বিডিও শুভাশিস রায়ের অভিযানে গ্রেফতার সাইবার ক্যাফের মালিক জয়ন্ত মিস্ত্রি। —নিজস্ব চিত্র।
মেরেকেটে তখন রাত ৯টা বাজে। চারপাশে আলো-আঁধারি। থিকথিকে ভিড় দোকানে। কোনও ক্রমে ভিড় ঠেলে এগোলেন এক মাঝবয়সি ব্যক্তি। তাঁর পরনে পলিয়েস্টারের পাজামা আর ছেঁড়া গেঞ্জি। কাঁধে সুতির গামছা। দোকানদারের কাছে পৌঁছে ওই ব্যক্তি জানালেন, তাঁর বিড়ি শ্রমিকের কার্ড চাই। সাইবার ক্যাফের মালিকও ঘাড় নেড়ে জানিয়ে দেন, পাওয়া যাবে! এর পরেই শুরু খেজুরে আলাপ। দোকানমালিকও কথায় কথায় বলতে থাকেন, আধার কার্ড থেকে রেশন কার্ড, জন্ম-মৃত্যুর শংসাপত্র সব ধরনের সরকারি নথিই পাওয়া যায় তাঁর দোকানে। শুধু তা-ই নয়, ঠিক মতো টাকাপয়সা দিলে নাকি জেলাশাসক ও পুলিশ সুপারের সই-সিলমোহরও পাওয়া যায় জাল নথিতে!
এ কথা বলা শেষ হতেই আচমকা ‘হুঁশ’ ফেরে দোকানদারের। এত প্রশ্ন করছেন কেন গ্রাহক! সন্দেহ হতেই পালানোর তাল করছিলেন দোকানমালিক। ঠিক সময়েই ভিড়ের মধ্যে থেকে বেরিয়ে এলেন চার জন! তাঁরা দোকানদারকে বাগে আনতেই ঘাড়ের গামছা খুলে, ছেঁড়া গেঞ্জি বদলে নিজের আসল পরিচয় প্রকাশ করলেন বিডিও নদিয়ার তেহট্ট ১ ব্লকের বিডিও শুভাশিস মজুমদার। বৃহস্পতিবার রাতে তাঁর অভিযানেই ফাঁস হল জাল নথির কারবার। গ্রেফতার হয়েছেন এক সাইবার ক্যাফের মালিক জয়ন্ত মিস্ত্রি। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করে এই কারবারে জড়িত এক পার্শ্বশিক্ষকেরও হদিস মিলেছে। বিশ্বজিৎ দাস নামে সেই পার্শ্বশিক্ষককেও গ্রেফতার করা হয়েছে।
প্রশাসনিক সূত্রে খবর, অনেক দিন ধরেই জাল কারবার নিয়ে নানাবিধ অভিযোগ জমা পড়ছিল ব্লক প্রশাসনের কাছে। সেই মতো গোপন সূত্র মারফত বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করে নাজিরপুর মৃগী এলাকার একটি সাইবার ক্যাফেতে অভিযান চালানোর পরিকল্পনা করেন বিডিও। অভিযানে ছিল তেহট্ট থানার পুলিশও। ছদ্মবেশে সেখানে গিয়ে বিডিও জানতে পারেন, ওই দোকানে প্রতিবন্ধী শংসাপত্র, জাতিগত শংসাপত্র, জন্ম-মৃত্যুর শংসাপত্র, আধার ও রেশন কার্ড সবই পাওয়া যায়। তিন-চার হাজার টাকা দিলে মেলে বিড়ি শ্রমিকের পরিচয়পত্রও! এর পর সেই দোকানে তল্লাশি চালিয়ে উদ্ধার হয় প্রচুর জাল নথি, নথি তৈরির কাগজ ও বেশ কিছু সরঞ্জাম। মিলেছে নগদ ৫০ হাজার টাকাও। গ্রেফতার করা হয় সাইবার ক্যাফের মালিক জয়ন্তকে।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, জয়ন্তকে জিজ্ঞাসাবাদ করে বেতার নতুনপাড়ার বাসিন্দা বিশ্বজিতের হদিস মেলে। প্রতারণা ও জালিয়াতির অভিযোগে তাঁকেও পরে গ্রেফতার করা হয়। বিশ্বজিৎ পেশায় পার্শ্বশিক্ষক। ব্লক প্রশাসন সূত্রে খবর, তাঁর বাড়িতেও তল্লাশি চালাতে গিয়ে চক্ষু চড়কগাছ হয়েছে প্রশাসনিক কর্তাদের। সেখানে মিলেছে থরে থরে সাজানো ভুয়ো আধার, রেশন, শ্রমিক কার্ডের মতো গুরুত্বপূর্ণ নথি। ঘর জুড়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে প্রচুর স্ট্যাম্প। তার কোনওটা জেলাশাসকের নামে, আবার কোনওটা মহকুমাশাসক ও পুলিশ সুপারের নামে। ধৃত দু’জনকেই শুক্রবার আদালতে হাজির করানোর কথা পুলিশের।
তেহট্ট ১ ব্লকের বিডিও শুভাশিস বলেন, ‘‘একটি নির্দিষ্ট অভিযোগের তদন্তে নেমে বেশ কিছু তথ্য পেয়েছিলাম। যাতে কোনও ভাবেই জালিয়াতদের কাছে এই খবর না পৌঁছয়, তাই ছদ্মবেশে অভিযান চালানো হয়। গ্রেফতার করা হয়েছে। আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy