Advertisement
২৪ নভেম্বর ২০২৪
Police

কেন খুনের অভিযোগ, অবাক গ্রাম

কোচিং সেন্টারে দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রীর অপমৃত্যুর ঘটনায় তার এক নাবালক সহপাঠীকে খুনের মামলায় গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

কল্লোল প্রামাণিক
করিমপুর শেষ আপডেট: ১৬ জানুয়ারি ২০২০ ০১:৪২
Share: Save:

কোচিং সেন্টারে দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রীর অপমৃত্যুর ঘটনায় তার এক নাবালক সহপাঠীকে খুনের মামলায় গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তবে স্থানীয় লোকজন এই ঘটনায় হতবাক। কেননা মেয়েটির পকেট থেকে ‘সুইসাইড নোট’ পাওয়া গিয়েছে এবং হাতের লেখা মিলিয়ে দেখা হচ্ছে। ছেলেটিও গোটা এলাকায় শান্ত ও নিরীহ প্রকৃতির বলে পরিচিত। খুবই গরিব ঘর থেকে সে উঠে এসেছে এবং দু’মাস বাদে তার উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দেওয়ার কথা। কেবল মাত্র মৃতার মায়ের অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ কী করে খুনের মামলা রুজু করল, সেই প্রশ্ন উঠছে।

সোমবার দুপুর ৩টে নাগাদ করিমপুরে এক কোচিং সেন্টারের ঘরে গলায় ওড়নার ফাঁস লাগানো নূপুর খাতুনের (১৭) ঝুলন্ত দেহ মেলে। নুপূর স্থানীয় বেড় রামচন্দ্রপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়ত। তার বাড়ি পাশের পাইকশা গ্রামে। কিছু দিন যাবৎ বেড় রামচন্দ্রপুরের বাসিন্দা ওই সহপাঠীর সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠতা গড়ে ওঠে। তারা একই কোচিং সেন্টারে পড়ত। সোমবার সকালেও দু’জনে পড়তে গিয়েছিল। পড়ার পরে অন্য বন্ধুরা ফিরে গেলেও ওরা দু’জন থেকে গিয়েছিল বলে সহপাঠীদের কেউ-কেউ পুলিশকে জানিয়েছে।

মৃতার মা ফিরোজা বিবি সোমবার বলেছিলেন, বেলা ১১টা নাগাদ মেয়ে তাঁকে ফোনে বলেছিল, দুপুরে আর একটা পড়া আছে। সে বন্ধুদের সঙ্গে হোটেলে খেয়ে নিয়েছে। বিকেলে তার মৃত্যুসংবাদ আসে। রাতে তিনি থানায় খুনের অভিযোগ দায়ের করেন। তার আগেই অবশ্য ছেলেটি ও তার বাবা-ঠাকুর্দাকে থানায় ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে পুলিশ। লিখিত অভিযোগ পাওয়ার পরে রাতে ছেলেটিকে গ্রেফতার করা হয়।

ধৃতের বাবা রহমান শেখ গ্রামেই একটি ছোট মুদির দোকান চালান। বুধবার তিনি বলেন, “বাড়িতে আমরা কেউ সে ভাবে লেখাপড়া জানি না। আমার ওই এক মাত্র ছেলে, খুব কষ্ট করেই লেখাপড়া শেখাচ্ছি। মাধ্যমিকে ভালই ফল করেছিল ও। আর দু’মাস পরে ওর উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা। তারই প্রস্তুতি নিচ্ছিল।’’

রহমানের দাবি, মাস সাতেক আগে ছেলে নূপুরের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠতার কথা বাড়িতে জানিয়েছিল। সে দিন পড়তে গিয়ে কোনও বিষয়ে দু’জনের মনোমালিন্য হয়। তাঁর ছেলে নূপুরকে একটা ধাক্কা মারে এবং রাগারাগি করে সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ বাড়ি ফিরে আসে। ওর খুবই মনখারাপ ছিল, বাড়ি ফিরে কিছু খায়ওনি। বিকেল ৪টে নাগাদ মুরুটিয়া থানার পুলিশ এসে তাঁদের থানায় যেতে বলে। রহমান আর তাঁর বাবা থানায় যান। খানিক বাদে পুলিশ তাঁর ছেলেকেও থানায় নিয়ে যায়। তাঁর কথায়, ‘‘ওই রাতে আমায় আর ছেলেকে থানায় একটি ঘরে রেখে দেওয়া হয়। রাতে গ্রেফতার দেখিয়ে মঙ্গলবার সকালে ছেলেকে আদালতে নিয়ে যায়।”

বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর থেকেই থমথমে বেড় রামচন্দ্রপুর গ্রাম। সর্বত্র এই নিয়েই আলোচনা চলছে। নূপুরের মৃত্যু যে দুর্ভাগ্যজনক তা একবাক্যে সকলেই বলছেন। কিন্তু গ্রামের শান্তশিষ্ট, অতি সাধারণ একটি ছেলে তাকে খুন করে টাঙিয়ে দিতে পারে, এটা কারও বিশ্বাস হচ্ছে না। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ধৃতের এক প্রতিবেশী বলেন, ‘‘গ্রামে সবাই ওকে ভালবাসে। যার কাউকে একটা চড় মারার ক্ষমতাও নেই, সে কী করে এক জনকে মেরে ফেলতে পারে?’’ আর, রহমানের দাবি, ‘‘মিথ্যা অভিযোগ করে ওরা ছেলেটার ভবিষ্যৎ শেষ করে দিল। আমাদের গোটা পরিবারকে চরম বিপদে ফেলে দিল।”

পুলিশ কিসের ভিত্তিতে খুনের অভিযোগে নাবালক ছাত্রকে গ্রেফতার করল, বিশেষত যেখানে দু’মাসে বাদে তার উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা? এবং যেখানে মৃতার পকেটে ‘সুইসাইড নোট’ পাওয়া গিয়েছে যাতে লেখা রয়েছে তার মৃত্যুর জন্য ছেলেটি দায়ী নয়। করিমপুর থানা মৃতার মায়ের দায়ের করা অভিযোগ ছাড়া কোনও জোরালো কারণ দেখাতে পারেনি। পুলিশের একটি অংশের দাবি, কারও বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ দায়ের হলে তার বয়স বা সামনে পরীক্ষা আছে কি না, এ সব বিচার্য নয়।

তা হলে পুলিশ অভি‌যোগ পেলে ‘প্রাথমিক তদন্ত’ করে কেন? যদি কেউ স্রেফ সন্দেহের বশে অভিযোগ দায়ের করে, সেই ক্ষেত্রেও কি নির্বিচারে গ্রেফতার করা হয়? পুলিশকর্তাদের কাছ এই প্রশ্নের কোনও স্পষ্ট সদুত্তর মেলেনি। এসডিপিও (‌‌তেহট্ট) শান্তনু সেন শুধু বলেন, ‘‘নির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতেই ছেলেটিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এটা আত্মহত্যা না খুন, সেই বিচার তো আদালতে হবে। পুলিশ তথ্যপ্রমাণ পেশ করবে।’’

আর নূপুরের মা ফিরোজা বিবির বক্তব্য, ‘‘খুব কষ্ট করে মেয়েকে পড়াচ্ছিলাম। কিন্তু ছেলেটি ওকে বিয়ে করার জন্য চাপ দিচ্ছিল। রাজি না হলে খুন করবে বলেও হুমকি দিত। এই নিয়ে গোলমালের জেরেই আমার মেয়েকে ও খুন করেছে।’’ অভিযুক্ত নাবালক হওয়ায় মঙ্গলবার তাকে কৃষ্ণনগরে জুভেনাইল কোর্টে হাজির করিয়ে হোমে পাঠানো হয়েছে। শনিবার তাকে ফের আদালতে হাজির করানো হবে।

অন্য বিষয়গুলি:

Police Minor Classsmate Arrest Karimpur
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy