বহরমপুর কেন্দ্রীয় সংশোধনাগার থেকে মুক্তি পেলেন মহম্মদ কবীর হোসেন।
ফেসবুকে পরিচয়। তরুণীর কথাতেই কাঁটাতার পেরিয়ে তাঁর ভারতে আসা। কিন্তু যাঁর প্রেমে পড়ে ভূগোলের দাসত্ব ঘুচিয়ে এ দেশে এসেছিলেন, সেই তরুণীর অভিযোগের ভিত্তিতেই গ্রেফতার হতে হয় তাঁকে। তিন বছর জেলবন্দি থাকার পর দীর্ঘ আইনি লড়াই শেষে মুর্শিদাবাদ জেলা আদালতের নির্দেশে শুক্রবার মুক্তি পেলেন বাংলাদেশি যুবক মহম্মদ কবীর হোসেন। উত্তর ২৪ পরগনার বনগাঁ সীমান্ত দিয়ে রবিবার তাঁকে নিজের দেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। বহরমপুর কেন্দ্রীয় সংশোধনাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার পর কেঁদে ফেলেন কবীর। তাঁর পা কাঁপছিল আনন্দে। গলা বুজে এসেছিল। কাঁপা গলায় কবীর বলেন, ‘‘খুব আনন্দ হচ্ছে। সত্যিই বিশ্বাস করতে পারছি না! ভারতের বিচারব্যবস্থাকে ধন্যবাদ জানাই।’’
বহরমপুর কেন্দ্রীয় সংশোধনাগার সূত্রে জানা গিয়েছে, বাংলাদেশের নোয়াখালির বাসিন্দা কবীরের সঙ্গে মুর্শিদাবাদের ডোমকলের এক তরুণীর ফেসবুকে পরিচয় হয়। কিছু দিনের মধ্যেই ওই তরুণীর প্রেমে পড়ে যান যুবক। তরুণীর ডাকে ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে কবীর মুর্শিদাবাদে আসেন। এর পরেই ঘটনায় নাটকীয় মোড়। কবীর ডোমকলে আসতেই তাঁকে গ্রেফতার করে পুলিশ। জানানো হয়, তরুণীর দায়ের করা শ্লীলতাহানি ও প্রতারণার অভিযোগ ভিত্তিতে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তার পর থেকে জেলেই ছিলেন বাংলাদেশি যুবক। শুরুতে তিনি কোনও আইনি সাহায্য পাননি। কোনও আইনজীবী তাঁর হয়ে সওয়াল করতেও রাজি হননি।
মাস কয়েক আগে কবীরের কাহিনির কথা পৌঁছয় জেলা আইনি পরিষেবা কেন্দ্রে। এর পরেই কবীরের হয়ে সওয়াল করার জন্য নিয়োগ করা হয় আইনজীবী নীলাঞ্জন পাণ্ডেকে। সেই আইনি লড়াইয়ে জয় পেলেন বাংলাদেশি যুবক।
রবিবার জেল থেকে মুক্তি পাওয়ার পর আনন্দে আত্মহারা হয়ে পড়েন কবীর। বলেন, ‘‘জেলা আইনি পরিষেবা দফতরের সাহায্য না পেলে আমি হয়তো বেরোতেই পারতাম না। ভালবাসার নামে এ দেশে এসে এ ভাবে জেল খাটতে হবে, ভাবতে পারিনি!’’
কবীরের আইনজীবী নীলাঞ্জন বলেন, ‘‘ওই তরুণী কবীরকে কিছু গোপন ছবি পাঠিয়েছিল। তার পর তাঁর মনে হয়েছিল, ছেলেটি যদি ছবিগুলো কোথাও ছড়িয়ে দেয়! তাই কবীরকে ভুল বুঝিয়ে বাংলাদেশ থেকে ডেকে আনেন তরুণী। কবীর এখানে আসতে তাঁকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়া হয়। কবীর প্রায় তিন বছর মতো জেলে ছিল। জেলা আইনি সহায়তা কেন্দ্রের তরফে আমাকে কবীরের আইনজীবী হিসাবে নিয়োগ করা হয়। বিনা পারিশ্রমিকেই ওঁর হয়ে মামলা লড়েছি আমি। কবীরের বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগই প্রমাণ হয়নি। আজই (রবিবার) ওঁকে বাংলাদেশ ফেরত পাঠানো হচ্ছে।’’
বাংলাদেশের সমাজসেবী পারভিনা আমিন বলেন, ‘‘প্রতিবেশী কোনও দেশের মানুষকে বিনামূল্যে যে ভাবে আইনি পরিষেবা দেওয়া হল, তা নিঃসন্দেহে বাকি দেশগুলির অনুকরণীয়। এই ঘটনায় ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে দীর্ঘকালীন মৈত্রী ও সৌভ্রাতৃত্বের সম্পর্ক আরও পোক্ত হবে বলেই মনে করছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy