কাঁদতে কাঁদতেই তাপস সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, তাঁর বিরুদ্ধে চক্রান্ত করা হলেও তিনি দল ছাড়বেন না। নিজস্ব চিত্র।
তিনি রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের শিকার। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে আসা কেন্দ্রীয় তদন্তকারী দলের আধিকারিকেরাও নাকি তাঁকে এমনটা জানিয়েছেন। তাঁর বাড়ি থেকে সিবিআইয়ের দল বেরিয়ে যেতেই দলের প্রতি ক্ষোভ উগরে দিয়ে এমনটাই মন্তব্য করলেন তেহট্টের তৃণমূল বিধায়ক তাপস সাহা। এই সব কথা বলতে বলতে কেঁদেও ফেলেন তাপস। কাঁদতে কাঁদতেই তিনি সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, তাঁর বিরুদ্ধে চক্রান্ত করা হলেও তিনি দল ছাড়বেন না। মোকাবিলা করবেন রাজনৈতিক ভাবে।
শুক্রবার বিকেল নাগাদ তাপসের বাড়িতে হানা দেয় সিবিআইয়ের একটি দল। তার পর থেকে টানা তল্লাশি চলছিল তাঁর বাড়িতে। শনিবার সকাল ৬টা নাগাদ তল্লাশি অভিযান শেষ করে তাঁর বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান সিবিআই আধিকারিকেরা। এর পরই সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি জানান যে, তিনি তৃণমূল এবং বিজেপির রাজনৈতিক চক্রান্তের শিকার। তাঁর কথায়, ‘‘আমি রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের শিকার। বিজেপি-তৃণমূল সবাই চক্রান্ত করেছে। স্থানীয় নেতা মলয় বিশ্বাস এবং মিঠু শাহের নাম তদন্তকারীদের মুখে। আমার কাছে মিঠু ও মলয়ের নাম বার বার জানতে চাওয়া হয়েছে। এটা পরিষ্কার যে, দলের স্থানীয় কেউ ছাড়া ওই দুই নেতার ভূমিকা দলে কী, তা অন্য কারও জানার কথা নয়। একদম পরিকল্পনামাফিক এটা হয়েছে। ওঁরা (সিবিআই আধিকারিকেরা) নিজেরাও বলছেন যে, আমি সম্পূর্ণ ভাবে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছি। ওঁরা বলছেন, আপনার দলেরই কেউ আপনার নাম করেছে। এত কিছু হয়ে গেল দল পাশে দাঁড়ায়নি। কেউ খোঁজ করেনি। আমার জেলা সভাপতি আমার খোঁজ নেননি। আমার জেলার মন্ত্রী উজ্জ্বল বিশ্বাস কথা বলেননি। আরও উঁচুতলার কথা তো বাদই দিলাম।’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘দলের সঙ্গে কেউ যোগাযোগ না করলেও খারাপ লাগেনি। এটা রাজনীতি। রাজনীতিতে এ সব হতেই পারে। আমি অনেক লড়াই করেছি। চক্রান্তের শিকার হলেও তৃণমূল ছাড়ছি না। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল করি। জীবনের শেষ রক্তবিন্দু পর্যন্ত দল ছাড়ব না। আমি লড়াই করব। যাঁরা আমার বিরুদ্ধে চক্রান্ত করেছে, তাদের বিরুদ্ধে আমার লড়াই জারি থাকবে। এবং আমার কর্মীরা এখন টগবগ করে ফুটবে। পঞ্চায়েত নির্বাচনে ভাল ফল করব, করব, করব। বিজেপি দল এবং তৃণমূলের যাঁরা গোষ্ঠীবাজি করবেন তাঁদের একদম উড়িয়ে দেব। তাপস সাহা মানে তাপস সাহা।’’
তাপস এ-ও জানান যে, তিনি তদন্তকারী সিবিআই আধিকারিকদের সহযোগিতা করেছেন। যা যা জিজ্ঞাসা করা হয়েছে সব কিছু জানিয়েছেন। তবে তাঁর দু’টি ফোন এবং তাঁর ছেলের কিছু নথি সিবিআই আধিকারিকেরা সঙ্গে করে নিয়ে গিয়েছেন বলেও তাপস জানিয়েছেন। নিয়ে যাওয়া হয়েছে তাঁর স্কুলশিক্ষিকা ভাইঝিরও কিছু নথি। সেই প্রসঙ্গে তাপস বলেন, ‘‘আমি সম্পূর্ণ ভাবে সহযোগিতা করেছি সিবিআইকে। আমার দু’টো ফোন নিয়ে গিয়েছে। আমার ছেলের কাগজ নিয়ে গিয়েছে। আমার মেজ দাদার মেয়ের নথি নিয়ে গিয়েছে। আমার মেজ দাদার মেয়ে নিজের যোগ্যতায় চাকরি পেয়েছে।’’
টাকা রেখেছেন কি না, তা খুঁজতে তাপস যে কলেজের পরিচালন সমিতির সদস্য, সেই কলেজেও গিয়েছিল সিবিআই। সেখানে প্রতিটি ঘরে তল্লাশি চালানো হয়। ছাত্র ইউনিয়নের ঘরেও তল্লাশি চলে। তাপসের কথায়, ‘‘আমাকে কলেজে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। টাকা কোথাও লুকিয়ে রেখেছি কি না তা দেখতে। উপর মহল থেকে তদন্তকারীদের ফোন করে বলা হচ্ছে এটা করো, সেটা করো, মহিলাদের বাথরুমে যাও। কিন্তু কিছু পাওয়া যায়নি। আমি কোনও নথিও পোড়াইনি।’’
শুক্রবার ভোর পাঁচটা নাগাদ তাপসকে ডেকে আবার জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেন কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার আধিকারিকেরা। রাতের অন্ধকারে তাপসের পুকুরের ধারে কিছু নথি পোড়ানোর অভিযোগ উঠেছিল। ভোরবেলা সেখানেও তল্লাশি শুরু করে সিবিআই। ঘটনাস্থলটি খতিয়ে দেখে সিবিআই। পোড়া নথির বেশ কিছু নমুনাও সংগ্রহ করে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা। এর পরই সকাল ৬টা নাগাদ তাঁর বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান সিবিআই আধিকারিকেরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy