নিজর বাড়ির সামনে তৈবুর শেখ। নিজস্ব চিত্র।
আর্জি শুনে অবাক প্রশাসন।
আবাস প্রকল্পে ঘর পেতে যখন প্রতিটি ব্লকে ব্লকে মরিয়া চেষ্টা চলছে, তখন সেই তালিকা থেকে নাম কাটাতে চাইছেন মুর্শিদাবাদের শেফালিপুর পঞ্চায়েতের রাধাকৃষ্ণপুরের বাসিন্দা তৈবুর শেখ। শুক্রবার রঘুনাথগঞ্জ ২-এর বিডিও দেবোত্তম সরকার তৈবুরের আর্জি শুনে অবাক।
তৈবুরের বক্তব্য, “তিল তিল করে জমানো সঞ্চয় থেকে নিজেই নিজের বাড়ি এখন গড়ে নিতে পারব। তাই সরকারি আবাস প্রকল্পে ঘর নিতে চাই না। যাঁরা আমার চেয়েও গরিব, সামর্থ্য নেই, এ রকম কোনও পরিবারকে ঘরটা দিলে তিনি অনেকউপকৃত হবেন।”
তৈবুরের বর্তমান বাড়িটির চালা টিনের। দু’টি ঘর। সেখানে থাকেন তিনি, তাঁর স্ত্রী ও বছর তিনেকের একটি মেয়ে। জমিজমা নেই বললেই চলে, অন্যের জমি লিজ নিয়ে চাষ করেন। পেশা বলতে একটি বেসরকারি স্কুলে সামান্য বেতনের চাকরি। শিক্ষাগত যোগ্যতা স্নাতক। স্নাতক তাঁর স্ত্রী পরভিন খাতুনও।
সব শুনে বিডিও আরও কৌতুহলী হয়ে বললেন, “আপনার ঘর তোকাঁচা, টিনের ছাউনি দেওয়া। আপনি সরকারি নিয়মে ঘর পাওয়ার হকদার। তা হলে প্রাপ্য অধিকার আপনি ছাড়বেন কেন?”
তৈবুরের জবাব, “অন্যের কথা বাদ দিন। যার সামর্থ্য আছে তার কখনও উচিত নয় কেউ দিচ্ছে বলেই তা নেওয়া। এমন বহু গরিব আছেন, যাঁদের ঘর দিয়ে একটুতেই জল পড়ে। দরকারটা তাঁদের। তাঁরা আসল হকদার। সরকারি প্রকল্পতাদের জন্যই।”
আর কথা বাড়াননি বিডিও। নিজের ঘরে ডেকে পাঠান পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি মোমেনা খাতুনকে। প্রতিদিনের মতো বিডিও অফিসে আবাস নিয়ে ক্ষোভ বিক্ষোভ দেখতে এসেছিলেন জঙ্গিপুর পুলিশ ফাঁড়ির ওসি পলাশ দাস। বিডিও-র ঘরে ঢুকে সব কথা জেনে হতবাক তিনিও। আবাস নিয়ে এই নজিরবিহীন ঘটনায় তিনি পাশের দোকান থেকে ছুটে গিয়ে নিয়ে আসেন একটি দামি শাল। আনা হয় মিষ্টি ও ফুলের তোড়া। ব্লক অফিসেই একে একে তৈবুরকে সংবর্ধনা দিয়ে তুলে দেন সব উপহার।
বিডিও জানান, শুক্রবার সায়েদ আলি ও সুলতানা পরভিন নামে দু’জনও আবাস প্রকল্পে ঘর নিতে অনিচ্ছা প্রকাশ করে লিখিত আবেদন করেছেন। প্রতিমন্ত্রী আখরুজ্জামান তাঁদের ব্লক অফিসে নিয়ে আসেন। মন্ত্রী বলেন, ‘‘এঁরা দু’জনে তৃণমূল সংখ্যালঘু সেলের ব্লক সভাপতির ছেলে ও মেয়ে। তাঁরা নিজেরাইতাঁদের ঘর করে নিতে পারবেন। তাই তাঁদের নিয়ে আমি ব্লক অফিসে গিয়ে আবাসে নাম কাটানোর আবেদন জমা দিয়ে এসেছি।’’
তৈবুর বলেন, “আমার বাড়িটা পদ্মার ধারে। নিজের হাতেই গড়েছি। তখন পাকা বাড়ি করার সামর্থ্য ছিল না। এখন সামর্থ্য হয়েছে। একটু দূরে কাঠা তিনেক জমি আছে। সেখানেই গড়ে নিতে পারব ছোট্ট বাড়ি। স্ত্রীও আমার সঙ্গে একমত। তাই সরকারি আবাস প্রকল্পে ঘর নিতে চাইনি।’’ তার মধ্যে এসেছে খুশির খবরও। উচ্চ প্রাথমিকে শিক্ষকতার কাউন্সেলিংয়ে ডাক এসেছে তৈবুরের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy