ভাঙচুর চালানো হয়েছে আসবাবপত্রে। —নিজস্ব চিত্র।
মহাকালী পাঠশালা স্কুলের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিভাগের মধ্যে ‘বিবাদ’ চরমে উঠেছে। মূলত শ্রেণিকক্ষের সমস্যাকে কেন্দ্র করেই ওই বিবাদের সূত্রপাত। রফাসূত্র বের করার উদ্দেশে বছর খানেক আগে দু’পক্ষকে নিয়ে জেলা প্রাথমিক কাউন্সিল কার্যালয়ে বৈঠকও হয়। কিন্তু সমস্যার সমাধান হয়নি। ওই বিবাদের জেরে বৃহস্পতিবার প্রাথমিক বিভাগে কোনও পঠনপাঠন হয়নি।
প্রাথমিক বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, প্রাথমিক স্তরে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা বহু গুণ বেড়েছে। ফলে শ্রেণিকক্ষের চাহিদা তৈরি হয়েছে। কিন্তু সেই তুলনায় মাধ্যমিক স্কুল কর্তৃপক্ষ তাঁদের শ্রেণিকক্ষ দেয়নি। ফলে মিড-ডে মিলের চাল থেকে বিভিন্ন প্রয়োজনীয় সামগ্রী অরক্ষিত অবস্থায় রেখে দেওয়া হয়। সেই সঙ্গে সর্বশিক্ষা মিশনের টাকায় কেনা আলমারি থেকে বিভিন্ন জিনিসপত্র ঘরের অভাবে শ্রেণিকক্ষের মধ্যে রেখে দিতে হয়। কিন্তু ওই সব জিনিসপত্র মাধ্যমিক বিভাগ কর্তৃপক্ষ গত দু’ দিন ধরে বারান্দায় বের করে দিচ্ছে। এ দিন অবশ্য সরকারি টাকায় কেনা ওই আলমারির কাচ ভেঙে বারান্দা জুড়ে পড়েছিল।
শ্রেণিকক্ষের মধ্যে আলমারি থেকে বিভিন্ন জিনিসপত্র রেখে দেওয়ায় অবশ্য শুরু থেকেই আপত্তি রয়েছে মাধ্যমিক বিভাগের। তাদের পাল্টা অভিযোগ, বেঞ্চ-টেবিল সরিয়ে প্রাথমিক বিভাগ কর্তৃপক্ষ যে শ্রেণিকক্ষের মধ্যে আলমারি-সহ অন্যান্য জিনিসপত্র রেখেছে, সেখানে পঞ্চম শ্রেণির ক্লাস চলে। ওই ক্লাসে ৭১ জন ছাত্রী রয়েছে। ফলে ছাত্রীরা ঠিক মতো বসার জায়গা পায় না। ছাত্রীদের ক্লাস করার সুবিধা করে দিতেই ওই সব জিনিস বাইরে বের করে দিতে হয়।
এই অবস্থায় স্কুল ভবনের মধ্যে থাকা প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিভাগের ওই চাপান-উতোরে পঠনপাঠনের ক্ষতি হচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৮৬২ সালে মহাকালী পাঠশালা স্কুলের প্রতিষ্ঠা। শুরুতে প্রাথমিক বিভাগ ছিল। পরে ১৯৫০ সালে মাধ্যমিক স্কুলের অনুমোদন পায়। প্রাথমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা শুচিতা গুহ রায় বলেন, “আমাদের আটটি ক্লাস ঘর রয়েছে। আগে যেখানে তিনশো থেকে সাড়ে তিনশো জন ছাত্রী ছিল, বর্তমানে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭২১ জন। চার জনের জায়গায় এখন শিক্ষক-শিক্ষিকার সংখ্যা হয়েছে সাত। ফলে শ্রেণিকক্ষের চাহিদা বেড়েছে। কিন্তু মাধ্যমিক বিভাগকে অনুরোধ জানানো সত্ত্বেও তারা বাড়তি ঘর দিতে রাজি নয়। এমনকী তাদের ক্লাস হয় না, এমন ঘরও তালাবন্দি করে রেখেছে। কিন্তু আমাদের দেয়নি।”এ দিকে গত ২০১২ সাল থেকে ওই প্রাথমিক বিভাগে চালু হয়েছে মিড-ডে মিলের রান্না। বস্তাবন্দি চাল রেখে দেওয়া নিয়েও সমস্যা রয়েছে স্কুলে।
মাধ্যমিক বিভাগের প্রধান শিক্ষিকা নন্দিনী দাশগুপ্তের অভিযোগ, শ্রেণিকক্ষের সমস্যা রয়েছে তাঁদেরও। কেননা, জায়গার অভাবে নতুন করে ভবন সম্প্রসারণ করা সম্ভব হচ্ছে না। ২২টি ক্লাসের জন্য ঘর রয়েছে ২০টি। তার মধ্যে প্রাথমিক বিভাগ যে ঘরে শিশুশ্রেণি চালায়, সেই ঘরে পঞ্চম শ্রেণির ক্লাস চলে। এখন ক্লাস ঘরের টেবিল-বেঞ্চ সরিয়ে আলমারি, বস্তাবন্দি বই রেখে দেওয়া হলে মাধ্যমিক বিভাগের ছাত্রীরা বসবে কোথায়? তাঁর যুক্তি, “সেই কারণেই ছাত্রীদের স্বার্থে জিনিসপত্র বের করে দেওয়া ছাড়া উপায় থাকে না।” মাধ্যমিক বিভাগ কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, সরকারি অনুমোদন ছাড়াই শুধুমাত্র বানিজ্যিক কারণে পাঁচ বছরের অনূর্ধ্ব ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে শিশুশ্রেণির একটি ক্লাসও চলে ওই প্রাথমিক বিভাগে, যা সম্পূর্ণ বেআইনি।
এ দিন দুই স্কুল কর্তৃপক্ষের বিবাদ চরম আকার নেয়। দু’পক্ষই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে গোটা বিষয়টি জানিয়েছে। সর্বশিক্ষা মিশনের জেলা প্রকল্প আধিকারিক তানিয়া পারভিন বলেন, “গোটা বিষয়টি দু’পক্ষের কাছ থেকে পৃথক ভাবে জেনেছি। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে দু’পক্ষকে নিয়ে বসে রফাসূত্র বের করার চেষ্টা চলছে, যাতে এই ধরণের ঘটনার কোনও পুনরাবৃত্তি না হয়।” তবে সে আশ্বাসে ভরসা পাচ্চে না কর্তৃপক্ষ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy