Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪
Kala Azar

কালাজ্বরে আক্রান্তের সন্ধান, উদ্বেগ

২০০৯ সাল থেকে জেলায় এক জনও কালাজ্বরে আক্রান্ত রোগীর সন্ধান মেলেনি। ফলে, অনেকটাই নিশ্চিন্ত ছিলেন স্বাস্থ্য কর্তারা।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কৃষ্ণনগর  শেষ আপডেট: ১৫ জুলাই ২০২৪ ০৬:৩০
Share: Save:

আবারও কালাজ্বর আক্রন্তের সন্ধান মিলল নদিয়ায়। দিনকয়েক আগে করিমপুর ২ ব্লকে এক আক্রান্তের সন্ধান পাওয়া যায়। বর্তমানে শক্তিনগর জেলা হাসপাতালের ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিট (সিসিইউ)-এ চিকিৎসাধীন ওই রোগী।

গত বছরও জেলায় দু’জন কালাজ্বরে আক্রান্ত রোগীর সন্ধান মিলেছে। তারও আগে একাধিক ব্লকে একাধিক রোগীর সন্ধান মেলে। এই ভাবে জেলার বিভিন্ন প্রান্তে একের পর পর কালাজ্বরে আক্রান্ত রোগীর সন্ধান মেলায় রীতিমতো উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ছেন জেলা স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা। অনেকেই মনে করছেন, নদিয়া জেলায় আবার নতুন করে কালাজ্বরের প্রাদুর্ভাব হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে। ফলে, কালাজ্বর মোকাবিলায় নানান ধরনের পদক্ষেপ করছে স্বাস্থ্য দফতর। এই পরিস্থিতিতে জেলা থেকে আবার নতুন করে কালাজ্বর নির্মূল করা রীতিমতো চ্যালেঞ্জের কাজ বলেই মনে করছেন চিকিৎসকদের কেউ কেউ।

২০০৯ সাল থেকে জেলায় এক জনও কালাজ্বরে আক্রান্ত রোগীর সন্ধান মেলেনি। ফলে, অনেকটাই নিশ্চিন্ত ছিলেন স্বাস্থ্য কর্তারা। কিন্তু ২০১৮ সালে আচমকাই করিমপুর ২ ব্লকের নারায়ণপুর গ্রামে কালাজ্বরে আক্রান্ত এক রোগীর সন্ধান মেলে। সেই রেশ মিটতে না মিটতে পরের বছর ২০১৯ সালে কালীগঞ্জ ব্লকের জুরানপুর গ্রামে আবারও এক জন কালাজ্বরে আক্রান্ত রোগীর সন্ধান মেলে। ফলে, কালাজ্বর নতুন করে মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। কালাজ্বর যাতে কোনও ভাবেই আবার ফিরে আসতে না পারে, তার জন্য প্রচারের মাধ্যমে মানুষকে সচেতন করার পাশাপাশি একাধিক পদক্ষেপ করা শুরু হয়। শুরু হয় ‘অ্যাকটিভ কেস সার্ভে’। বাড়ি বাড়ি গিয়ে সমীক্ষা করেন আশাকর্মী ও কালাজ্বর টেকনিক্যাল সুপারভাইজারেরা। বিশেষ করে, যে দু’টি গ্রামে কালাজ্বর রোগীর সন্ধান মিলেছিল, সেই গ্রামে শুরু হয় কালাজ্বর নির্মূল করার বিশেষ অভিযান। বাড়ি বাড়ি গিয়ে কালাজ্বর আক্রান্ত রোগীর ছবি দেখিয়ে মানুষকে সচেতন করা হয়। পাশাপাশি, ছ’মাস অন্তর কালাজ্বরের বাহক বেলেমাছি মারতে প্রতিটি বাড়ির ভিতরে ‘সিন্থেটিক পাইরেথ্রয়েড’ কীটনাশক স্প্রে করা হয়।

কিন্তু তাতেও শেষরক্ষা হয়নি। চিকিৎসকদের অনেকেই আশঙ্কা করছিলেন যে, জেলায় কালাজ্বরের উৎস থেকে গিয়েছে। সেই আশঙ্কা সত্যি প্রমাণ করে গত বছর হাঁসখালির বগুলা ও তেহট্ট ২ ব্লকের চরকপোতা গ্রামে দু’জন কালাজ্বর আক্রান্তের সন্ধান মেলে। তাতেই আবারও নড়েচড়ে বসে স্বাস্থ্য দফতর। খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, তেহট্ট ২ ব্লকের রোগী আগেও এক বার কালাজ্বরে আক্রান্ত হয়েছিলেন। তাঁর শরীরে আবার নতুন করে কালাজ্বরের লক্ষণ ফুটে ওঠে। আর দক্ষিণ দিনাজপুরের কালাজ্বর-সংক্রমিত এলাকা থেকে ঘুরে এসেছিলেন হাঁসখালির আক্রান্ত রোগী। স্বাস্থ্য কর্তারা জানাচ্ছেন, করিমপুর ২ ব্লকে যে রোগীর সন্ধান মিলেছে, তিনি মুর্শিদাবাদের ডোমকলে কালাজ্বর-সংক্রমিত এলাকায় আত্মীয়ের বাড়ি থেকে ঘুরে আসার পরেই তাঁর শরীরে এই জ্বরের লক্ষণ ফুটে ওঠে। এর পরেই রোগীকে শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে নিয়ে এসে চিকিৎসা শুরু করে দেওয়া হয়।

যে সকল এলাকায় কালাজ্বর-আক্রান্ত রোগীর সন্ধান মিলেছে, সেই সকল এলাকায় লাগাতার প্রচার, বাড়ি বাড়ি গিয়ে সমীক্ষা করা হচ্ছে। পাশাপাশি, বেলেমাছি নাশক কীটনাশক স্প্রে করা হচ্ছে। বেলেমাছি যেহেতু গোবরের ভিতরে জন্মায়, সেই কারণে ওই গ্রামগুলিতে বাড়ির আশেপাশে যাতে গোবর পড়ে না থাকে, তার জন্যও সচেতন করা হচ্ছে। পাশাপাশি, ওই সকল এলাকায় ‘অ্যাক্টিভ কেস ডিটেকশন’ কর্মসূচির মাধ্যমে প্রতিটি বাড়িতেই সমীক্ষা চলছে।

কিন্তু কেন এ ভাবে জেলায় একের পর এক কালাজ্বরে-আক্রান্তের সন্ধান মিলছে? কেন জেলা থেকে ওই রোগ নির্মূল করা যাচ্ছে না? জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক জ্যোতিষচন্দ্র দাস বলেন, “আমরা খুব ভাল করে সমীক্ষা করেছি। স্থানীয় ভাবে কেউ আক্রান্ত হননি। সকলের ক্ষেত্রে বাইরে থেকে আক্রান্ত হয়ে আসার কথা জানতে পারছি। তবে আমরা কালাজ্বর প্রতিরোধের জন্য প্রয়োজনীয় সমস্ত ধরনের পদক্ষেপ করছি।”

অন্য বিষয়গুলি:

Karimpur Black Fever
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy