Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪

নব্বই শতাংশ তো বন্ধ: পুরপ্রধান

কৃষ্ণনগর যদি জরিমানা ঘোষণা করে প্লাস্টিক বন্ধ করে দিতে পারে, রানাঘাটই বা পারবে না কেন?

প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগেই আনাজ রানাঘাটে। কর্তারা দেখছেন? নিজস্ব চিত্র

প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগেই আনাজ রানাঘাটে। কর্তারা দেখছেন? নিজস্ব চিত্র

সৌমিত্র সিকদার 
রানাঘাট শেষ আপডেট: ২৬ অক্টোবর ২০১৯ ০২:২৪
Share: Save:

জিআরপি মোড়ে দুটো পেয়ারা কিনে প্লাস্টিকের ক্যারিপ্যাক চাইলেন বছর পঞ্চাশের এক খরিদ্দার। বিক্রেতা দিতে নারাজ। বিরক্ত হয়ে পেয়ারা না নিয়ে ভদ্রলোক ফিরেই যাচ্ছিলেন। বাধ্য হয়ে দোকানি প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ বার করে দিলে তিনি পেয়ারা নিলেন।

সুভাষ অ্যাভিনিউয়ে রাস্তার ধারে ফুল বিক্রি করছিলেন এক বৃদ্ধা। ফুল-বেলপাতা নিয়ে প্লাস্টিক প্যাকেট দাবি করেন এক বৃদ্ধা। তাঁর দাবিও মেনে নিতে হয় ফুল বিক্রেতাকে। কোর্ট মোড়ের কাছে আনুলিয়া যাওয়ার রাস্তায় দেড়শো কাঁচা লঙ্কাও প্লাস্টিক প্যাকেটেই ভরে দেন বিক্রেতা।

দেড়শো বছরেরও বেশি বয়স রানাঘাট শহরের। প্লাস্টিকের অভ্যাস তার তুলনায় এই তো হালের। কিন্তু পুরনো সে শহরের দোকানপাট, হাট-বাজার, আনাচ-কানাচ জুড়ে প্লাস্টিক উপচে পড়ছে। প্লাস্টিকের ব্যবহার বন্ধ করার জন্য এর আগে পুরসভার পক্ষ থেকে পদযাত্রা, সচেতনতা শিবির—অনেক কিছুই করা হয়েছে। কিন্তু কে শোনে কার কথা? কিছু বড় ব্যবসায়ী প্লাস্টিক ব্যাগ দেওয়া বন্ধ করলেও বাজারহাটে তা বন্ধ করা যায়নি।

কৃষ্ণনগর যদি জরিমানা ঘোষণা করে প্লাস্টিক বন্ধ করে দিতে পারে, রানাঘাটই বা পারবে না কেন?

রানাঘাটের পুরপ্রধান পার্থসারথী চট্টোপাধ্যায়ের দাবি, “এক বছর আগে জেলায় আমরাই প্রথম এই পদক্ষেপ করি। প্লাস্টিকের ব্যবহার পুরোপুরি বন্ধ করা সম্ভব হয়েছে বলে দাবি করব না। কিন্তু ৯০ শতাংশ কাজ হয়েছে। বাকিটাও যাতে করা যায়, তার জন্য, মানুষকে সচেতন করার চেষ্টা হচ্ছে। জরিমানার ব্যবস্থাও করা হয়েছে।’’

তবে কৃষ্ণনগরের মতো প্লাস্টিকের বিরুদ্ধে সার্বিক যুদ্ধঘোষণা রানাঘাট করেনি। বাছবিচার আছে। পুরপ্রধান জানান, কোথাও ৫০ মাইক্রনের নীচে প্লাস্টিক ব্যবহার করলে ২০০ টাকা জরিমানা করা হয়েছে, এখনও হচ্ছে । তাঁর দাবি, এর ফলে সে সবের ব্যবহার অনেক কমে গিয়েছে। যদিও বাস্তব হল, পথে-ঘাটে বাজারে যখন-তখন গেলেই চোখে পড়বে ফিনফিনে প্লাস্টিকের চালাচালি। কোনও রকম নজরদারি কার্যত নেই।

রানাঘাট রেল বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি পিন্টু সরকার বলেন, “এক সময়ে সেগুন পাতা, পদ্ম পাতা, কাগজের ঠোঙায় নানা জিনিস বিক্রি হত। ক্রেতারা চটের থলে নিয়ে বাজারে আসতেন। প্লাস্টিক প্যাকেট এসে যাওয়ায় বেশির ভাগ ক্রেতা তা আনা বন্ধ করে দেন।’’ তাঁর আক্ষেপ, কিছু ক্রেতা আছেন, যাদের প্লাস্টিকের প্যাকেট না দিলে মুখ ভার হয়ে যায়। তাঁর আর্জি, ‘‘তবুও ব্যবসায়ীদেরও বলছি, কারও কোন কথা শোনা যাবে না। তাতে কেউ জিনিস না নিলে কিছু করার নেই। প্লাস্টিকের ব্যাগে জিনিস দেওয়া যাবে না। মানুষকেও সচেতন হতে হবে।”

ব্যবসায়ীরা অবশ্য দাবি করছেন, প্লাস্টিক প্যাকেট তৈরি বন্ধ করে দিলে ল্যাঠা চুকে যেত। কিন্তু সরকারের সে দিকে নজর নেই। প্লাস্টিক ব্যবহারের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে রানাঘাটের পরিবেশপ্রেমী সংগঠন ‘নেচার ফার্স্ট’’। সচেতনতা শিবির করা থেকে মানুষের হাতে কাপড়ের ব্যাগ তুলে দেওয়া, অনেক কিছুই আছে তাদের কর্মসূচিতে। সেই সংগঠনের কর্ণধার, চিকিৎসক মুনমুন কীর্তনীয়া বলেন, “প্লাস্টিক বর্জন নিয়ে রানাঘাট শহরে ৯০ শতাংশ কাজ হয়ে গিয়েছে, এই দাবি ঠিক নয়। কিছু কাজ হয়েছে। এখনও অনেক কাজ বাকি।’’

পরিবেশ কর্মীদের আক্ষেপ, দিব্যি প্লাস্টিক প্যাকেট চলছে শহর জুড়ে। নর্দমায় প্লাস্টিক জমা হয়ে থাকছে। শহরে জল জমছে। আবার অনেক প্লাস্টিক ভেসে চলে যাচ্ছে নদীগর্ভে। দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতি হচ্ছে পরিবেশের।

কিন্তু আসল প্রশ্ন তো সদিচ্ছার। নেতা-কার্তারা যখন ঘরে বসেই হেঁকে দেন, ৯০ শতাংশ কাজ হয়ে গিয়েছে, তখন আর কী-ই বা করার থাকে?

অন্য বিষয়গুলি:

Plastic Bgas Pollution
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy