গন্ডগোলের পর কলেজের সামনে পুলিশের প্রহরা। —নিজস্ব চিত্র।
কিছু দিন বন্ধ থাকার পর ফের কলেজে রাজনৈতিক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটল জেলায়। অখিল ভারত বিদ্যার্থী পরিষদ বা এবিভিপি-র স্মারকলিপি জমা দেওয়াকে কেন্দ্র করে রানাঘাট কলেজে শুক্রবার দুপুরে ব্যাপক গোলমাল হয়। এবিভিপির সঙ্গে টিএমসিপি-র মারামারি চরমে ওঠে। চিৎকার, ইটবৃষ্টি, মার— সব মিলিয়ে কলেজ কার্যত রণক্ষেত্রের চেহারা নেয়। ইটের আঘাতে আট পুলিশকর্মী-সহ ১৫ জন আহত হয়েছেন। পরিস্থিতি আয়ত্তে আনতে পুলিশকে কাঁদানে গ্যাস ছুড়তে হয় ও লাঠি চালাতে হয় বলে অভিযোগ। যদিও পুলিশ লাঠি চালানোর কথা স্বীকার করেনি।
আহতদের হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসার পর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। কলেজের পুলিশ পিকেট বসেছে। মারপিটের ঘটনায় আতঙ্কে অনেক পড়ুয়া কলেজ থেকে পালায়। তবে সংঘর্ষ থামার পর অবশিষ্টদের নিয়ে পঠনপাঠন চলেছে। শেষে এবিভিপি-র পক্ষ থেকে পাঁচ দফা এবং তৃণমূল ছাত্র পরিষদের তরফ থেকে এক দফা দাবিতে কলেজের অধ্যক্ষের কাছে স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে।
অধক্ষ্য অরূপ মাইতি অবশ্য দাবি করেছেন, “কলেজের ভিতরে কিছু হয়নি। যা হয়েছে সেটা কলেজ চত্বরের বাইরে। এ দিন ওরা যে ডেপুটেশন দেবে, সে কথা আমাকে আগে থেকে জানায়নি। বিষয়টি আমি পুলিশের কাছ থেকে জানতে পেরেছি।’’ তাঁর আরও বক্তব্য, ‘‘এ দিন এবিভিপি-র আট জন প্রতিনিধি ডেপুটেশন দিয়েছে। তাতে ওরা যে অভিযোগগুলি জানিয়েছে সেগুলি ঠিক নয়। ২০১৪ সাল থেকে এখানে অনলাইনে ভর্তি প্রক্রিয়া চলছে। তাই ভর্তির জন্য টাকা নেওয়ার সুযোগ কারও নেই। কলেজ চত্বরে নেশা করা হয় বললেও যে অভিযোগ করা হচ্ছে, সেটা ঠিক নয়। টিএমসিপি-র পক্ষ থেকেও এ দিন ডেপুটেশন দেওয়া হয়েছে। সেই দাবিও ঠিক নয়। বহিরাগতেরা কেউ কলেজে প্রবেশ করে না।”
কলেজ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, এ দিন বেলা ১১টা থেকে কলেজ গেটের সামনে এবিভিপি-র সদস্যেরা জমা হতে শুরু করেন। তাঁরা কলেজের ভিতরে প্রবেশ করতে গেলে কলেজের নিরাপত্তা কর্মী এবং পুলিশ বাধা দেয়। চিৎকার চেঁচামেচি শুরু হয়। শুরু হয় ধস্তাধস্তি। কলেজের ভিতরে ছিলেন তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সদস্যেরা।
এবিভিপি-র সদস্যদের দাবি ছিল, তাঁদের বেশি সংখ্যক সদস্যকে ভিতরে ঢুকতে দেওয়া হোক। কারণ, কম সংখ্যক লোক ঢুকলে টিএমসিপি আক্রমণ করতে পারে। এ নিয়ে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়ের মধ্যে শুরু হয় ইটবৃষ্টি শুরু হয়। সেই ইটের ঘায়ে পুলিশকর্মী-সহ কয়েক জন আহত হয়েছেন। শেষে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ছুড়ে এবং লাঠি চালিয়ে দু’দলের সমর্থকদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
পুলিশ সূত্রে জানানো হয়েছে, বহিরাগতেরা ভিতরে ঢোকার চেষ্টা করলে বাধা দেওয়া হয়েছে। সেই সময়ে সমস্যা হয়েছিল। ইট ছোড়া হয়। তাতে আট জন পুলিশকর্মী আহত হয়েছেন। পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক। পুলিশের দাবি, লাঠিচার্জ করা হয়নি। লাঠি উঁচিয়ে তেড়ে গিয়ে যুযুধান দু’পক্ষকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
এবিভিপি নেতা অভিজিৎ বিশ্বাস অভিযোগ করেন, “কলেজের বর্তমান পড়ুয়ারা আমাদের সঙ্গে ঢুকতে গেলে তাঁদের আটকানো হয়। সেই সময়ে ভিতরে বহিরাগতরা ছিল। তাদের বের করে দেওয়ার কথা বললে শোনা হয়নি। আমাদের ছেলেদের মধ্যে তৃণমূলের ছেলেরা ঢুকে পড়ে ইট ছুড়তে থাকে। ওরা বোমাও ছুড়েছে। তার পর আমাদের ঘাড়ে দোষ চাপাচ্ছে। ওদের আক্রমণে আমাদের দুই কর্মী আহত হয়েছে।”
অভিযোগ অস্বীকার করে তৃণমূল ছাত্র পরিষদ নেতা শুভজিৎ ঘোষের পাল্টা দাবি, “সেই সময়ে কলেজের ভিতরে কেউ ছিল না। ওদের সঙ্গে বহিরাগতরা ছিল। আমাদের কেউ বোমা মারেনি। ওরা ইট ছুড়েছিল। তাতে আমাদের কয়েক জন আহত হয়েছেন।” লোকসভা ভোটের ফল বের হওয়ার পর থেকেই নদিয়ার একাধিক কলেজের দখল নিয়ে বিজেপি ও তৃণমূলের ছাত্র সংগঠনের মধ্যে লড়াই তীব্র হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy