’জনকে একে অপরের পরিপূরক হিসাবেই জানেন। বাজারে কাছাকাছি দোকান দু’জনের। প্রাতর্ভ্রমণ থেকে শুরু করে রাতে বাড়ি ফেরা, সুমন্ত কাজলের ছায়াসঙ্গী ছিলেন। তাঁর সঙ্গে এমন ‘বিশ্বাসঘাতকতা’ মানতে না পেরেই কি সুমন্ত কাজলকে খুন করেছেন? এ প্রশ্নের জবাবও খুঁজছে পুলিশ। সুমন্তের স্ত্রী অবশ্য বলছেন, ‘‘আমার স্বামী দীর্ঘ দিন ধরে মানসিক সমস্যায় ভুগছিলেন। টানা সাত বছর ধরে বিভিন্ন চিকিৎসকের কাছে ওঁর মনোরোগের চিকিৎসা চলছিল। গত তিন মাস আগে আচমকাই সেই চিকিৎসা বন্ধ করে দেন সুমন্ত।’’
এই ঘটনা প্রসঙ্গে বহরমপুর মেডিক্যাল কলেজের মনোরোগ বিভাগের বিভাগীয় প্রধান রঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘প্রাথমিক ভাবে মনে হচ্ছে, সুমন্ত কোনও সাইকোটিক ডিসঅর্ডারে আক্রান্ত। সাইকোসিস ডিলিউশন কিংবা বাইপোলার ডিজঅর্ডারের মতো রোগের আশঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। আবেগ নিয়ন্ত্রণে রাখতে না পেরেই ওই ঘটনা ঘটিয়েছেন। স্ত্রীর সঙ্গে বন্ধুর সম্পর্কের কথা সত্যি হলে তীব্র প্রতিশোধ স্পৃহা থেকেই সুমন্তবাবু ওই কাণ্ড ঘটিয়ে থাকতে পারেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy