Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
গঙ্গা-পদ্মার গ্রাসে মানচিত্র থেকে হারাচ্ছে জনপদ
Ganga

গঙ্গা গিলল শামসুলের ভিটে

গত কয়েক বছর ধরেই নদীর গ্রাসে জমি হারাচ্ছেন মানুষ। তা বলে আস্ত গ্রাম গিলতে এলাকা দেখেনি কখনও।

নদীগর্ভে বিলীন, ধানঘড়ায়। নিজস্ব চিত্র

নদীগর্ভে বিলীন, ধানঘড়ায়। নিজস্ব চিত্র

জীবন সরকার
শমসেরগঞ্জ শেষ আপডেট: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০৪:২৩
Share: Save:

প্রথম যে দিন বাঁক নিয়েছিল গঙ্গা, ধানঘড়ার মানুষের বুক কেঁপেছিল ঠিকই, তবে আশায় বুক বেঁধে ছিলেন, ‘নদী ঠিক ফিরে যাবে!’ নদী অবশ্য ফেরেনি। গ্রামের কোলে এসে থমকেও যায়নি। বরং গত দু’সপ্তাহ ধরে প্রতি দিন একে একে গিলে নিয়েছে প্রায় সাড়ে সাতশো পরিবারের গ্রামটার একেকটা পাড়া-পল্লি। শেষতক শুক্রবার মানচিত্র থেকেই প্রায় মুছে গেল ধানঘড়া।

শমসেরগঞ্জের ধানঘড়া, হিরানন্দপুর এলাকায় ভাঙন নতুন নয়। গত কয়েক বছর ধরেই নদীর গ্রাসে জমি হারাচ্ছেন মানুষ। তা বলে আস্ত গ্রাম গিলতে এলাকা দেখেনি কখনও। ভাঙনের শেষ পর্বে নদী যেন ভয়াবহ হয়ে উঠেছিল। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে গঙ্গার গ্রাসে একে একে হারিয়ে গেল, সত্তরটি বাড়ি। বাটি-ঘটি হাতে জীবন নিয়ে কোনওরকমে পালিয়ে গেলেন পুরনো বাসিন্দারা। অভিযোগ, এত দিন ধরে ভাঙন হচ্ছে অথচ স্থানীয় প্রশাসনের কোনও কর্তা-ব্যক্তিকেই গ্রামে আসতে দেখা যায়নি। এ দিন তাঁদের কারও হদিশ না মেলায় ক্ষোভ উগড়ে দেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তবে বিকেলের দিকে গ্রামে আসেন শমসেরগঞ্জের বিডিও জয়দীপ চক্রবর্তী। ততক্ষণে গ্রামটাই নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছে। নিরাশ্রয় হয়ে গাছতলায় বৃষ্টির হাত থেকে নিজেদের বাঁচাচ্ছেন বাসিন্দারা।

গ্রামের সালমা বেওয়া, মহম্মদ তাসিরুদ্দিন গাছতলায় বসে গঙ্গার দিকে তাকিয়ে এক টানা কেঁদে চলেছেন। বলছেন, ‘‘জানি না, কোথায় থাকব। যাবার যে কোনও জায়গা নেই।’’ রাস্তার উপরেই ফ্যালফ্যালে চোখে নদীর দিকে তাকিয়ে রয়েছেন শামসুল আলম। তাঁর মাটির ভিটে একটু আগেই টুপ করে গিলে নিয়েছে নদী। শামসুল বলছেন, ‘‘নদী আর কত খাবে, এ তো প্রথম নয়। সে বার নদী যখন প্রথমবার আমার ঘরটা গ্রাস করল তখন আমি যুবা। তার পরে তো এই ধানঘড়ায় ঘর তুলি ফের। তখন থাকতাম ধুলিয়ানের পরানপাড়ায়। সেখানে গোটা পাড়াটা দেড় ঘণ্টায় গিলেছিল গঙ্গা। আজ এই শেষ বয়সে ফের প্রথম জীবনের কথা মনে পড়ে গেল।’’

তিনি জানান, এ গ্রামে তাঁর দাদুর ঘর ছিল। তিনিই গৃহহীন শামসুলদের এখানে ভিটে গড়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন। শামসুল বলছেন, ‘‘সেটুকুও সইল না নদীর, গিলে খেল!’’ কিন্তু সে দিন তো দাদু ঠাঁই দিয়েছিল, আজ কে দেবে? শামসুল জানেন না।

অন্য বিষয়গুলি:

Ganga Murshidabad
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy