মহুয়া মৈত্র
সাংসদ তথা কৃষ্ণনগর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি মহুয়া মৈত্রকে কেন্দ্র করে তৃণমূলেরই অন্দরে বিতর্ক ও ক্ষোভ ক্রমশ তীব্র হচ্ছে।
সম্প্রতি কৃষ্ণনগর সাংগঠনিক জেলায় তৃণমূলের কিছু রদবদল ঘিরে প্রশ্ন উঠেছিল দলের ভিতরেই। কৃষ্ণনগর ১ উত্তর, তেহট্ট ১ এবং নাকাশিপাড়া ব্লকের দলীয় সভাপতিকে অপসারণ করা হয়। বদল হয় জেলা কমিটিতেও। এই বদল ঘিরে দলের কৃষ্ণনগর সাংগঠনিক জেলার সভাপতি মহুয়া মৈত্রের বিরুদ্ধেও দলের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়।
এর পরই জেলায় তৃণমূল-পরিচালিত পঞ্চায়েতের কাজে ব্যর্থতার অভিযোগ তুলে সোশ্যাল মি়ডিয়ায় ভিডিও পোস্ট করেছিলেন মহুয়া মৈত্র। যা নিয়ে ক্ষুব্ধ তৃণমূলের নেতামন্ত্রীদের একাংশ। মহুয়া ভিডিওতে লিখেছেন, ‘ডিসেম্বরের মধ্যে ৬০ শতাংশ টাকা খরচ করা নিয়ম। বহু পঞ্চায়েত সেটা করতে পারেনি। করলে গ্রামীণ এলাকায় একটা কাঁচা রাস্তাও থাকার কথা নয়।’’ তিনি জানিয়েছিলেন, বড়-বড় রাস্তার স্কিম করে দ্রুত কাজ করতে হবে। সেই ক্ষেত্রে ই-টেণ্ডার করে কাজ করতে হবে। এতে শুধু দলের মহুয়া-বিরোধী অংশ নয়, তাঁর অনুগামীদের অনেকেই ক্ষুব্ধ হন। কারণ, তাঁরা মনে করছেন, এতে সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়েছে। নিজের অসন্তোষের কথা জানিয়েছিলেন দলের জেলা পর্যবেক্ষক রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ও।
কিন্তু তাতে থেমে থাকেননি সাংসদ। বুধবার নাকাশিপাড়া বিডিও অফিসে তিনি প্রশাসনিক বৈঠক করেন। সেখানে তিনি পঞ্চায়েতে জমে থাকা টাকায় খুব তাড়াতাড়ি বড়-বড় রাস্তা ও আনুসঙ্গিক উন্নমূলক কাজ করার কথা বললেও বৈঠক শেষ হতেই সেখানে উপস্থিত অধিকাংশ পঞ্চায়েত প্রধানেরা জানান, সাংসদের বাতলানো পদ্ধতি অনুযায়ী কাজ করতে তাঁরা নারাজ। এঁদের মধ্যে তৃণমূলের একাধিক পঞ্চায়েতপ্রধান ছিলেন।
রাজনৈতিক সূত্রের খবর, বিজেপি পরিচালিত নাকাশিপাড়া, বেথুয়াডহরির ১ নম্বর ও পাটিকাবাড়ির পঞ্চায়েত প্রধানের পাশাপাশি তৃণমূল পরিচালিত মাঝেরগ্রাম-সহ প্রায় সব পঞ্চায়েত প্রধানদের অর্থ খরচ করতে না পারার জন্য সাংসদের কাছে কথা শুনতে হয়। বৈঠকের পরে সাংসদ বেরিয়ে যেতেই নাকাশিপাড়া পঞ্চায়েত উপপ্রধান নীলকমল সরকার বলে ওঠেন, ‘‘সাংসদের মতো পঞ্চায়েতে সদস্যেরা নির্বাচিত হয়ে এসেছেন। সকলকে কাজ ভাগাভাগি করে দিতে হবে।’’
তাঁকে সমর্থন করে নাকাশিপাড়ার পঞ্চায়েত প্রধান অর্পিতা ঘোষ বলেন, ‘‘আমার পঞ্চায়েতে টাকা রয়েছে ঠিকই, কিন্তু লকডাউনের জেরে অফিসে কর্মীরা আসতে পারেননি। ওঁদের অন্য জায়গায় ডিউটি পরেছিল তাই অনেকটা পিছিয়ে পরেছি।’’ বিজেপি পরিচালিত বিল্বগ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান কবিতা বিশ্বাসের কথায়, ‘‘আমার এলাকায় ই-টেণ্ডার করে কাজ করার মতো বড় রাস্তা নেই।’’ আবার তৃণমূল পরিচালিত বিক্রমপুর পঞ্চায়েতের প্রধান রসিদ মল্লিকের কথায়, ‘‘উনি যে ভাবে কাজের কথা বলেছেন তা করা সম্ভব নয়। আমরা যদি বড় বড় রাস্তাই করি তা হলে পাড়াগ্রামের অলিগলির কাজ করার সম্ভব হবে না। ফলে গ্রামের মানুষ ক্ষুব্ধ হবেন। তাতে পঞ্চায়েতের বিশৃঙ্খলা তৈরি হবে। ই-টেণ্ডার করার পরিকাঠামো আমাদের পঞ্চায়েতে নেই। আমরা সরকারের নিয়ম অনুযায়ী কাজ করি।"
তৃণমূল পরিচালিত মুড়াগাছা গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান ঝর্ণা মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমাদের পঞ্চায়েতেও ই-টেণ্ডার করার ব্যবস্থা নেই। তা ছাড়াও আমার পঞ্চায়েত এলাকায় কোনও বড় রাস্তা নেই কাজ করার মতো।’’ বৈঠক শেষে মহুয়া মৈত্রকে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ‘‘আমি এই বিষয়ে কিছু বলব না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy