পাশে: স্বামী ও পুত্রের মৃত্যুর পরে নরিফা বিবির পাশে সারা গ্রাম। ছবি: সেবাব্রত মুখোপাধ্যায়।
সংসারে নুন আনতে পান্তা ফুরোয়। কোনওমতে গড়াচ্ছিল সংসারের চাকা। রবিবার বিকেলের পর তা যেন থমকে গেল।
রবিবার সকাল সকাল নিজের বাড়ি তকিপুর মল্লিকপাড়া থেকে সামান্য কিছু মুখে দিয়ে নিজের পুরনো সাইকেলে দুই ছেলেকে বসিয়ে শ্বশুরবাড়ি গিয়েয়েছিলেন হুদালিল মল্লিক। হুদালিলের আর বাড়ি ফেরা হল না। একটি লরির ধাক্কায় প্রাণ যায় হুদালিল ও তাঁর ছোট ছেলের। বড় ছেলে হাসপাতালে ভর্তি। এখন কী ভাবে সংসার চালাবেন, কোথা থেকে চিকিৎসার খরচ সংগ্রহ করবেন, ভেবে পাচ্ছেন না হুদালিলের স্ত্রী নরিফা। শোকে এক রকম পাথর হয়ে গিয়েছেন তিনি। ছোট মেয়ের বয়স এক বছর। তাকে বুকে চেপে ধরে বাড়ির উঠোনে যেন পাথরের মূর্তির মতোই বসেছিলেন তিনি।
রবিবার দিনটা শুরু হয়েছিল স্বাভাবিক ছন্দেই। বাড়িতে ফিরে দুপুরের খাওয়ার কথা ছিল হুদালিলের। নরিফা স্বামীর জন্য রবিবার দুপুরে শাক, ভাত, আলুর তরকারি রেঁধে রেখেছিলেন। কিন্তু স্বামীর সেই ভাত খাওয়া হল না। রবিবার দুর্ঘটনায় তার স্বামী ও ছেলের মৃত্যুর খবর চাউর হতেই গ্রামের মানুষও আর ভাত মুখে তুলতে পারেননি। সারা গ্রামই যেন না খেয়ে নরিফার বাড়ির উঠোনে গিয়ে উপস্থিত হন।
নরিফা বলেন, “এ বার কী নিয়ে থাকবো। কী করে বাঁচবো? মানুষটা তা দেখে গেল না। সকালে উঠে ভাত রান্না করেছি তাও তার খাওয়া হল না।” মাঝে মধ্যেই জ্ঞান হারাচ্ছিলেন তিনি। গ্রামের কয়েকশো মানুষ তাকে সান্ত্বনা দিতে এসেছিলেন।
কিন্তু কী সান্ত্বনা দেবেন? গ্রামের মানুষই জানান, হুদালিলের নিজের জমি জায়গা নেই। তাই তিনি দিন মজুরির কাজ করতেন। তবে প্রতিদিন কাজ পেতেন তা নয়। ফলে তাঁর পরিবারে অনটন কাটত না। তার উপর একমাত্র রোজগেরে সদস্যের মৃত্যুতে কোনও সান্ত্বনাই দিতে পারছেন না প্রতিবেশীরা। রবিবার হুদালিলের ভাই জাব্বর মল্লিক বলেন, “আমরা চার ভাই এক বাড়িতে কোনও রকমে থাকি। তার মধ্যে এক ভাই চলে গেল। পরিবার কী ভাবে চলবে জানি না।”
স্থানীয় রামপাড়া ২ গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য শানুন ইসলাম বলেন, “এরা বিপিএল তালিকা ভুক্ত পরিবার। দুর্ঘটনার পর আমরা পরিবারের পাশে আছি। তাঁদের আর্থিক সাহায্যের চেষ্টা করছি।” নুর হোসেন পাশের বেসরকারি স্কুলের প্রাথমিক বিভাগে পড়ত। বড় ছেলে মাদ্রাসায় প্রথম শ্রেণির ছাত্র। সে এখন মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজে চিকিৎসাধীন। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তার দুই পা-ই ভেঙে গিয়েছে। অস্ত্রোপচার হয়েছে। তবে তাকে কলকাতা পাঠাতে হবে কি না, সে বিষয়ে কিছু বলেননি চিকিৎসকরা। নরিফার পরিজনরা জানিয়েছেন, দুর্ঘটনা স্থলে কর্তব্যরত পুলিশের সিভিক ভলান্টিয়াররা মোবাইল নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন। তাঁরা নিজেদের কাজ ঠিক মতো করলে আজ এই দুর্ঘটনা ঘটতো না বলেই তাঁদের মনে হচ্ছে। একই দাবি করেছেন গ্রামের মানুষও। পুলিশ জানিয়েছে, এই অভিযোগ খতিয়ে দেখা হবে। পঞ্চায়েতও সেই আশ্বাস দিয়েছে।
লরিটি নদিয়ার বেথুয়াডহরি থেকে আসছিল মুর্শিদাবাদের দিকে। লরি ও তার চালককে আটক করেছে পুলিশ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy