অলোক তালুকদার। নিজস্ব চিত্র
ভুল বুঝিয়ে ফর্মে সই করিয়ে নেওয়া হয়েছিল গ্রামের বেশ কয়েক জনকে। তার পরে তাঁদের নামে অনুমোদন হয়ে আসা ঋণের টাকা আত্মসাতের অভিযোগে এক রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের ম্যানেজারকে গ্রেফতার করল পুলিশ। মুর্শিদাবাদের ফরাক্কা থানার পুলিশ সোমবার পূর্ব বর্ধমানের কালনা থেকে অলোক তালুকদার নামে ওই আধিকারিককে ধরে।
অলোকবাবু এখন ওই ব্যাঙ্কের কালনা নিভুজিবাজার শাখার ম্যানেজার। ২০১৩ সালে ফরাক্কায় যখন জালিয়াতির ঘটনাটি ঘটে বলে অভিযোগ, তিনি তখন সেখানকার পলাশি গ্রামে ব্যাঙ্কের বেওয়া শাখার ম্যানেজার ছিলেন। ব্যাঙ্ক সূত্রে জানা যায়, ফরাক্কার নিশিন্দ্রা গ্রামের ৪৪ জন বাসিন্দার নামে ৫৩ লক্ষ ৬৮ হাজার টাকা ঋণ নেওয়া হয়েছিল বেওয়া শাখা থেকে। কিন্তু, পাঁচ বছর ধরে তাঁদের কেউ কোনও কিস্তি জমা না দেওয়ায় গত ২৫ জুন অনাদায়ী ঋণের নোটিস ধরাতে গ্রামে যান ব্যাঙ্কের এক কর্মী। তখনই বাসিন্দারা দাবি করেন, যাঁদের নামে ঋণ রয়েছে বলে জানানো হচ্ছে, তাঁরা কেউ বিড়ি শ্রমিক, কেউ ভ্যানচালক, কেউ আবার দিনমজুর। তাঁরা ঋণ নেননি।
পর দিনই ব্যাঙ্কের সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ দেখান গ্রামবাসীরা। চৈতন্য মণ্ডল নামে এক বাসিন্দা ফরাক্কা থানায় গোটা ঘটনা জানিয়ে অভিযোগ করেন। তাতে জানানো হয়, ২০১৩ সালে সরকারি অনুদান পাইয়ে দেওয়ার নাম করে গ্রামেরই তিন জন বাড়ি-বাড়ি গিয়ে দু’টি করে ফাঁকা ফর্মে সই করায় বাসিন্দাদের। তাঁদের কাছ থেকে পরিচয়পত্র এবং ছবিও নেওয়া হয়। পরে বাসিন্দারা অনুদানের কথা জিজ্ঞাসা করলে তারা জানায়, সব আবেদন বাতিল হয়ে গিয়েছে।
অভিযোগ পেয়ে পুলিশ গ্রামের যে তিন জন নথিপত্র সংগ্রহ করেছিল, তাদের গ্রেফতার করে। পুলিশ জানায়, ধৃতদের জেরা করে ও ব্যাঙ্কের নথিপত্র ঘেঁটে জানা যায়, শুধু নিশিন্দ্রা নয়, আশপাশের নানা গ্রামের অনেকের নামেও এই ধরনের ঋণ-জালিয়াতি হয়েছে। তছরুপের পরিমাণ প্রায় এক কোটি টাকা। পুলিশের দাবি, তদন্তে জানা যায়, এর পিছনে রয়েছেন তৎকালীন ব্যাঙ্ক ম্যানেজার অলোকবাবু। সোমবার দুপুরে কালনা পুলিশের সহযোগিতায় নিভুজিবাজারে ওই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের শাখা থেকে তাঁকে গ্রেফতার করে ফরাক্কার পুলিশ। তদন্তকারীরা জানান, ব্যাঙ্কের আরও এক অফিসার এই জালিয়াতিতে যুক্ত ছিলেন। তাঁর খোঁজ চলছে।
অভিযোগকারী চৈতন্যবাবু মঙ্গলবার বলেন, ‘‘ব্যাঙ্ক থেকে ৪৯ হাজার টাকা শোধ করার নোটিস পেয়ে মাথায় যেন বাজ পড়েছিল। এলাকার আরও অনেকের একই অবস্থা হয়েছিল। জালিয়াতির ঘটনা ধরা পড়ায় আমরা প্রাণ ফিরে পেয়েছি।’’
পুলিশ জানায়, ধৃত অলোকবাবুর বাড়ি শিলিগুড়ির মিলনপল্লিতে। তাঁর বিরুদ্ধে আর্থিক জালিয়াতি ও প্রতারণার মামলা রুজু হয়েছে। মঙ্গলবার জঙ্গিপুর আদালতে তোলা হলে ধৃতকে তিন দিন পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy