ভবতারিণী মূর্তি। নিজস্ব চিত্র।
নদিয়ারাজ রাঘবের রাজত্বকালের শেষ পর্ব। নবদ্বীপের গঙ্গার ধারে মন্দির-সহ প্রকাণ্ড এক গণেশ মূর্তি এবং শিবলিঙ্গ প্রতিষ্ঠার কাজ শুরু করেন কৃষ্ণচন্দ্রের পিতামহ রাঘব। ১৬৬৯ সালে গণেশ মূর্তি প্রতিষ্ঠার পর তাঁর মৃত্যু হলে অবশিষ্ট কাজ সম্পূর্ণ করেন তাঁর পুত্র রুদ্র রায়। পিতার নামে সেই শিবের নামকরণ করেন রাঘবেশ্বর। এর একশো বছর পরের কথা। নবদ্বীপের গঙ্গায় তখন প্রবল ভাঙন। নদী ভাঙনে জোড়ামন্দির তলিয়ে যাওয়ার উপক্রম হলে কৃষ্ণচন্দ্র বিগ্রহ সরিয়ে আনেন নিরাপদ আশ্রয়ে।
আর তাতেই উঠল প্রশ্ন। বিগ্রহ স্থানান্তরের সময়ে বহু মানুষের স্পর্শে তা নাকি অপবিত্র হয়েছে। শোধনের জন্য পণ্ডিতেরা বিধান দিলেন, বারো বছর বিগ্রহ মাটির তলায় পুঁতে রাখলে দেবত্ব ফিরে পাবে শিব এবং গণেশ। মাটির নীচে পুঁতে দেওয়া হয় দু’টি বিগ্রহ। কিন্ত বারো বছর কেটে গেলেও অজ্ঞাত কোনও কারণে মাটির তলা থেকে তোলা হয়নি বিগ্রহ। বিগ্রহের খোঁজ পড়ল কৃষ্ণচন্দ্রের প্রপৌত্র মহারাজ গিরিশচন্দ্রের আমলে। কিন্তু এ বার অন্য বিপত্তি। মাটির তলা থেকে তোলার সময়ে ভেঙে যায় গণেশের শুঁড়। অঙ্গহানি হওয়া গণেশমূর্তি পুজোর অযোগ্য বলে বিবেচিত হল। এবারে পণ্ডিতেরা বিধান দিলেন, যদি ওই ভঙ্গ মূর্তি থেকে অন্য কোনও মূর্তি নির্মাণ করানো যায়, পুজো হতে পারে।
গণেশ মূর্তি থেকে তৈরি হল আনন্দময়ীর মূর্তি। নামকরণ হল ভবতারিণী। যদিও কোন শিল্পী নির্মাণ করেছিলেন মূর্তি, তাঁর পরিচয় পাওয়া যায় না। রাজপরিবারের ইতিহাস ‘ক্ষিতীশবংশাবলীচরিত’ অনুসারে, মহারাজ গিরিশচন্দ্র ১৮২৫ খ্রিস্টাব্দে পোড়ামাতলায় দু’টি মন্দির নির্মাণ করেন। এক দিকে প্রতিষ্ঠা হল ভবতারিণী এবং অন্য দিকে সেই শিবলিঙ্গ। দিনটি ছিল পৌষসংক্রান্তি।
মকর সংক্রান্তিতে সবাই যখন পৌষ আগলে পিঠেপুলির আয়োজনে ব্যস্ত থাকে, তখনই নবদ্বীপের অন্যতম শক্তিপীঠ পোড়ামাতলায় উদ্যাপন করা হয় ভিন্নধর্মী এক উৎসব। পৌষ সংক্রান্তির দিনে অঙ্গরাগের পর ভবতারিণীর বিগ্রহ পুনঃ প্রতিষ্ঠার উৎসব। মকর সংক্রান্তির দিন হয় বিচিত্রদর্শন ভবতারিণীর অভিষেক। শিবের বুকে পদ্মাসনে বসে থাকা কালীমূর্তি ভূ-ভারতে আর কোথাও দেখা যায় না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy