প্রতীকী ছবি
চার বছরেও কাজ শেষ হয়নি। স্থানীয় বাসিন্দারা একাধিক বার রাস্তা তৈরির দাবিতে পথ অবরোধ করেছেন। জেলা প্রশাসন ও জেলা পরিষদ বারবার বলেও ঠিকাদারকে দিয়ে কাজ শেষ করাতে পারেনি। তাঁর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক পদক্ষেপ করার জন্য রাজ্যস্তরে আবেদনও করা হয়েছিল। কাজ হয়নি। এ বার মুখ্যমন্ত্রীর নিজে সেই ঠিকাদারের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করার নির্দেশ দেওয়ায় নতুন করে নড়াচড়া শুরু হয়েছে।
প্রতি বছরই বাংলা গ্রাম সড়ক যোজনায় জেলায় রাস্তা তৈরি ও সংস্কারের কাজ হয়। ই-টেন্ডারের মাধ্যমে বিভিন্ন ঠিকাদার সংস্থাকে সেই কাজের বরাত দেয় রাজ্যের পঞ্চায়েত দফতর। সেই ভাবেই নদিয়ার ‘আর কে সরকার’ নামে একটি ঠিকা সংস্থাকে ২০১৬ সালে পাঁচটি রাস্তা তৈরির বরাত দেওয়া হয়েছিল। ২০১৭ সালে দু’টি ও ২০১৮ সালে তিনটি কাজের বরাত দেওয়া হয়। এই সব কাজের আর্থিক মূল্য প্রায় ৫০ কোটি টাকা বলে জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর।
নদিয়ার রানাঘাট-২, নাকাশিপাড়া, শান্তিপুর, তেহট্ট-২, কৃষ্ণনগর-১, চাকদহ ও কালীগঞ্জ ব্লকে বাংলা গ্রাম সড়ক যোজনার ১০টি রাস্তা তৈরির কাজের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল ওই ঠিকা সংস্থাকে। কিন্তু এখনও কোনও রাস্তাই শেষ হয়নি। এলাকায় ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। কোথাও-কোথাও রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভও দেখানো হয়েছে। বছরের পর বছর রাস্তা তৈরি না হওয়ায় জেলা প্রশাসন ও জেলা পরিষদের কর্তারা অস্বস্তিতে। নানা প্রশ্নের মুখে পড়তে হচ্ছে স্থানীয় বিধায়ক থেকে শুরু করে পঞ্চায়েত স্তরের জনপ্রতিনিধিদের। অস্বস্তিতে পড়তে হচ্ছে শাসক দলের নেতাদের।
গত ৫ ফেব্রুয়ারি জেলা প্রশাসনিক সভায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সামনে সেই ক্ষোভের কথা জানান রানাঘাট উত্তর-পূর্ব কেন্দ্রের তৃণমূল বিধায়ক সমীর পোদ্দার। তাঁর কথায়, “চার বছরেও রাস্তা করে দিল না। ফোন করলেও ধরেন না ঠিকাদার। বাধ্য হয়েই মুখ্যমন্ত্রীকে জানাতে হল। এ বার নিশ্চয়ই সুরাহা হবে।”
একই আক্ষেপ শান্তিপুরের তৃণমূল বিধায়ক তৃণমূলের অরন্দম ভট্টাচার্যেরও। তিনি বলেন, “২০১৬ সাল থেকে রাস্তাটা পড়ে আছে। এলাকার মানুষ রাস্তা ক্ষোভে অবরোধ করেছিলেন। আমি বিধায়ক হওয়ার পরে সংশ্লিষ্ট সকলকে জানিয়েছি। এ বার মুখ্যমন্ত্রী হস্তক্ষেপ করার নির্দেশ দেওয়ায় কর্তৃপক্ষ পদক্ষেপ করবেন বলেই মনে হয়।”
প্রশাসনিক বৈঠকে বিষয়টি জানার পরে মঞ্চে বসেই ঠিকাদার সংস্থাকে কালো তালিকাভুক্ত করার ও তাদের থেকে জরিমানা আদায় করার নির্দেশ দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। আর তার পরেই নড়েচড়ে বসেন সংশ্লিষ্ট দফতরের কর্তারা। জেলা পরিষদ সূত্রে অবশ্য জানা গিয়েছে, আগেই লিখিত সিদ্ধান্ত করে ওই ঠিকাদার সংস্থাকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য আবেদন করা হয়েছিল রাজ্যের পঞ্চায়েত দফতরের কাছে। সেটাও প্রায় পাঁচ মাস আগে। জেলা প্রশাসনের তরফে বারবার বলা সত্ত্বেও কাজ না হওয়ায় মাস ছয়েক আগে জেলাশাসক নিজে পদক্ষেপ করেন। ডিসেম্বরের মধ্যে সব কাজ শেষ করার নির্দেশ দিয়েছিলেন তিনি। তাতেও কাজ হয়নি।
জেলা পরিষদের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ চঞ্চল দেবনাথ বলেন, “আমরা অনেক আগেই ওই সংস্থার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করা শুরু করেছি। পঞ্চায়েত দফতর ছাড়াও মুখ্যমন্ত্রীকে বিষয়টি জানানো হয়েছিল। ওই ঠিকাদারের বিরুদ্ধে কী পদক্ষেপ করা হবে, সেটা রাজ্য ঠিক করবে। কিন্তু আমরা জেলা পরিষদে ওই সংস্থাকে কালো তালিকাভুক্ত করে দিয়েছি। তাদের আর কাজ দেওয়া হবে না।” যদিও সংস্থার কর্ণধার রাজদীপ সরকার ওরফে বান্টি দাবি করেন, “আমরা তো চেষ্টা করছি। কিন্তু জমি ও নানা আইনি সমস্যার কারণে একটু দেরি হয়ে গিয়েছে। কোথাও কোথাও সমস্যা আছে ডিপিআর-এও।”
কিন্তু অন্যেরা কাজ শেষ করতে পারলেও শুধু তাঁদেরই এত দেরি হচ্ছে কেন, সেই প্রশ্নের সদুত্তর কোনও তিনি দিতে পারেননি। তিনি বলেন, “দফতর যা সিদ্ধান্ত নেবে তা-ই মেনে নেব।”
জেলা প্রশাসনের একটি সূত্রের দাবি, বান্টি অত্যন্ত প্রভাবশালী। তাঁর নাড়া বাঁধা আছে রাজ্যের ক্ষমতাশীল কিছু লোকের সঙ্গে। সেই কারণেই কোনও ভাবেই তাঁকে দিয়ে কাজ শেষ করানো যায়নি, এমনকি তাঁর বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপও করা যায়নি। এই কাজের বরাত যেহেতু সরাসরি রাজ্যস্তর থেকে দেওয়া হয় তাই জেলা প্রশাসনও তাঁকে সে ভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না।
জেলা পরিষদের সভাধিপতি রিক্তা কুণ্ডু বলেন, “আমরা আগেই লিখিত সিদ্ধান্ত নিয়ে সংস্থাটিকে বাতিল করার জন্য রাজ্যকে অনুরোধ করেছিলাম। এ বার মুখ্যমন্ত্রী স্বয়ং কড়া পদক্ষেপ করার নির্দেশ দিয়েছেন। আর ওদের পালানোর রাস্তা থাকল না।”
তবে ঠিকাদারকে সরিয়ে দেওয়ার পরে কে কবে রাস্তাগুলির কাজ শেষ করবে, তা এখনও পরিষ্কার নয়। রাজ্যস্তরেই সেই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জেলা প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy