Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

ভোরের শিউলিতে ছেলের স্পর্শ খোঁজেন তিনি

গত বার পুজোয় সৈকত শাড়ি কেনেননি মায়ের জন্য। বলেছিলেন, একটা বড় কাঠের সিংহাসন বানিয়ে দেবেন। রনিতাদেবীর অনেক দিনের ইচ্ছে ছিল একটা বড় কাঠের সিংহাসনের। মায়ের সাধ পুরণ করেছিলেন সৈকত।

সৈকতের মা, দিদি ও ভাগ্নে। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য

সৈকতের মা, দিদি ও ভাগ্নে। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য

সুস্মিত হালদার
কৃষ্ণনগর  শেষ আপডেট: ০৩ অক্টোবর ২০১৯ ০২:৩৯
Share: Save:

বারান্দার এক কোণে ছোট্ট কাঠের সিংহাসনের উপরে একাধিক দেবদেবীর ছোট-বড় ছবি। ছবির সামনে সাজিয়ে রাখা শিউলি ফুল। ছেলেটা শিউলি ফুল খুব ভালবাসত। বাড়ির উঠোনের গাছের তলা থেকে শিউলি ফুল কুড়িয়ে এনে রোজ ঠাকুরকে দেন রনিতাদেবী। আসলে এই ফুলের মধ্যে দিয়ে যেন প্রতিদিন সকালে ছেলেকে স্পর্শ করার চেষ্টা করেন।

গত বার পুজোয় সৈকত শাড়ি কেনেননি মায়ের জন্য। বলেছিলেন, একটা বড় কাঠের সিংহাসন বানিয়ে দেবেন। রনিতাদেবীর অনেক দিনের ইচ্ছে ছিল একটা বড় কাঠের সিংহাসনের। মায়ের সাধ পুরণ করেছিলেন সৈকত। কিন্তু সেই সিংহাসন তৈরির পর নিজের হাতে বাড়ি আনতে পারেননি। তার আগেই চির দিনের মতো হারিয়ে গিয়েছিলেন।

একটি আর্থিক সংস্থায় চাকরি করতেন সৈকত ঘোষ। গত বছর ৫ ডিসেম্বর। সবে সন্ধ্যা ঘনিয়েছে। শান্তিপুর থেকে বকেয়া টাকা আদায় করে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে কৃষ্ণনগর ফিরছিলেন। আচমকা পথ আটকায় দুষ্কৃতীরা। টাকার ব্যাগ নিয়ে টানাটানি। অভিযোগ, শেষ পর্যন্ত প্রকাশ্য রাস্তায় তাঁকে গুলি করে টাকার ব্যাগ নিয়ে চম্পট দেয় ছিনতাইকারীরা। তদন্তে নেমে পুলিশ তিন জনকে গ্রেফতার করে।

বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গিয়েছে। কিন্তু মা কী ভাবে জীবন কাটাবেন? আপ্রাণ চেষ্টা করেন সংসারের কাজের মধ্যে ডুবে থাকতে। তবুও ক্ষণে ক্ষণে কে যেন কানের কাছে ‘মা’ বলে ডেকে যায়। চমকে ওঠেন রনিতাদেবী। বিশেষ করে পুজো বা যে কোনও উৎসবে বুকটা মুচড়ে ওঠে তাঁর। চার পাশ যেন ঘোলাটে হয়ে যায়। ঘূর্ণির কুমোরপাড়ার বাসিন্দা সৈকতের বাবা অমিয়শঙ্কর ঘোষ ছিলেন বাসচালক। অভাবের সংসার। স্বপ্ন দেখতেন, ছেলে বড় হয়ে সুখের দিন আনবে। একাদশ শ্রেণিতে পড়ার সময় টেলিফোন বুথে কাজ নিয়েছিলেন সৈকত। ২০১৫ সালে গাড়ির ফাইনান্স কোম্পানিতে চাকরি পান। সেই বছরেই মারা যান বাবা।

বাড়িতে একটু স্বাচ্ছন্দ আনতে সারাদিন ছুটে বেড়াতেন সৈকত। একটু-একটু করে সুখের মুখও দেখতে শুরু করেছিলেন রনিতাদেবী। কিন্তু কিছু দিনের মধ্যেই সব শেষ হয়ে গেল। তাঁর কথায়, “শুধু রবিবার দুপুরে নানান রকম তরকারি দিয়ে তার খেতে দিতে হত। সপ্তাহে একটা দিন। বাকি দিন গুলোতে সময়ই পেত না।”

বছর ঘুরে ফের পুজো এসেছে। বাড়ির পাশেই পাড়ার পুজোর মন্ডপ। গান ভেসে আসছে। রাতে আলোর রোশনাই। পুজোয় এই সব কিছুর থেকে পালাতে চান তিনি। একমনে ডুবে থাকতে চান অতীতের সুখস্মৃতিতে। সেই যে গত নবমীতে সৈকত এসে বলেছিলেন, ‘মা, জমিয়ে খাসির মাংস রান্না করো তো!’’ সেই স্বর, সেই আব্দারে সঙ্গে করে কাটিয়ে দিতে চান পাঁচটা দিন।

অন্য বিষয়গুলি:

Krishnanagar Bereaved Mother
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy