সুশান্তকে নিয়ে সুতপা হত্যাকাণ্ডের পুনর্নির্মাণ। গ্রাফিক: সনৎ সিংহ
ঘণ্টা দেড়েকের পুনর্নির্মাণ। তাতেই তদন্তকারীদের কাছে স্পষ্ট হয়ে গেল কী ভাবে কলেজ ছাত্রী সুতপা চৌধুরীকে খুন করেছিল ‘খুনি’ সুশান্ত চৌধুরী। সিসি ক্যামেরায় ধরা পড়া ছবিতে যে ভাবে সুতপাকে খুন করতে দেখা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার ভোরে ঠিক সে ভাবেই হত্যাকাণ্ডের ‘অভিনয়’ করে দেখাল সুশান্ত।
বৃহস্পতিবার ভোর পাঁচটা নাগাদ সুশান্তকে নিয়ে বহরমপুর থানার ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক রাজা সরকারের নেতৃত্বে তদন্তকারী দল শহরের গোরাবাজার এলাকায় সুইমিং পুলের গলিতে যায়। সেখানে দেড় ঘণ্টা ধরে চলে ঘটনার পুনর্নির্মাণ। তদন্তকারীরা একাধিক প্রশ্নের উত্তর চান। প্রশ্নগুলি ছিল: সুতপাকে খুন করতে সোমবার সন্ধ্যায় কোন পথে সুশান্ত ঘটনাস্থলে পৌঁছেছিল? গলির কোন জায়গায় সে সুতপার জন্য অপেক্ষা করছিল? সুতপা যখন তার সামনাসামনি আসেন, তখন সে কী ভাবে উপস্থিত হয়েছিল? সুতপার উপর কী ভাবে সে আক্রমণ চালিয়েছিল? সুতপাকে খুনের পর কোন গলি দিয়ে, কী ভাবে সে পালিয়ে গিয়েছিল? সুশান্ত পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে গোটা ঘটনাটাই ‘অভিনয়’ করে দেখিয়ে দেয়। সম্পূর্ণ হয় সুতপা খুনের পুনর্নির্মাণ।
সুশান্ত জানিয়েছে, গলিতে প্রায় ৪০ মিটার হেঁটে যখন সুতপা নিজের মেসের গেটে পৌঁছন, তখনই সুশান্ত তাঁকে ‘সুতপা শোনো…’ বলে পিছন থেকে ডাকে। সুশান্ত এ-ও বলেছে, সেই সময় তার মুখে মাস্ক ছিল। তাই প্রথমে সুতপা তাকে চিনতে পারেননি। এর পর সে মাস্ক নামাতেই সুতপা তাকে দেখে আঁতকে ওঠেন বলেও জানিয়েছে সুশান্ত। তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, সুশান্ত এর পর এক মুহূর্তও সময় ‘নষ্ট’ করেনি। সুতপার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে পর পর তিন বার ছুরির আঘাত করে। সুতপার চিৎকার শুনে আশপাশের লোকজন ছুটে আসার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু সুশান্ত নকল বন্দুক দিয়ে সকলকে ভয় দেখায়। এর পর সে ছুটে পাঁচিল টপকে পাশের গলিতে চলে যায়। তদন্তকারীদের মতে, সুতপার মেস সংলগ্ন এলাকা হাতের তালুর মতো চিনে নিয়েছিল সুশান্ত। তাতেই তার পালানো সহজ হয়। খুনের পর ব্যাঙ্কের রাস্তা দিয়ে সে পালিয়ে যায় জাজ কোর্ট মোড়ের দিকে। পালানোর সময় টোটো ভাড়া করেছিল সুশান্ত। টোটোয় চড়ে সে ফিরে যায় গোরাবাজারের মেসে। সেখানে রক্তমাখা টি শার্ট বদলে পরে নেয় অন্য জামা। এর পর ব্যাগ নিয়ে ওই একই টোটোয় চড়ে সে পৌঁছে যায় কান্দি বাসস্ট্যান্ডে। টোটো ড্রাইভারকে সে ৫০ টাকা ভাড়া দিয়েছিল বলেও জেরায় জানিয়েছে সুশান্ত।
তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, পুনর্নির্মাণ প্রক্রিয়ায় সুশান্ত পুলিশকে সম্পূর্ণ সহযোগিতা করেছে। খুন কী ভাবে হয়েছিল, তা সিসি ক্যামেরার ফুটেজ পরীক্ষা করে আগেই জানতে পেরেছিলেন তদন্তকারীরা। তাঁদের মতে, সুশান্ত সেই ফুটেজ অনুযায়ীই বর্ণনা দিয়েছে পুনর্নির্মাণের সময়।
তদন্তকারীরা আরও জানিয়েছেন, গত কয়েক দিন বিমর্ষ থাকলেও, সুশান্তকে বৃহস্পতিবার অনেকটাই চনমনে লেগেছে। ঘটনাপ্রবাহের সঙ্গে সে অনেকটা ধাতস্থ হয়ে উঠেছে বলেই মনে হয়েছে তদন্তকারীদের। পুলিশ আধিকারিকদের সঙ্গে বার বার কথাও বলেছে পুনর্নির্মাণ চলাকালীন। তবে পুলিশ হেফাজতে এখনও পর্যন্ত তার পরিবারের কোনও সদস্য দেখা করতে আসেননি। তেমনই তদন্তকারীরা জানাচ্ছেন, পরিবারের কথাও বড় একটা শোনা যায়নি সুশান্তর মুখে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy