প্রতীকী ছবি।
জেলা পরিষদের বন ও ভূমি কর্মাধ্যক্ষ তথা উত্তর খড়গ্রাম ব্লক তৃণমূলের সভাপতি মফিজুদ্দিন মণ্ডলের(৫৬) মৃত্যু হল। বৃহস্পতিবার ভোরে বহরমপুরে মাতৃসদন করোনা হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। বুধবার সন্ধ্যায় তাঁকে সেখানে ভর্তি করাকে কেন্দ্র করে অশান্তি তৈরি হয়। মফিজুদ্দিনের পরিজন ও অনুগামীদের বিরুদ্ধে হাসপাতালের এক চিকিৎসককে মারধর ও স্বাস্থ্যকর্মীদের হেনস্থার অভিযোগ ওঠে। অন্য দিকে মৃতের পরিবারের লোকজন বুধবার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে কর্তব্যে গাফলতির অভিযোগ তুলেছেন। এরই মধ্যে বৃহস্পতিবার ভোরে মফিজুদ্দিনের মৃত্যু হয়েছে। যার জেরে করোনা হাসপাতালের ভূমিকা নিয়ে বিতর্ক দানা বেধেছে। মফিজুদ্দিনের মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে রাজনৈতিক মহলেও।
মফিজুদ্দিনের পরিবারের দাবি, তাঁর খুব শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল। হাসপাতাল নিয়ে গেলে চিকিৎসক থেকে কর্মীরা নানা অজুহাতে দেরি করছিল। তা দেখে মফিজুদ্দিনের কিছু অনুগামীর সঙ্গে ধস্তাধস্তি হয়েছে। মারধরের বা হামলার অভিযোগ ঠিক নয়। উল্টে বৃহস্পতিবার ভোরে তাঁর মৃত্যু হল। এ বিষয়ে লিখিত ভাবে কোথাও অভিযোগ না করলেও বৃহস্পতিবার মফিজুদ্দিনের ছেলে রুবেল মণ্ডলে বলেন, ‘‘করোনা হাসপাতালে মানুষের যে ধরনের চিকিৎসা পরিষেবা পাওয়ার কথা, বাবা তা পাননি।’’
বৃহস্পতিবার জেলা তৃণমূল সভাপতি আবু তাহের খান, জেলা পরিষদের সভাধিপতি মোশারফ হোসেন মণ্ডলসহ জেলার একাধিক তৃণমূল নেতা মফিজুদ্দিনের মৃত্যুর সংবাদ পেয়ে তাঁর বাড়িতে গিয়েছিলেন। সভাধিপতি বলেন, ‘‘মফিজুদ্দিনের পরিবার থেকে আমাকে চিকিৎসায় গাফিলতির কথা জানিয়েছে। জেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যান সমিতির চেয়ারম্যান হিসেবে কী ঘটনা ঘটেছে তা স্বাস্থ্য দফতরের কাছে জানতে চাইব। এ বিষয়ে তদন্ত করে রিপোর্ট দেওয়ার কথা বলব।’’ জেলা তৃণমূল সভাপতি আবু তাহের খান বলেন, ‘‘মফিজুদ্দিনের পরিবারের লোকজন আমাকে জানিয়েছেন চিকিৎসা ঠিক মতো হয়নি, ওদের সঙ্গে দূর্ব্যবহার করা হয়েছে। এ ছাড়া ওদের বিরুদ্ধে মামলা করে দু’জনকে গ্রেফতার করেছে। মৃতের পরিবারও এ বিষয়ে অভিযোগ করবে।’’ তাহেরের দাবি, ‘‘এদিন মুখ্যমন্ত্রী ও পুরমন্ত্রী আমাকে ফোন করেছিলেন। মফিজুদ্দিনের পরিবারের সঙ্গে তাঁরা কথা বলেছেন। আমাদের সরকার তাঁদের পরিবারের সঙ্গে আছে। কেউ দোষী হলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে বলে তাঁরা জানিয়েছেন।’’
যদিও মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সুপার শর্মিলা মল্লিক গাফিলতির অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘‘৭দিন ধরে রোগে ভুগছিলেন। অবস্থা খারাপ ছিল। আমরা তাঁকে বাঁচানোর জন্য সব রকমের চেষ্টা করেছি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বাঁচানো যায়নি।’’ তিনি বলেন, ‘‘রোগীর অবস্থা খারাপ থাকায় আমার লালারস নিতে পারিনি। তবে করোনা পজ়িটিভের মৃতদেহ পরিবারকে যে নিয়ম মেনে দেওয়া হয়, সে ভাবেই দেওয়া হয়েছে।’’
মৃতের পরিবার ও প্রশাসন সূ্ত্রের খবর, গত ১০দিন ধরে তাঁর জ্বর কাশি ছিল। তখন থেকে খড়গ্রামে তিনি চিকিৎসা করাচ্ছিলেন। শরীর খুব খারাপ হওয়ায় বুধবার তাঁকে রামপুরহাটে একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে পরিস্থিতি খারাপ হওয়ায় বহরমপুরে পাঠানো হয়। বহরমপুরে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করাতে গেলে সেখান থেকে মাতৃসদনে পাঠানো হয়। মাতৃসদনে যাওয়ার পরে মফিজুদ্দিনের অনুমাগীরা কর্তব্যে গাফিলতি ও ঢিলেঢালা মনোভাবের অভিযোগ তুলে চিকিৎসকদের উপর হামলা চালায় বলে অভিযোগ।
বুধবার রাতেই বহরমপুর থানার পুলিশ মফিজুদ্দিনের চারজন পরিজনকে মাতৃসদন থেকে আটক করে। ওই রাতেই মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সুপারের অভিযোগের ভিত্তিতে সরকারি কর্মীকে কাজে বাধা, সরকারি কর্মীর কথা না শোনা, সরকারি কর্মীকে আঘাত করা, সরকারি সম্পত্তি নষ্ট করা-সহ মোট ১০টি ধারায় মফিজুদ্দিনের আত্মীয়দের বিরুদ্ধে মামলা করেছে বহরমপুর থানার পুলিশ। তবে বৃহস্পতিবার ভোরে মফিজুদ্দিনের মৃত্যু হতেই তাঁর ছেলে ও ভাইকে ছেড়ে দিলেও তাঁর গাড়ির চালক নাসিম শেখ ও পারুলিয়া অঞ্চল তৃণমূলের সভাপতি মহম্মদ রফিককে গ্রেফতার করেছে। বৃহস্পতিবার তাঁদের জেলা আদালতে তোলা হলে বিচারক ১৪ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন। পুলিশ সুপার কে শবরী রাজকুমার বলেন, ‘‘মাতৃসদনে গণ্ডগোলের ঘটনায় দু’জনকে গ্রেফতার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy