—প্রতীকী ছবি।
মুর্শিদাবাদের নবগ্রামে পুলিশি হেফাজতে মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে শোরগোলের মধ্যে আবার কাঠগড়ায় পুলিশ। বহরমপুরে ভাগীরথীতে ঝাঁপ দেওয়া যুবকের দেহ উদ্ধার হল রবিবার রাতে। মৃতের পরিবারের দাবি, ছেলেকে পুলিশ আটক করেছিল। পুলিশের হাত থেকে বাঁচতেই নদীতে ঝাঁপ দিয়েছিলেন যুবক। এই ঘটনাকে ‘খুন’ বলেই দাবি করেছে পরিবার। যদিও পুলিশের তরফে এই অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে। জেলা পুলিশের বক্তব্য, কাউকেই আটক বা গ্রেফতার কিছুই করা হয়নি। যুবকের নদীতে ঝাঁপ দেওয়ার খবরও অনেক পরে পেয়েছে পুলিশ।
পুলিশ সূত্রে খবর, মৃত যুবকের নাম অতনু ঘোষ (১৯)। অতনু বহরমপুরের সৈদাবাদ এলাকার বাসিন্দা। বহরমপুর কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র তিনি। পরিবারের অভিযোগ প্রসঙ্গে বহরমপুর পুলিশ জেলার সুপার সুরিন্দর সিংহ বলেন, ‘‘যে কোনও মৃত্যু দুঃখজনক। তবে, পুলিশ অতনু ঘোষ নামে কাউকে গ্রেফতার করেনি। এমনকি আটকও করেনি। পরিবারের পক্ষ থেকে মিথ্যা অভিযোগ করা হচ্ছে। টহলরত পুলিশভ্যান দেখে কেউ গঙ্গায় ঝাঁপ দিলে পুলিশ কী করবে!’’
পরিবার এবং স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, শনিবার সন্ধ্যায় বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন অতনু। কাছেই একটি স্কুলের মাঠে বন্ধুদের সঙ্গে বসে মোবাইলে গেম খেলছিলেন। অভিযোগ, সেই সময় সৈদাবাদ ফাঁড়ির পুলিশ অতনুকে আটক করে। তাঁকে নিয়ে যাওয়ার সময় ভাগীরথীতে ঝাঁপ দেন যুবক। এর পর রাতে তাঁর দেহ উদ্ধার হয়। বাবা নির্মল ঘোষের দাবি, অতনুর বন্ধুদের থেকে তিনি জেনেছেন, পুলিশের হাত থেকে বাঁচতেই ভাগীরথীতে ঝাঁপ দিয়েছেন তাঁর ছেলে। পুলিশ ভেবেছিল, অতনু সাঁতরে পালানোর চেষ্টা করছেন। তাই, তাঁকে চারদিক দিয়ে ঘিরে ধরা হয়। সেই সময় আরও ভয় পেয়ে নদীর মাঝ বরাবর সাঁতরাতে গেলে ভেসে যান অতনু। নির্মলের আরও দাবি, ছেলে যখন ভেসে যাচ্ছিলেন, সেই সময় পুলিশ তাঁকে ছেড়ে চলে আসে। এই ঘটনা শুরুতে পরিবারকে জানানো হয়নি বলেও অভিযোগ তুলেছেন মৃতের বাবা। নির্মল বলেন, ‘‘দোকান থেকে ফিরে ছেলেকে বাড়িতে দেখিনি। রাত বাড়তে থাকায় খোঁজখবর করা শুরু করি। দেখি, ফোন বন্ধ। ফাঁড়িতেও খবর দিই। এর পর পুলিশ আমাদের সবটা জানায়। প্রায় ৩০ ঘণ্টা ধরে নদীতে তল্লাশি চালিয়ে রবিবার রাতে ছেলের দেহ পাওয়া গিয়েছে। ছেলে যখন ডুবে যাচ্ছিল, তখন ওকে বাঁচানোর পরিবর্তে আরও ভয় দেখানো হয়। ছেলেকে খুন করা হয়েছে।’’
পাল্টা জেলা পুলিশ সূত্রে দাবি, সৈদাবাদ ফাঁড়ির পুলিশ প্রতি দিনের মতো এলাকায় টহল দিচ্ছিল। টহলরত পুলিশভ্যান ওই এলাকায় পৌঁছলে অতনু গঙ্গায় ঝাঁপ দেন। পুলিশ সেই খবর অনেক পরে পেয়েছে। পুলিশের গাড়ি দেখে কেন গঙ্গায় ঝাঁপ দিলেন অতনু? সেই প্রশ্ন তুলছেন পুলিশের আধিকারিকেরা। জেলা পুলিশের এক আধিকারিক জানান, স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ তুলছিলেন যে, দীর্ঘ দিন ধরেই সৈদাবাদ এলাকায় হেরোইন আসক্তদের দৌরাত্ম্য বাড়ছে। তা নিয়ন্ত্রণেই নিয়মমাফিক এলাকায় টহল দেওয়া হয়। পুলিশের টহলদার গাড়ি দেখে কেউ যদি নদীতে ঝাঁপ দেন, তার দায় পুলিশের উপর বর্তায় কি না, সেই প্রশ্নই তুলছেন পুলিশ আধিকারিকদের একাংশ।
নবগ্রামের পুলিশি হেফাজতে গোবিন্দ ঘোষের মৃত্যুর ঘটনায় পুলিশের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের হয়েছে। ওই ঘটনায় সাসপেন্ড হওয়া নবগ্রাম থানার ওসি অমিত ভকত এবং তদন্তকারী অফিসার (আইও) শ্যামল মণ্ডলের বিরুদ্ধে রবিবার খুনের অভিযোগ দায়ের করেন মৃতের বাবা ষষ্ঠী ঘোষ। গত ২৮ জুলাই নবগ্রামের সিঙ্গার গ্রামে প্রদীপ ঘোষ নামে কলকাতা পুলিশের এক কর্মীর বাড়িতে সোনার গয়না-সহ লক্ষাধিক টাকা চুরির অভিযোগ ওঠে। সেই দিনই থানায় অভিযোগ দায়ের করেন প্রদীপের ছেলে প্রবাল। পুলিশ তদন্তে নেমে বুধবার গ্রামেরই যুবক গোবিন্দকে নিয়ে যায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য। পরিবারের দাবি, তিন দিন ধরে যুবককে আটকে রেখে অত্যাচার চালানো হয়েছে। সেই অত্যাচারেই শুক্রবার রাতে গোবিন্দের মৃত্যু হয়। থানায় লিখিত অভিযোগে মৃতের বৃদ্ধ বাবা ষষ্ঠী দাবি করেছেন, ছেলেকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে থানায় পিটিয়ে মেরে ফেলা হয়েছে। এই ঘটনায় অভিযুক্ত পুলিশকর্মীদের আড়াল করার চেষ্টারও অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে। বহরমপুর পুলিশ জেলার সুপার সুরিন্দর অবশ্য সব দিক খতিয়ে দেখে পদক্ষেপের আশ্বাস দিয়েছেন। গোবিন্দকে দলীয় কর্মী বলে দাবি করে শাসকদলের সমালোচনায় সরব হয়েছে বিজেপি। নবগ্রামের ঘটনা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি লিখেছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি তথা বহরমপুরের সাংসদ অধীর চৌধুরী। এ সবের মধ্যেই আবার কাঠগড়ায় পুলিশ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy