রানাঘাটের সিদ্ধেশ্বরী কালীমূর্তি ও মন্দির। ছবি: সুদেব দাস
তখন রানাঘাট শহর এখনকার মতো জনবহুল ছিল না। যাতায়াতের অন্যতম মাধ্যম ছিল নদীপথ। মাঝে-মধ্যেই সেই পথে চলত লুটতরাজ। ডাকাতির কাজ সফল করতে কালী পুজো করেই যাত্রা শুরু করত রণ বা রণা ডাকাত। পরবর্তীতে কৃষ্ণনগরের রাজা কৃষ্ণচন্দ্র স্বপ্নাদেশ পান, অনাদরে রয়েছেন দেবী। তাই তাকে উদ্ধার করে পুনরায় প্রতিষ্ঠা করা হোক। স্বপ্নাদেশ মতো রানাঘাটের ডাকাত কালী প্রতিষ্ঠিত হয়, যা আজ ‘সিদ্ধেশ্বরী কালী’ নামে পরিচিত। গড়ে উঠেছে মন্দিরও।
সেই সময়ে মহারাজ বর্ধমানের ব্রাহ্মণ পরিবারকে ওই কালীপুজোর দায়িত্ব দিয়েছিলেন। যদিও এর ইতিহাস নিয়ে আজও বিতর্কের অবসান হয়নি। বর্তমানে ওই সিদ্ধেশ্বরী কালীর নাম অনুযায়ী এলাকাটি সিদ্ধেশ্বরী তলা হিসেবে পরিচিত। ইতিহাস থেকে জানা যায়, বর্তমানে সিদ্ধেশ্বরী মন্দির যে এলাকায় অবস্থিত, তা এক সময়ে ডরানে তলা নামে পরিচিত ছিল। সেই সময় এলাকা গভীর, ঘন জঙ্গলে ঢেকে থাকত। ছিল একটি বটবৃক্ষ। পশ্চিম আকাশে সূর্য ডুব দিলেই এলাকায় দেখা দিত গাঁ-ছমছমে পরিবেশ।
১৭৯৯ সালে পালচৌধুরী বংশের কৃষ্ণচন্দ্র ও শম্ভুচন্দ্র রানাঘাট পরগনা কিনেছিলেন। তার পরই পত্তন হয় রানাঘাটের। তবে নগর প্রতিষ্ঠার আগে এলাকায় রণা ডাকাতের চূড়ান্ত বাড়বাড়ন্ত ছিল। বর্তমান সিদ্ধেশ্বরী তলা থেকে কিছুটা দূরে সেই সময়ে চূর্ণী নদীর সঙ্গে যুক্ত নামে একটি খাল ছিল। ওই জলপথেই যাতায়াত করতেন ব্যবসায়ীরা। আর তাঁদেরই নিশানা করত রণের দল। চলত মূল্যবান সামগ্রী লুটপাট, এমনকি নরবলিও।
কথিত আছে, সাধক রামপ্রসাদ এক বার মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্রের কাছে যাচ্ছিলেন। কিন্তু তাঁকেও বন্দি হতে হয় রণের হাতে। ডাকাত সর্দার সাধককে বলি দেওয়ারও সিদ্ধান্ত নেয়। শেষ পর্যন্ত মা কালীর উদ্দেশ্যে গান গেয়েছিলেন সাধক। সেই গানের সুর ডাকাত সর্দারকে মুগ্ধ করেছিল। প্রাণরক্ষা হয় রামপ্রসাদের। জনশ্রুতি আছে, এক সময়ে এক উন্মাদ সাহেব মন্দিরের ঢুকে পড়েছিলেন। তাই পণ্ডিত সমাজ মূর্তিটি বিজাতি স্পর্শের জন্য বিসর্জনের বিধান দেন। পরবর্তী কালে প্রস্তর মূর্তি প্রতিষ্ঠিত হয়। এ ছাড়া, ১৩০২ সালে রাজনারায়ণ কুণ্ডুর ভাতৃজায়া ইছামতি বর্তমান মন্দিরটি নির্মাণ করেন। বর্তমানে সিদ্ধেশ্বরী মন্দিরে কালীমূর্তি ছাড়াও মহাদেব এবং রাধা-কৃষ্ণ বিগ্রহের নিত্যপুজো হয়।
প্রতি বছর কালীপুজোর দিন বহু মানুষ মনের ইচ্ছা পূরণের আশায় মন্দিরে পুজো দেন। স্থানীয় বাসিন্দা দেবপ্রিয়া চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘প্রতি বছর কালীপুজোর দিন জাগ্রত সিদ্ধেশ্বরী মায়ের কাছে পুজো দিই।’’
এ বিষয়ে পুরাতত্ত্ব গবেষক শুভদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘রানাঘাটের দেবীর সিদ্ধেশ্বরী সঙ্গে জড়িয়ে আছে রণ ডাকাত বা রণা ডাকাতের নাম। আসলে এই দেবীর পুজো করত ওই ডাকাত সর্দার। সম্ভবত, সেই সময়ে এই পুজো মূর্তি তৈরি করে করা হত না। ঘটে কিংবা বেদীতে পুজো করা হত। ডাকাত সর্দারের শেষ জীবনে অথবা তার মৃত্যুর পর মূর্তি প্রতিষ্ঠা হয়।’’
তিনিই জানান, জনশ্রুতি রয়েছে, মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্র স্বপ্নাদেশ পান এই দেবী অবহেলায় পড়ে রয়েছে। তার পরেই তিনি মূর্তি প্রতিষ্ঠা করেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy