Advertisement
২৪ নভেম্বর ২০২৪

নগদের আকালে বিপাকে গবেষণা

পেল্লায় সব গবেষণা চলছে। নতুন ধরনের ধান-গম আরও কত কী! এ সবের আগামাথা কিছুই বোঝেন না এঁরা। গবেষণা দূরে থাক, কেউ কেউ তো সইটুকুও করতে জানেন না। কিন্তু গবেষণার বিশাল দায়িত্ব এঁদের কাঁধেই বর্তায়।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কল্যাণী শেষ আপডেট: ১৬ ডিসেম্বর ২০১৬ ০২:৫৪
Share: Save:

পেল্লায় সব গবেষণা চলছে। নতুন ধরনের ধান-গম আরও কত কী! এ সবের আগামাথা কিছুই বোঝেন না এঁরা। গবেষণা দূরে থাক, কেউ কেউ তো সইটুকুও করতে জানেন না। কিন্তু গবেষণার বিশাল দায়িত্ব এঁদের কাঁধেই বর্তায়।

এঁরা হলেন কৃষি-মজুর। গবেষণায় এঁদের ভূমিকাটা যে নেহাত ফেলনা নয়, মেনে নিচ্ছেন তাবড় কৃষি বিজ্ঞানীরাও। কারণ গবেষকরা যখন পড়াশোনায় ব্যস্ত, সরকারি কৃষি খামারে পরীক্ষামূলক ভাবে লাগানো ফসল দেখাশোনা করেন এঁরাই। ফলে এই লোকগুলো না থাকলে, গবেষণার অর্ধেকটা সময় যে মাঠেই মারা যেত, স্বীকার করে নিচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। কিন্তু, নোটের ধাক্কায় সরকারি কৃষি খামারের সঙ্গে যুক্ত সেই কৃষি শ্রমিকদের মজুরি জোগাতে হিমশিম খাচ্ছে বিধানচন্ত্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বিসিকেভি) কর্তৃপক্ষ। বিপাকে পড়েছেন মজুরেরাও। তাঁদের সংসার চালানোই দায়।

সারা রাজ্যে ছড়িয়ে থাকা ১৩টি কৃষি খামারে বিভিন্ন ফসল নিয়ে চলছে গবেষণা। চলছে বীজ তৈরির কাজ। কিন্তু, গত দু’মাস ধরে মজুরি পাচ্ছেন না তাঁরা। যে হেতু, দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন, তাই ছেড়ে যাওয়ার কথা এখনই ভাবছেন না। কিন্তু পেটের ভাত জোগাতে অবস্থা কাহিল। কর্তৃপক্ষের প্রশ্ন, তাঁরা ক্যাশলেস ব্যবস্থায় যেতে চাইলেও এই শ্রমিকরা কি সেই ব্যবস্থায় সরগড় হতে পারবেন? আপাতত সমাধান তাই অধরা। ফলে অবিলম্বে নগদ সমস্যার সমাধান না হলে ভেঙে পড়তে পারে পুরো ব্যবস্থাটাই।

১৩টি কৃষি খামারের আটটি নদিয়ায়। অন্য পাঁচটি জেলায় রয়েছে আরও পাঁচটি কৃষি খামার। ব্যবসায়িক নয়, এই খামারগুলিতে মূলত পরীক্ষামূলক চাষ হয়। কৃষি বিজ্ঞানীরা যে সব ফসল নিয়ে গবেষণা করেন, সেগুলির চাষ কৃষি খামারে করা হয়। নিজেদের আবিষ্কৃত বীজও চাষ হয় কৃষি খামারে। মাটির চরিত্র অনুযায়ী বিভিন্ন জেলায় কৃষি খামারগুলি তৈরি করা হয়েছে।

এই খামারগুলির অধিকর্তার দায়িত্বে রয়েছেন বিসিকেভি-র অধ্যাপক সুধীব্রত দত্ত। তিনি জানান, এই খামারগুলিতে রোজ গড়ে ১৫ থেকে ২০ জন মজুর কাজ করেন। চাষের ব্যস্ত মরসুমে শ্রমিক বেশি নিতে হয়। এই কাজে দক্ষ শ্রমিক দরকার হয় বলে তাঁদের নিজেদের একটি তালিকা রয়েছে, সেই তালিকা থেকে শ্রমিক নেওয়া হয়। দিন প্রতি মজুরি ২২২ টাকা। শ্রমিকদের মজুরি পুরোটাই নগদে মেটানো হয়। বেশির ভাগেরই ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট নেই। যাও বা দু’এক জনের রয়েছে, তাঁরা তা ব্যবহারই করেন না।

শ্রমিকদের মজুরি মেটাতে সপ্তাহে আড়াই থেকে চার লক্ষ টাকা প্রয়োজন হয়। সেখানে বর্তমানে সপ্তাহে ৫০ হাজার টাকার বেশি তোলাই যাচ্ছে না। ফলে সমস্যা দিন দিন বাড়ছে। শ্রমিকদের পাওনার চার ভাগের এক ভাগও মেটানো যাচ্ছে না। প্রায় দু’মাস ধরে এমন ঘটছে। খামারের কৃষি শ্রমিক সীতা মুর্মু, আয়ূব মণ্ডলরা জানালেন, ইতিমধ্যেই খাবার কেনার টাকায় টান পড়ছে। নতুন করে বাইরেও কাজ নেই।

সুধীব্রতবাবু বলেন, ‘‘খামারের শ্রমিকরা দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন, পুরনো লোক, তাই এখনও কাজ করা বন্ধ করে দেননি। ওঁরা কাজ বন্ধ করে দিলে, চরম বিপদে পড়তে হবে। ধাক্কা খাবে গবেষণা।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Demonetisation
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy