রঘুনাথগঞ্জে যানজট।
পুরসভার দুই শহর রঘুনাথগঞ্জ ও জঙ্গিপুরকে ভাগ করেছে ভাগীরথী। আবার বছর ১৩ আগে ওই দুই শহরকে জুড়েও দিয়েছে ভাগীরথীর উপর গড়ে ওঠা দেড় কিলোমিটারের সেতু। রঘুনাথগঞ্জ মহকুমার সদর শহর। মহকুমার প্রায় সমস্ত সরকারি দফতর, হাসপাতাল, আদালত, ব্যাঙ্ক এমনকি জঙ্গিপুর পুরসভার ভবনটিও গড়ে উঠেছে রঘুনাথগঞ্জেই। পুরসভার কর আদায়েই হোক বা বাণিজ্য শহর হিসেবেই হোক গুরুত্বের বিচারে জঙ্গিপুরের থেকে ঢের বেশি এগিয়ে রঘুনাথগঞ্জ। কিন্তু মহকুমা সদর হলেও এ শহরে আজও গড়ে ওঠেনি কোনও কলেজ।
একসময় জঙ্গিপুর শহরেরই বাসিন্দা মুক্তিপদ চট্টোপাধ্যায় বিধানসভায় নির্বাচিত হয়ে রাজ্য মন্ত্রীসভায় স্থান পেয়েছিলেন। তাঁর চেষ্টায় ছয় দশক আগে জঙ্গিপুর শহরে গড়ে উঠেছিল জঙ্গিপুর কলেজ। রঘুনাথগঞ্জের ভরসা বলতে এখনও সেটাই। তারপর থেকে এ পর্যন্ত এমন একটি উন্নয়নের ইটও গাঁথা হয়নি রঘুনাথগঞ্জ শহরে যা এক লহমায় উদাহরণ হয়ে উঠতে পারে সকলের কাছে। রঘুনাথগঞ্জ ব্যবসায়ী সমিতির কার্য্যকরী সমিতির সদস্য রবীন্দ্রনাথ সাহার কথায়, “ রঘুনাথগঞ্জে নজরে পড়ার মত উন্নয়ন কোথায়! আশপাশে এমন কোনও শিল্প গড়ে ওঠেনি যেখানে কর্মসংস্থান হবে। মহকুমা শহর হলেও রঘুনাথগঞ্জে এখনও পর্যন্ত কোনও দমকল কেন্দ্র নেই।”
ম্যাকেঞ্জি মাঠে অসমাপ্ত স্টেডিয়াম।
রঘুনাথগঞ্জের বাসিন্দা, খোদ দাদাঠাকুরের নাতি সমীর পণ্ডিত বর্তমানে জঙ্গিপুর পুরসভার কংগ্রেসের কাউন্সিলার ও বিরোধীদলের নেতা। তিনিও মানছেন, “যতটা মানুষ আশা করেছিলেন এই শহরের উন্নয়ন সে ভাবে হয়নি। কিন্তু কিছু কাজ তো নিশ্চয় হয়েছে।” শহরের বাসিন্দাদের অভিযোগ, এখানে অনেক কিছুই হতে পারত। কিন্তু তেমন ভাবে কিছুই হল না। শহরে একটা কেন্দ্রীয় বিদ্যালয় হতে পারত। ম্যাকেঞ্জিকে স্টেডিয়াম হিসেবে গড়ে তোলা যেত। এমন আরও অনেক কিছু হতে পারত যার সুফল পেতেন শহরের মানুষ। রঘুনাথগঞ্জ শহরের কংগ্রেস কাউন্সিলার বিকাশ নন্দ বলছেন, “রঘুনাথগঞ্জে আশানুরূপ উন্নয়ন ঘটেনি।” পুরপ্রধান সিপিএমের মোজাহারুল ইসলাম বলছেন, “স্বাধীনতার পরে শহরের জনসংখ্য যে ভাবে বেড়েছে সেভাবে উন্নয়ন কিন্তু হয়নি। উন্নয়ন মানে তো শুধু রাস্তাঘাট, ব্যাঙ্ক কিংবা আয়করের অফিস খোলা নয়। শিক্ষা, কর্মসংস্থানের বিস্তার ঘটানোটাই আসল উন্নয়ন। রঘুনাথগঞ্জে তার কোনও চেষ্টাই হয়নি।” পুরপ্রধানের কথায়, “সাংসদ তহবিলে এখন ৫ কোটি টাকা হাতে পান সাংসদেরা। তাতে শহরে নতুন স্কুল বা কলেজ গড়ে তোলার কথা না হয় বাদই দিলাম, গত ১০ বছরে এই এলাকার একটি স্কুল বা কলেজকেও সংসদ তহবিল থেকে কানাকড়িও অর্থ সাহায্য দেওয়া হয়নি।”
জঙ্গিপুরের সাংসদ অভিজিৎ মুখোপাধ্যায় বলছেন, “হাসপাতাল, গঙ্গার ঘাট সংস্কার-সহ বেশ কয়েকটি প্রকল্পে সাংসদ তহবিল থেকে অর্থ বরাদ্দ হয়েছে এ বছর। ম্যাকেঞ্জি মাঠের উন্নয়নের জন্য এবার ২২ লক্ষ টাকা খরচের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। শহরের মধ্যে বহু দিনের চাহিদা একটি সুইমিং পুলের। জমি পেলে আমি সাংসদ তহবিল থেকে যত টাকা লাগবে তা দিয়ে বানিয়ে দেব সেই সুইমিং পুল।”
উন্নয়ন না হওয়ার পাশাপাশি শহরের নিজস্ব কিছু সমস্যাও রয়েছে। যানজট তাদের মধ্যে অন্যতম। ভাগীরথী সেতু থেকে রঘুনাথগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত পথচারীদের জন্য ফুটপাথ এখন পুরোপুরি হকারদের দখলে। তাছাড়া অটোর দাপাদাপি ও যেখানে সেখানে বাস দাঁড়িয়ে যাত্রী তোলার কারণে চরম যানজট এ শহরের রোজনামচা। সকাল ১০টা থেকেই দুপুর পর্যন্ত সেই যানজটে পড়ে চরম হয়রান হচ্ছেন লোকজন। অথচ সকাল সন্ধ্যে যানবাহন নিয়ন্ত্রণে মোতায়েন রয়েছে জনা ছয়েক পুলিশ ও সিভিক পুলিশের কর্মী। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, যানজট বাড়াচ্ছে মাটি ভর্তি লরি। ফুলতলার উপর দিয়ে বিভিন্ন ইটভাটার জন্য মাটি বোঝাই লরি চলছে। সঙ্গে রয়েছে যন্ত্রচালিত ভ্যন। রাস্তার দু’পাশ পাশ দখল করে দাপিয়ে চলছে হরেক রকমের ব্যবসা। এ সব কারণেই যানজট সামাল দেওয়া যাচ্ছে না। পুরপ্রধানের সাফাই, “শহরের যান নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব তো পুলিশের। কড়া নজরদারি করলেই তা বন্ধ করা যায়।”
পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবীর বলেন, “রঘুনাথগঞ্জ শহরকে যানজট মুক্ত করতে বহু পরিকল্পনা করা হয়েছে পুরসভাকে নিয়ে। ফুলতলায় সেতুর আশপাশে হকার ও অবৈধ কাঠামো অনেকটাই সরানো হয়েছে। আশা করছি দ্রুত এই সমস্যার সমাধান করা যাবে।”
ছবি: অর্কপ্রভ চট্টোপাধ্যায়
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy