Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
Hanskhali

ভারতীয় ‘ভাই’কে ঘরে ফেরাতে ছবি নিয়ে ঘুরছেন বাংলাদেশের যুবক

সে আসলে হিন্দু বলে তাঁদের ধারণা। কিন্তু হিন্দু-মুসলিম তাঁদের চিন্তার মধ্যে কোনও দিনই ছিল না।

দোকানে ছবি হাতে আরিফুল। ডান দিকে, মূক-বধির তরুণ। নিজস্ব চিত্র

দোকানে ছবি হাতে আরিফুল। ডান দিকে, মূক-বধির তরুণ। নিজস্ব চিত্র

সুস্মিত হালদার
হাঁসখালি শেষ আপডেট: ২৪ জানুয়ারি ২০২০ ০১:১৪
Share: Save:

কখনও পথচলতি মানুষকে, কখনও চা বা মুদির দোকানে ঢুকে একটা ছবি দেখিয়ে এক যুবক জানতে চাইছেন— ‘দেখুন, ছেলেটাকে চিনতে পারছেন?’ কেউ বিরক্ত হচ্ছেন। কেউ মাথা নেড়ে বলছেন— ‘চিনতে পারছি না তো!’

নদিয়ার হাঁসখালিতে ছবি হাতে ঘোরা যুবকের নাম আরিফুল ইসলাম। বাড়ি বাংলাদেশের কুষ্টিয়ায় দামুরহুদা থানার ছয়ঘড়িয়া গ্রামে। নদিয়ার কৃষ্ণগঞ্জে গেদে চেকপোস্ট থেকে তাঁদের গ্রাম কিলোমিটার দুই দূরে। অনেক কষ্টে টাকা জমিয়ে ভারতে আসার পাসপোর্ট-ভিসা করিয়েছেন তিনি। মঙ্গলবার গেদে চেকপোস্ট হয়ে ভারতে ঢুকেছেন। উদ্দেশ্য, এক দিন আচমকা খুঁজে পাওয়া চোদ্দো বছরের মূক-বধির কিশোরকে তার পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেবেন।

আরিফুল জানান, সে দিন ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত ঘেঁষা জমিতে চাষ করছিলেন তিনি। হঠাৎই দেখতে পান, মাঠের মাঝে বসে কান্নাকাটি করছে এক কিশোর। তাঁর সন্দেহ হয়, কোনও ভাবে সীমান্ত পেরিয়ে সে বাংলাদেশে ঢুকে পড়েছে। কাছে গিয়ে নাম-ঠিকানা জানতে চান তিনি। কিন্তু প্রশ্নের উত্তর মেলেনি। ধীরে-ধীরে আরিফুল বুঝতে পারেন, ছেলেটি শুনতে বা বলতে পারে না। তাকে তিনি বাড়ি নিয়ে যান। সেই থেকে ওই বাড়িতেই রয়ে গিয়েছে ছেলেটি। বাড়ির ছেলেই হয়ে গিয়েছে প্রায়। আরিফুলের মা আঞ্জু বিবি আদর করে তার নাম রেখেছেন ‘মনসুর’। সে আসলে হিন্দু বলে তাঁদের ধারণা। কিন্তু হিন্দু-মুসলিম তাঁদের চিন্তার মধ্যে কোনও দিনই ছিল না। আরিফুল বলেন, “ভাই প্রথম দিন থেকে আঙুল দিয়ে শুধু ভারতের দিকে দেখাত। সেই কারণেই এখানে ওর বাড়ি খুঁজতে এসেছি।” তাঁরা ছয় ভাই, মনসুরকে নিয়ে সাত। দরিদ্র কৃষক পরিবার। এত দিন পয়সা জোগাড় করে ভারতে আসতে পারেননি। তবে মনসুরের মনখারাপ তাঁকে আসতে বাধ্য করেছে। আরিফুল বলেন, “ওকে রোজ চোখের জল ফেলতে দেখে মা ঠিক থাকতে পারে না। বলেছে, যেমন করেই হোক ভাইকে তার পরিবারের কাছে ফেরাতে হবে।”

আপাতত হাঁসখালির কমলপুর গ্রামে এক দূর সম্পর্কের আত্মীয়ের বাড়িতে উঠেছেন আরিফুল। মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকেই বেরিয়ে পড়েছেন ছবি হাতে। বৃহস্পতিবারের মধ্যে চষে ফেলেছেন কমলপুর, গাজনা, বগুলা, মাজদিয়া, এমনকি সীমান্ত লাগোয়া বানপুর বাজারও। আরও কয়েক দিন খোঁজাখুঁজি করবেন। কিন্তু তার পরেও যদি কোনও খোঁজ না পান?

আরিফুল বলছেন, “জানি না, কী হবে। রোজ রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে আল্লাকে ডাকছি।”

অন্য বিষয়গুলি:

Hanskhali Bangladesh Gede
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE