প্রতীকী ছবি।
রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা ‘উন্নয়ন’ পঞ্চায়েত ভোটে বিপদে ফেলেছে ছাপাখানা মালিকদের। অন্য বার ভোটের মুখে এ সময় নাওয়া খাওয়ার সময় থাকে না ওঁদের। ফ্লেক্স বা ব্যানারের সাইজ বা লিফলেটের প্রুফ সংশোধন অথবা সময় মতো পোস্টার ডেলিভারি দেওয়া নিয়ে কালঘাম ছুটে যায় ছাপাখানার মালিক থেকে কর্মচারী সকলের। রাতে কয়েক ঘণ্টা ঘুমের সময়টুকু বাদ দিলে সারা দিন মেশিন চলছেই।
এবারে ছবিটা সম্পূর্ণ অন্য রকম! শাসক দলের দাপটে পঞ্চায়েতের ময়দানে বিরোধীরা নেই বললেই চলে। অধিকাংশ জায়গায় বিরোধীরা মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারেননি। যেখানে অন্যরা তা জমা দিয়েছেন সে সব জায়গায় চাপের মুখে লড়াইয়ে কত জন টিকে থাকতে পারবেন তা নিয়েও যথেষ্ট সংশয় রয়েছে খোদ বিরোধী দলের মধ্যেই। মনোনয়ন পর্ব মিটে যাওয়ার পরেও বহু জায়গায় প্রার্থীরা ফ্লেক্স ব্যানার ছাপতে চাইছেন না। যদি প্রচার করতে গিয়ে শাসক দলের রোষে পড়তে হয়।
স্বাভাবিক ভাবে এই পরিস্থিতিতে শাসক-বিরোধী কোনও পক্ষই ভোট প্রচার নিয়ে মাতামাতি করতে চাইছেন না। নবদ্বীপের এক ছাপাখানা মালিক শ্যামল দে তিন দশকের ব্যবসায়ী জীবনে এমন কর্মহীন ভোট আগে দেখেননি। অন্য বারের তুলনায় অর্ডার অর্ধেকেরও কম। শ্যামলের কথায়, “সবচেয়ে বেশি অর্ডার হয় পঞ্চায়েত ভোটেই। ফ্লেক্স ব্যানারের কথা ছেড়েই দিলাম পঞ্চায়েত ভোটের সময় লিফলেট, প্রার্থীদের জীবনপঞ্জি সংবলিত প্রচার-পুস্তিকা, পাঁচ বছরের সাফল্যের খতিয়ান এমনকী গ্রামের মানুষকে বোঝাবার জন্য ব্যালটের নমুনা পর্যন্ত ছাপতে হত। কিন্তু এ বার শাসক-বিরোধী কোনও দলের কর্মীরা ওই সব নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছেন না।” আবার করিমপুরের ফ্লেক্স নির্মাতা বাপ্পাদিত্য চৌধুরী, তীর্থঙ্কর বিশ্বাসেরা কয়েক লক্ষ টাকার কাঁচামাল তুলে বেকুব বনেছেন। চার ভাগের এক ভাগও কাজে লাগেনি, আদৌ কাজে লাগবে কিনা তা নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। ফ্লেক্সের কাপড় এবং ছাপার কালি মিলিয়ে প্রায় চার লক্ষ টাকার জিনিস স্তূপাকার হয়ে আছে তাঁদের প্রেসে।
নদিয়াতে যাও-বা কাজ হচ্ছে, পাশের জেলা মুর্শিদাবাদে ব্যসায়ীদের অবস্থা আরও করুণ! পঞ্চায়েত ভোটের মুখে ডোমকল, ইসলামপুরের মতো অনেক জায়গায় আক্ষরিক অর্থেই তালাবন্ধ ছাপাখানা। পঞ্চায়েত ভোটের কথা মাথায় রেখে ব্যাঙ্ক ঋণ নিয়ে ফ্লেক্স ছাপার মেশিন কেনেন ডোমকলের নবাব আলি। প্রায় বারো লক্ষ টাকা দামের মেশিন কিনে অথৈ জলে পড়েছেন তিনি। তাঁর কথায়, “কাজ হলে পঞ্চায়েত ভোটেই মেশিনের দাম উঠে যেত। কিন্তু এ বার কাজ কই? কিস্তির টাকা কী করে শোধ হবে সেই চিন্তা করছি।” প্রায় একই কথা বলেন ইসলামপুরের ব্যবসায়ী রাজেশ সরকার। প্রায় তেরো লাখ টাকা দিয়ে ফ্লেক্স ছাপার যন্ত্র কিনেও তালা বন্ধ করে রাখতে হচ্ছে। কাজ নাই। সে টাকা কী করে তুলবেন তাই ভেবে তাঁর মাথায় হাত।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy