Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪
Agitation

নাবালিকাকে গণধর্ষণে বিক্ষোভে পথে ফরাক্কা

নাবালিকাকে গণধর্ষণের ঘটনায় রবিবার শতাধিক মহিলা ফরাক্কা থানার সামনে জমায়েত হয়ে বিক্ষোভ দেখান।

ফরাক্কায় বিক্ষোভ।

ফরাক্কায় বিক্ষোভ। নিজস্ব চিত্র ।

বিমান হাজরা
ফরাক্কা শেষ আপডেট: ১৪ জুন ২০২১ ০৫:২৩
Share: Save:

এবার মহিলাদের নিরাপত্তার দাবি উঠল ফরাক্কায়। পথে নেমে নিরাপত্তার দাবিতে সোচ্চার হয়ে পুলিশের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখালেন এলাকার মহিলারা।

বৃহস্পতিবার বিকেলে এনটিপিসি মোড়ে এক কিশোরী বাড়ি যাওয়ার গাড়ি না পেয়ে একটি অ্যাম্বুল্যান্স থামিয়ে তাতে চড়ে বসলে অ্যাম্বুল্যান্স চালক ও তার সঙ্গী ওই কিশোরীকে জোর করে একটি বাড়িতে নিয়ে গিয়ে রাতভর ধর্ষণ করে বলে অভিযোগ। শেষ রাতে তাকে তার বাড়ির কাছাকাছি কোথাও ফেলে আসতে গেলে অ্যাম্বুল্যান্স সহ ধরা পড়ে যায় দুজনই বৈষ্ণবনগর থানার দুই সিভিক কর্মীর হাতে। তারা ওই কিশোরী ও দুজনকে বৈষ্ণবনগর থানায় নিয়ে যায়। শুক্রবার বিকেলে তাদের সকলকেই বৈষ্ণবনগর থানা থেকে ফরাক্কা থানায় পাঠানো হলে ফরাক্কা থানার পুলিশ জানতে পারে ফরাক্কায় ঘটে যাওয়া গণধর্ষণের কথা।

নাবালিকাকে গণধর্ষণের ঘটনায় রবিবার শতাধিক মহিলা ফরাক্কা থানার সামনে জমায়েত হয়ে বিক্ষোভ দেখান। বিক্ষোভে হাজির ছিল ওই কিশোরী ও তার পরিবারও। বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, অ্যাম্বুল্যান্স মানুষের একটা ভরসাস্থল। দিন দুপুরে যেভাবে সেই অ্যাম্বুল্যান্সে করে ১৫ বছরের কিশোরীকে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের উপর থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে রাতভর গণধর্ষণ করা হয়েছে ফরাক্কায় অতীতে তা কখনও ঘটেনি। ফরাক্কার মত জায়গায় কিশোরীরা একাই রাস্তাঘাটে চলাচল করে এসেছে এতদিন। কখনও এ জাতীয় বিপদ ঘটেনি। জাতীয় সড়কে সব সময় পুলিশের পাহারা থাকে। তারপরেও এই ঘটনা ফরাক্কা জুড়ে আতঙ্কের সৃষ্টি করেছে।

শুধু তাই নয়, জিজ্ঞাসাবাদে উঠে এসেছে বেনিয়াগ্রাম স্বাস্থ্যকেন্দ্রের কোনও আবাসনের ঘরের মধ্যে এই ঘটনা ঘটেছে। স্বভাবতই আতঙ্ক আরও বেড়েছে।
পুলিশ অবশ্য থানা চত্বরের বাইরেই আটকে দেয় বিক্ষোভকারীদের। এদিন বিক্ষোভে উপস্থিত ওই কিশোরীর মামা দাবি করেন, এই পাশবিক ঘটনায় জড়িতরা যেন কড়া শাস্তি পায় তা পুলিশকে সুনিশ্চিত করতে হবে।
জঙ্গিপুরের পুলিশ সুপার ওয়াই রঘুবংশী অবশ্য আশ্বস্ত করে জানিয়েছেন, দোষীরা যাতে কঠোর শাস্তি পায় তার জন্য পুলিশ চেষ্টা চালাবে। মামলার বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত ধৃতরা যাতে জেলে হেফাজতেই আটক থাকে পুলিশি তদন্ত সেই পথেই চলবে।

বিক্ষোভকারীদের এই আশঙ্কাকে উড়িয়ে দিতে পারছেন না ফরাক্কার প্রাক্তন কংগ্রেস বিধায়ক মইনুল হক। তিনি বলেন, “অতীতে কখনও ফরাক্কা এভাবে নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেনি। রাতভর গণধর্ষণের খবর ফরাক্কা থানার পুলিশ জানতে পারল ২৪ ঘন্টা পরে, পাশের থানার মাধ্যমে। আমি যত দূর জানি ফরাক্কা থানায় সেদিন ব্যস্ততা ছিল কোনও এক অনুষ্ঠান নিয়ে। এই ঘটনার কথা যাতে লোকজন জানতে না পারে তার জন্য ওই ধর্ষিতার বাবা ও মামাকে শাসানো হয়েছিল যেন কারও কাছে মুখ না খোলেন তারা। যাতে কোনও সংবাদ মাধ্যমে সে খবর প্রকাশ না পায়। কিন্তু কেন এই লুকোছাপা আচরণ ফরাক্কা থানার পুলিশের?”

বিজেপির রাজ্য কমিটির সদস্য হেমন্ত ঘোষ বলেন,“ঘটনা জানার পর শুক্রবার রাতে ফরাক্কা থানায় ফোন করলে আমাকে বলা হয় তেমন কিছুই ঘটেনি। পুলিশের কাছে গণধর্ষণের ঘটনা তেমন কিছুই নয়? তাহলে আমাদের নিরাপত্তা কোথায়? গোটা ফরাক্কা জুড়ে বাবা মায়েরা আজ উদ্বিগ্ন এই ঘটনায়।”
ফরাক্কার বিধায়ক তৃণমূলের মনিরুল ইসলাম বলেন, “এই ঘটনা কোনওদিন ফরাক্কায় ঘটেনি। স্বভাবতই ভয় পেয়েছে মানুষ। অ্যাম্বুল্যান্সে করে তুলে নিয়ে গিয়ে সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্রের একটি ঘরে সারারাত ধরে গণধর্ষণ ঘটাবার দুঃসাহস হল কী করে? আমরা কখনও এই ঘৃণ্য ঘটনাকে সমর্থন করি না। বরং আমি পুলিশকে বলেছি যারা এই অপরাধ করেছে তাদের কঠোরতম শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। তদন্তে কোনওরকম ঢিলেমি মানা হবে না।”

যে অ্যাম্বুল্যান্সে এই কান্ড ঘটানো হয়েছে তার মালিক ধৃত করিম শেখ নিজেই। বেনিয়াগ্রাম স্বাস্থ্যকেন্দ্রে রোগীদের জন্য ভাড়া খাটত তা অ্যাম্বুলেন্স। সেই হিসেবেই মাঝে মধ্যেই গাড়ির চালকদের ব্যবহারের জন্য স্বাস্থ্যকেন্দ্রের একটি ঘরও সে ব্যবহার করত। রোগী নিয়ে অ্যাম্বুল্যান্সটি যাতায়াত করলেও গাড়ির কোনও কাগজপত্রের বৈধতা নেই। জঙ্গিপুর পরিবহণ দফতরে নথিভুক্ত ওই অ্যাম্বুলেন্সের দু’বছর আগে রেজিষ্ট্রেশনের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। বিমার মেয়াদ শেষ হয়েছে প্রায় দেড় বছর আগে। রোড ট্যাক্সের মেয়াদ ফুরিয়েছে ২০১৯ সালের ৩১ মে। কাজেই রোগীদের আনা নেওয়ার ক্ষেত্রে কোনও দুর্ঘটনা ঘটলে তারজন্য কোনও ক্ষতিপূরণ মিলবে না। অভিযোগ, সরকারি স্বাস্থ্য কেন্দ্র বা হাসপাতালগুলিতে যে সব অ্যাম্বুলেন্স বা নিশ্চয় যান বর্তমানে চলে তার অনেক গাড়িরই বৈধ নথিপত্র নেই। তা নিয়মিত পরীক্ষাও করে দেখা হয় না।

অন্য বিষয়গুলি:

Agitation rape
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy