নবনির্মিত রবীন্দ্রভবনের উদ্বোধন করলেন মুখ্যমন্ত্রী। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য।
মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর এই প্রথম তাঁর শান্তিপুরে আসা। সভা হল স্টেডিয়ামের মাঠে। তার প্রায় এক-তৃতীয়াংশই নিয়ে নিল বিশাল আকারের মঞ্চ এবং মণ্ডপ। তবু ভরল না বাকি মাঠ। মাঠের অর্ধেকেরও বেশি অংশ জুড়ে হাজার দশেক লোকের জন্য ছাউনি তৈরি হয়েছিল। সেটা ভরে গিয়েছিল লোকের। কিন্তু তার বাইরে ছিলেন সামান্য ক’জন। মাঠের অন্তত এক-তৃতীয়াংশ ছিল খালি।
তৃণমূল নেতাদের দাবি, সভা সফল। উপচে-পড়া লোক না হলেও সব মিলিয়ে একটা পরিতৃপ্তি ছিল। সেই তৃপ্তি নিয়ে স্মৃতিচারণের ঢঙে কথা বলছিলেন শান্তিপুরের তৃণমূল বিধায়ক তথা পুরপ্রধান অজয় দে। তাঁর কথায়, “রাজ্যের কোনও মুখ্যমন্ত্রী শান্তিপুরে এসে এতবড় মাপের একটা প্রশাসনিক অনুষ্ঠান করলেন। এটা শান্তিপুরবাসী হিসেবে যথেষ্ট শ্লাঘার বিষয়।” তিনি বলেন, যানজটের জন্য অনেকে এসে পৌঁছতে পারেনি।
বাস্তবিকই যানজটের জন্য গোটা দিন ধরে নাজেহাল হয়েছেন পরীক্ষার্থী থেকে পথচারী সাধারণ মানুষ। শান্তিপুর শহরে ঢোকার মূল পথটি বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এদিন কার্যত বন্ধ করে দেয় পুলিশ। শহরের মধ্য দিয়ে জাতীয় সড়কের যে অংশ গিয়েছে তাতেও যান চলাচলে খুব কড়াকড়ি ছিল। সব মিলিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সভাকে ঘিরে পুলিশের অতি তৎপরতায় নাভিশ্বাস উঠেছে শান্তিপুরের।
এদিন শান্তিপুর কলেজে স্নাতক স্তরের পরীক্ষা ছিল। সমস্ত বাস এবং গাড়িকে শান্তিপুর শহরে ঢোকার মুখে গোবিন্দপুর বাইপাসের কাছ থেকে ঘুরিয়ে দেওয়ায় হয়। নবদ্বীপ বিদ্যাসাগর কলেজের সিট পড়েছে শান্তিপুর কলেজে। বেশির ভাগ পরীক্ষার্থীকে গোবিন্দপুর থেকে পায়ে হেঁটে বা রিকশাভ্যান করে কলেজে আসতে হয়। যদিও শান্তিপুর কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ চয়ন ভট্টাচার্য বলেন, “কারও কোনও অসুবিধা হয়নি, আমরা আগের দিন সবাইকে ট্রেনে আসতে বলেছিলাম। ফলে দশ মিনিট হেঁটেই তাঁরা কলেজে এসেছে। মুখ্যমন্ত্রী আসছেন সবাই জানে। সকলেই সতর্ক ছিল যাতে সময়ে পৌঁছোতে পারে।”
রবিপ্রণাম। ২২ শে শ্রাবণে কৃষ্ণনগরে রবীন্দ্রভবনে
মুখ্যমন্ত্রীর ছবিটি তুলেছেন সুদীপ ভট্টাচার্য।
এদিন শহরে চলেনি বাসও। এ প্রসঙ্গে জেলা বাস মালিক সমিতির কার্যকারী সমিতির সদস্য কুণাল ঘোষ বলেন, “লরিচালকের হাতে বাস কর্মী মার খাওয়ায় কৃষ্ণনগর-রানাঘাট এবং কৃষ্ণনগর কালনাঘাট ভায়া শান্তিপুর রুট বন্ধ ছিল।” মুখ্যমন্ত্রীর সভা ঘিরে মানুষের ভোগান্তি শেষ ছিল না।
যদিও বিকেলে সভা মঞ্চে কল্পতরু মুখ্যমন্ত্রীর দরাজ ঘোষণায় শান্তিপুরে স্টেডিয়াম, নবদ্বীপ-শান্তিপুর-ফুলিয়াকে নিয়ে পর্যটন সার্কিটের জন্য প্রাথমিক ভাবে দু’কোটি টাকার বরাদ্দ-সহ নানা ছোটবড় প্রাপ্তির পর এসব খুচরো ভোগান্তিকে মানুষ গুরুত্ব দেবেন না বলেই স্থানীয় তৃনমূল নেতাদের বিশ্বাস।
সত্যিই শান্তিপুর ভাবতে পারেনি। অজয়বাবুও ভাবেন নি, বিধানসভায় সেই একবার মুখ্যমন্ত্রীকে বলা বিষয়টি মনে রেখে নদিয়ার প্রশাসনিক সভা এখানে করবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফলে কার্যত সারা শহর জুড়ে ক’দিন ধরেই সাজ সাজ রব। জাতীয় সড়কের ধার থেকে অলিগলি মুড়ে ফেলা হয়েছিল পতাকা, ব্যানার, ফ্লেক্সে। বিশাল বিশাল তোরণ, প্রমাণ সাইজের ছবি দিয়ে কৃষ্ণনগর থেকে শান্তিপুরের কয়েক কিলোমিটার পথ ঢেকে দিয়েছিলেন দলীয় কর্মীরা।
মতিঝিল পর্যটক কেন্দ্র। শুক্রবার নদিয়া থেকে তা উদ্বোধন করলেন
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: গৌতম প্রামাণিক।
কথা ছিল সাড়ে তিনটেয় শুরু হবে তাঁর সভা। কিন্তু তিনি যখন মঞ্চে উঠলেন তখন সবে তিনটে দশ। ইন্দ্রনীল সেন শুরুতেই “তোমার খোলা হাওয়া লাগিয়ে পালে” গেয়ে সভার সুর বেঁধে দেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সেই সুর ধরেই শুরু করেন তাঁর ভাষণ। তার আগে রবীন্দ্র প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর ৩৫ মিনিটের বক্তৃতার বেশিটাই ছিল রাজ্য সরকারের তিন বছরের সাফল্যের খতিয়ান। সেই সঙ্গে জাতীয় সড়ক-সহ নানা প্রসঙ্গে কেন্দ্র সরকারের বিরুদ্ধে তোপ দাগা।
এর আগে মমতা শেষবার শান্তিপুর এসেছিলেন ১৯৯০ সালে। তখন তিনি রাজ্য যুব কংগ্রেসের সভানেত্রী। তখন এসেছিলেন পুরসভার ভোটের প্রচারে। সেই বারই শান্তিপুর পুরসভা বামেদের হাত ছাড়া হয়। তারপর প্রথমে কংগ্রেস এবং হালে তৃণমূলের দখলে শান্তিপুর পুরসভা। মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার প্রায় তিন বছর পর মমতা এলেন ঠিকই, প্রচারেও ত্রুটি ছিল না। কিন্তু কোথাও যেন ফাঁক রয়ে গেল। কেবল মমতার মঞ্চের সামনে মাঠের ফাঁকা অংশটাই নয় শহরজুড়ে মমতা-ম্যাজিকে কোথায় যেন ফাঁক থেকে গেল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy