হাসপাতালের বেডে ওই বৃদ্ধ। নিজস্ব চিত্র
রক্ত গড়িয়ে পড়ছে শরীরের একাধিক ক্ষত থেকে। তবু তিনি প্রতিক্রিয়াহীন। বিকেল থেকেই রঘুনাথগঞ্জের ব্যস্ত ফুলতলা সড়কের পাশে বসে ছিলেন তিনি। রুক্ষ্ম কেশ, মলিন বেশ। সারা শরীর রক্তে ভেজা। আশপাশ দিয়ে যাঁরা গিয়েছেন, অনেকেই একটিবার ফিরেও তাকাননি। যাঁরা তাকিয়েছেন তাঁরা বিবেকের দংশনে ক্ষণিকের জন্য থমকে দাঁড়ালেও করোনা-আতঙ্কে ছুঁয়েও দেখেননি ওই বৃদ্ধকে। এভাবে কতক্ষণ পড়ে ছিলেন কে জানে। শেষ পর্যন্ত ওই বৃদ্ধ নজরে আসে ফুলতলা পাড়ার কয়েক জন যুবকের। তখন রাত প্রায় আটটা। সকলেই মুখ ফিরিয়ে চলে গেলেও এড়িয়ে যেতে পারেননি ফুলতলার মইদুল, লালবাবু, গিয়াস, মোজাহিদ শেখরা। এঁরা কেউ ব্যবসা করেন। কেউ কাজ করেন অন্যের দোকানে, কেউ বা পড়ুয়া। তাঁরাই ওই বৃদ্ধকে জঙ্গিপুর হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে ভর্তি করেন।
জুতো ব্যবসায়ী মইদুল বলছেন, ‘‘ওই বৃদ্ধের শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ক্ষত। সেখান দিয়ে রক্ত পড়ছিল। কোনও দুর্ঘটনায় আহত হয়েছিলেন নাকি রাস্তায় পড়ে গিয়ে এই আঘেত, তা তিনি বলতে পারছেন না। বয়স সত্তর ছুঁইছুঁই। হাঁটাচলা করার শক্তি নেই। সব সময় মুখ দিয়ে নাল পড়ছে। করোনা নিয়ে ভয় তো আছেই। তবু ফেলে যেতে পারিনি। তাই টোটোয় করে জঙ্গিপুর মহকুমা হাসপাতালে ওঁকে এনে ভর্তি করে দিই শুক্রবার রাতে।’’ সেই শুরু। তারপর থেকে নিয়মিত ওই বৃদ্ধের খোঁজখবর রাখছেন ওই যুবকরা। লালবাবু শেখ বলেন, ‘‘পরদিন হাসপাতালে গিয়ে জানতে পারি, বৃদ্ধের শারীরিক অবস্থা বেশ খারাপ। অনেক দিন ধরে উনি স্নান করেন না। এতদিন প্রায় অভুক্তই ছিলেন। আমরা ওঁকে স্নান করিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি পোশাক, খাবার কিনে দিই। হাসপাতালে চিকিৎসায় আপাতত কিছুটা সুস্থ তিনি। তবে এখনও কোনও কথা বলছেন না ওই বৃদ্ধ।’’ গিয়াস বলেন, ‘‘সুস্থ হলেও চলার শক্তি নেই। রাস্তায় পড়ে থাকা এমন এক বৃদ্ধকে ফেলে রেখে যেতে পারিনি। তাই পাঁচ বন্ধু মিলেই আপাতত হাসপাতালে রেখেই তাঁকে স্বাভাবিক করে তোলার চেষ্টা হচ্ছে। সেই সঙ্গে চেষ্টা চলছে তাঁর পরিচয় খুঁজে বের করার।’’ তাঁর ছবি শেয়ার করা হচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। কিন্তু এখনও মেলেনি পরিচয়ের কোনও সূত্র। মইদুল বলেন, ‘‘বহু চেষ্টা করেও বৃদ্ধকে কথা বলাতে পারিনি। শুধু একবার বলেছেন, ‘আমার নাম আহাদ, বাড়ি লালগোলা’। এর বেশি কিছু জানা যায়নি। পুলিশকেও জানানো হয়েছে ঘটনার কথা।’’ যতদিন না বাড়ির লোকজনের খোঁজ মিলছে, তাঁকে আগলে রাখতে চাইছেন ওই যুবকরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy